⚖️ মামলার রায় হওয়ার পর আপীলের পদ্ধিত কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 1 month ago
  • Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
আপীল শব্দের অর্থ হলো কোনো মামলার রায় যুক্তিযুক্ত হয়েছে কিনা তা নির্ণয়ের জন্য নিম্ন আদালত হতে মামলাটি উচ্চতর আদালতে স্থানান্তর করা। 

 

শান্তিরক্ষার বা সদাচরণের মুচলেকার আদেশের বিরুদ্ধে আপীলঃ 

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, ম্যাজিষ্ট্রেট যে ব্যক্তিকে ফৌজদারী কার্যবিধির ১১৮ ধারা অনুসারে শান্তিরক্ষার বা সদাচরণের জন্য মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ প্রদান করেছেন সে ব্যক্তি উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আপীল করতে পারবেন, তবে সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আপীল শুনানীর জন্য দায়রা আদালতের পরিবর্তে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বা ক্ষেত্রমতে চীপ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেটকে ক্ষমতা প্রদান করতে পারেন। 

 

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীলঃ 

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৭ ধারায় উল্লেখ আছে যে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক দন্ডিত কোনো ব্যাক্তি অথবা দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ৩৪৯ ধারা অনুসারে দন্ডিত কোনো ব্যক্তি বা ৩৮০ ধারা অনুসারে কোনো আদেশ বা দন্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যাক্তি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট আপীল করতে পারবেন। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট নির্দেশ দিতে পারবেন যে, এ ধারা অনুসারে কোনো আপীল বা এ শ্রেণীর আপীল সমূহ তার অধীনস্থ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট যিনি এরূপ আপীল শ্রবনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত, তিনি শ্রবন করবেন এবং অতঃপর এরূপ আপীল বা আপীল সমূহ উক্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট পেশ করা যাবে অথবা পূর্বেই জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট পেশ করা হয়ে থাকলে উক্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট হস্তান্তর করা যাবে। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট উক্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট হতে উক্তরূপ পেশকৃত বা হস্তান্তরিত আপীল সমূহ প্রত্যাহার করে নিতে পারবেন। 

 

সহকারী দায়রা জজ এবং প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীলঃ   

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৮ ধারায় উল্লেখ আছে যে, সহকারী দায়রা জজ, মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট, জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বা প্রথম শেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক দন্ডিত ব্যক্তি অথবা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ৩৪৯ ধারা অনুযায়ী দন্ডিত বা ৩৮০ ধারা অনুসারে আদেশ বা দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি দায়রা আদালতে আপীল করতে পারবেন। তবে সহকারী দায়রা জজ যখন পাঁচ বৎসরের অধিক কারাদন্ড বা দীপান্তরের আদেশ দেন তখন তাকে হাইকোর্টে আপীল করতে হবে। একইভাবে যখন কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট কোনো ব্যক্তিকে দন্ডবিধির ১২৪ (ক) ধারার অপরাধে দন্ডিত করেন তখন তাকে হাইকোর্টে আপীল করতে হবে। 

 

দায়রা আদালতে পেশকৃত আপীল কে শ্রেবণ করবেনঃ 

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৯ ধারা অনুসারে দায়রা আদালত বা দায়রা জজের নিকট পেশকৃত আপীল দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ শ্রবণ করবেন। তবে অতিরিক্ত দায়রা জজ কেবল সে সকল আপীলই শ্রবণ করবেন যেগুলি সম্পর্কে সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা নির্দেশ দেন অথবা দায়রা জজ যেগুলো তার নিকট অর্পণ করেন। 

 

দায়রা আদালতের দন্ডের বিরুদ্ধে আপীলঃ 

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১০ ধারায় বর্ণিত আছে যে, দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ কর্তৃক দন্ডিত ব্যক্তি হাইকোর্টে আপীল করবেন। 

 

যেক্ষেত্রে আপীল করা যাবে নাঃ 

নিম্নে বর্ণিত কতিপয় ক্ষেত্রে আপীল করা যাবে না। 

(ক) কোনো আসামীর দোষ স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে দায়রা জজ বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট বা কোনো প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে দন্ডিত করলে দন্ডের পরিমাণ বা আইনগত যৌক্তিকতা ব্যতীত উক্ত দন্ডের বিরুদ্ধে কোনো আপীল চলবে না (ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১২ ধারা)।  

(খ) দায়রা আদালত অনধিক একমাস কারাদন্ড প্রদান করলে অথবা দায়রা আদালত বা চীপ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বা  মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট বা প্রথম শ্রেণীর অন্য কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট অনধিক পঞ্চাশ টাকা জরিমানা করলে দন্ডিত ব্যক্তি কোনো আপীল করতে পারবেন না (ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৩ ধারা)   

(গ) যখন কোনো আদালত বা ম্যাজিষ্ট্রেট শাস্তিস্বরূপ কারাদন্ড না দিয়ে জরিমানা অনাদায়ে কারাদন্ডের আদেশ দিলে এরূপ কারাদন্ডের বিরুদ্ধে আপীল চলবে না (ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৩ ধারা এর ব্যাখ্যা) 

