⚖️ ধর্ষণ মামলা তদন্তের নিয়ম কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 17 hours ago
  • Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ ধারা মোতাবেক যদি কোনো পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১৬ বৎসরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সহিত তার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে অথবা ১৬ বৎসরের কম বয়ষের কোনো নারী বা শিশুর সহিত তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করে, তাহলে তিনি উক্ত নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেছে বলে গণ্য হবে। 

 

ধর্ষণ মামলা তদন্তকালে তদন্তকারী অফিসার নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করবেন। 

(১) ধর্ষিতা যদি নিজেই থানায় হাজির হয়ে তার ধর্ষণের বিবরণ দিয়ে এজাহার দায়ের করে তাহলে একজন নারী পুলিশ দ্বারা কিভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে, ধর্ষণকারী দ্বারা ধর্ষিতার শরীরের কোনো স্থানে কোনো জখম আছে কিনা, ধর্ষিতার পরিধেয় বস্ত্রে বীর্যপাতের কোনো দাগ আছে কিনা ইত্যাদি জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে এবং পরিধেয় বস্ত্রে বীর্যপাতের দাগ থাকলে তা আলামত হিসেবে জব্দ করতে হবে এবং আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকার ডিএনএ ল্যাবের মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষা করায়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। যদি এজাহারকারী অন্য ব্যক্তি হয় তাহলেও তদন্তকারী অফিসার উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলি অনুসরণ করবেন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ২২ ধারা মোতাবেক ভিকটিমের জবানবন্দী ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক রেকর্ড করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ভিকটিম গর্ভবতী হলে গর্ভের সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে।  ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ২২ ধারার জবানবন্দী রেকর্ড করার প্রয়োজন হবেনা।

(২) যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ধর্ষিতাকে ডাক্তারী পরীক্ষা করে ধর্ষণ এবং বয়স নির্ধারণ সংক্রান্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। 

(৩) তদন্তকারী অফিসার দ্রুত মামলার ঘটনাস্থল বা অপরাধস্থল পরিদর্শন করবেন এবং ঘটনাস্থলে কোনো আলামত যেমন-ধস্তাধস্তির চিহ্ন, রক্তের দাগ, কাপড়-চোপড়, গহনাপত্র, ভূমিতে ভিকটিমের দেহের ছাপ ইত্যাদি জব্দ করবেন এবং সতর্কতার সহিত সংরক্ষণ করবেন। প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা করাবেন। 

(৪) এজাহারনামীয় অভিযুক্ত আসামীকে দ্রুত গ্রেফতার করে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। আসামীর পরিধেয় বস্ত্রে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া গেলে তা জব্দ করতে হবে। প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে। আসামী নিজের অপরাধ স্বীকার করলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক আসামীর জবানবন্দী রেকর্ড করতে হবে।

(৫) ঘটনাস্থল বা অপরাধস্থল পরিদর্শন করে খসড়া মানচিত্র সূচীপত্রে সহ পৃথক কাগজে প্রস্তুত করতে হবে। 

(৬) প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা মোতাবেক সাক্ষীর জবানবন্দী রেকর্ড করতে হবে। প্রয়োজনে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক সাক্ষীর জবানবন্দী রেকর্ড করাতে হবে। 

(৭) মামলার তদন্ত সংক্রান্তে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহিত আলোচনা করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামত সাপেক্ষে ফৌজদারী কার্জবিধির ১৭৩ ধারা মোতাবেক আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। 


দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী ভিকটিমের বয়স যদি ১৩ বছরের কম হয় এবং ভিকটিক যদি তার স্বামী কর্তৃক ধর্ষিত হয় তাহলে স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ মামলা রুজু করা যাবে। তবে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬১(২) ধারা মোতাবেক কমপক্ষে একজন পুলিশ পরিদর্শক কর্তৃক মামলাটি তদন্ত করতে হবে।  
Google News Google News
Google News এ বিরাট বাজারের সকল পোস্ট পেতে ক্লিক করে ফিডটি ফলো করুন