⚖️ এজাহারের আইন সংগত মূল্য কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 1 week ago
- Category: সাক্ষ্য আইন
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৫৪ ধারার বিধান অনুসারে পুলিশের নিকট সর্বপ্রথম লিখিত বা মৌখিকভাবে কোনো আমলযোগ্য অপরাধের যে সংবাদ পৌছে, তাহাই এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (First information report) বলিয়া অভিহিত (PRB-243)।
এজাহারের আইন সংগত মূল্য নিম্নে উল্লেখ করা হইল।
(১) এজাহার থানায় লিপিবদ্ধ হওয়ার পরপরই আদালতে পাঠাইতে হইবে।
(২) সাক্ষ্য আইন মোতাবেক আমলযোগ্য কোনো অপরাধের সংদবাদ থাকিলেই ইহা সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণীয়। এজাহার কোনো মামলার সবচেয়ে পূর্বের রেকর্ড বলিয়া ইহা আদালতকে সমর্থন করে এবং আদালত বুঝিতে সক্ষম হন যে, শুরুর সময় এজাহারকারীর কি অভিযোগ ছিল এবং পরে কোনো অলংকরণ করা হইয়াছে কিনা। এজাহার কোনো মামলার তথ্য ভান্ডার নহে। এজাহার আইনের গতিকে পরিচালিত করে এবং সেই অনুসারে তদন্তকালে তথ্য সংগৃহীত হয়। এজাহার কখনো মৌলিক সাক্ষ্য হিসাবে আদালতে গ্রহণীয় নহে। তবে এজাহার সাক্ষ্য আইনের ১৪৫ ধারা এবং ১৫৭ ধারা মোতাবেক বাদী বা সংবাদদাতার সাক্ষ্যের সমর্থন এবং পূর্বের বক্তব্য খন্ডনের দলিলরূপে ব্যবহার হইতে পারে। এজাহার মৌলিক সাক্ষ্যরূপে ব্যবহার না হইলেও ইহার আইনী গুরুত্ব অপরিসীম। ইহা সংশ্লিষ্ট অপরাধের আদি দলিল। ধরিয়া লওয়া যায় যে, এজাহারে নতুনভাবে কোনো কিছু সাজানো হয় নাই। ইহা পুলিশকে সক্রিয় করে। এজাহারকারী প্রত্যক্ষদর্শী হইলে এজাহার একটি মূল্যবান দলিল।
এজাহার বর্ণিত বিষয়গুলি কেবলমাত্র সংবাদদাতাকে সমর্থনের উদ্দেশ্যে ব্যবহূত হইবে এবং কোনো ঘটনাকে অস্বীকার করার জন্য নহে। ইহা এমন প্রমাণ করিবে না যে, ঘটনার জন্য দায়েরকৃত অভিযোগসমূহ সঠিক ( 28 DLR 59)।
(৩) এজাহার, সংবাদদাতা তথা মামলার বাদী কর্তৃক দাখিল করা হইলেও বাদীপক্ষের পাশাপাশি আসামীপক্ষও ইহা ব্যবহারের সুযোগ পাইতে পারে। এজাহার কোনো স্বতন্ত্র সাক্ষ্য নহে। ইহা নিজে কোনো অভিযোগ প্রনাণ করিতে পারে না। সংবাদদাতার বিবৃতিকে সমর্থন করার জন্য এবং আসামীপক্ষ কর্তৃক এজাহারের বিবৃতির অসংগতি চিহ্নিত করার জন্য এজাহার ব্যবহূত হইতে পারে ( সাক্ষ্য আইনের ১৪৫/১৫৭ ধারা)। এই কারণে শুধুমাত্র এজাহারের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দন্ড প্রদান করা যায় না।
(৪) এজাহারকারী যদি এজাহার দায়ের করার পর মারা যান, তাহা হইলে এজাহার স্বতন্ত্র সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য এবং উহাকে মৃত্যুকালীন ঘোষণা হিসাবে গ্রহণ করা যায়। এজাহারকারী যদি নিখোজ হন বা মারা গিয়া থাকেন তবে সেই মর্মে কোর্টকে নিশ্চিত হইতে হয়। বিষয়টি আদালতে আসিবার পূর্বেই যদি এজাহারকারী মারা যান, তাহা হইলে উক্ত এজাহার সাক্ষ্য আইনের ৩২(১) ধারামতে আদালতে গ্রহণযোগ্য। কেননা ইহা মৃত ব্যক্তির বিবৃতি এবং ইহা প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের মূল্যবান সমর্থন হিসাবে কাজ করে।
এজাহার হারাইয়া গেলে থানায় বা পুলিশ অফিসে থাকা এজাহারের কার্বনকপি কোনো গেজেটেড অফিসার কর্তৃক প্রতিটি পৃষ্ঠা সত্যায়িত করাইয়া নামের সীলসহ কোর্টে যথানিয়মে প্রেরণ করিলে উহা মূল এজাহারের স্থলাভিষিক্ত হইতে পারে এবং মামলার নথিভুক্ত হইয়া কার্যক্রম চলিতে পারে। মামলা রেকর্ডকারী পুলিশ অফিসার বা তদন্তকারী অফিসার বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই এজাহারটি বিচারকালে আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করিয়া প্রমাণ করিতে পারিবেন (14 DLR 392, 6 DLR 588)। সাক্ষ্য আইনের ৭৬ ধারা মোতাবেক সরকারী অফিসের কোনো বিভাগের কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত ঐ বিভাগের রক্ষিত নকলের নকলও মূল দলিল প্রমাণে গ্রহণযোগ্য (7 Moo Ind, App-128)। সুতরাং ইহা বলা যায় যে, মূল এজাহার হারাইয়া গেলে উহার কার্বনকপি যথানিয়মে সত্যায়িত করিয়া দাখিল করিলে প্রমাণে গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া মূল দলিলের কার্বনকপিকেও আদি দলিল হিসাবে ধরা যায় (176 Ind-328)।