(ঘ) যখন কোন ম্যাজিষ্ট্রেট সংক্ষিপ্তভাবে বিচারকৃত কোনো মোকদ্দমায় কোনো ব্যক্তিকে অনধিক দুইশ টাকা জরিমানা করেন তখন দন্ডিত ব্যক্তি কোনো আপীল করতে পারবে না (ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৪ ধারা)। 

কোনো মামলায় একাধিক অপরাধের জন্য দন্ডাদেশ দেয়া হতে পারে। দন্ডাদেশ সমূহ যদি জরিমানা দন্ড হয় এবং জরিমানার অর্থের যোগফল যদি ৫০ টাকার অধিক হয় তবে আপীল চলবে অন্যথায় না। 

 

খালাসের বিরুদ্ধে আপীলঃ  

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭ ধারায় খালাসের বিরুদ্ধে আপীলের কথা বলা হয়েছে। দায়রা আদালত কর্তৃক মূল বা আপীলে খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক মুল বা আপীলে খালাসের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আপীল করার জন্য সরকার সরকারী কৌশুলীকে নির্দেশ প্রদান করতে পারেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭ এর ১(ক)(খ) ধারা)। 

খলাসের আদেশ যদি ফরিয়াদী কর্তৃক আনীত মামলায় প্রদত্ত হয়ে থাকে তবে ফরিয়াদী-

(ক) দায়রা আদালত কর্তৃক খালাসের মূল আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে,

(খ) কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত কর্তৃক খালাসের মূল আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আপীল দায়ের করতে পারবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭ (২) ধারা)। 

 

অপর্যাপ্ত দন্ডের বিরুদ্ধে আপীলঃ 

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭-ক ধারায় অপর্যাপ্ত দন্ডের বিরুদ্ধে আপীলের কথা বলা হয়েছে।  

(১) কোনো আদালতের বিচারে প্রদত্ত দন্ডাদেশের ক্ষেত্রে দন্ডের অপর্যাপ্ততা হেতুতে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করার জন্য সরকার সরকারী কৌশুলীকে নির্দেশ দিতে পারবেন। 

(২) কোনো আদালতের বিচারে প্রদত্ত দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে ফরিয়াদী দন্ডের অপর্যপ্ততার কারণে আপীল দায়ের করতে পারবেন দন্ডাদেশের তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে। 


উপরোক্ত বর্ণনা হতে প্রাপ্ত কোন কোন আদালতের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে কোন কোন আদালতে আপীল করা যাবে তা নীচের ছকে দেখানো হলোঃ    

দন্ড প্রদানকারী আদালত আপীল শ্রবনকারী আদালত
১। তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট
২। দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট
জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট
৩। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট
৪। সহকারী দায়রা জজ
৫। মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট (চীপ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট সহ)
৬। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট
৭। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট
দায়রা জজ আদালত
৮। সহকারী দায়রা জজ কর্তৃক পাঁচ বৎসরের অধিক কারাদন্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদানের ক্ষেত্রে
৯। ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক দন্ডবিধির ১২৪-ক ধারায় দন্ড প্রদানের ক্ষেত্রে
১০। অতিরিক্ত দায়রা জজ
১১। দায়রা জজ
১২। যে কোনো আদালতের অপর্যাপ্ত দন্ডের আদেশের ক্ষেত্রে
হাইকোর্ট বিভাগ
১৩। নালিশী মামলায় অপর্যাপ্ত দন্ডের আদেশের ক্ষেত্রে
সংশ্লিষ্ট আপীল আদালত

আপীল করার সময়সীমাঃ 

(১) দায়রা আদালত কর্তৃক অথবা মূল ফৌজদারী এখতিয়ার প্রয়োগকালে হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত মৃত্যু দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে দন্ডাদেশের তারিখ হতে ৭ দিনের মধ্যে আপীল করতে হবে (তামাদি আইন ১৯০৮, প্রথম তফসিল এর ১৫০ অনুচ্ছেদ)। 

 (২) ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে হাইকোর্ট ভিন্ন অন্য যে কোনো আদালত দন্ডাদেশ বা আদেশের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে আপীল করতে হবে (তামাদি আইন ১৯০৮, প্রথম তফসিল ১৫৪ অনুচ্ছেদ)।   

(৩) মৃত্যু দন্ডাদেশ ব্যতীত অন্যান্য দন্ডাদেশ বা আদেশের বিরুদ্ধে দন্ডাদেশ বা আদেশের তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপীল করতে হবে (তামাদি আইন ১৯০৮, প্রথম তফসিল ১৫৫ অনুচ্ছেদ)।   

(৪) খালাসের আদেশ হওয়ার তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে ফরিয়াদী কর্তৃক ক্ষেত্রমতে হাইকোর্টে বা দায়রা আদালতে আপীল দায়ের করতে হবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭(৩) ধারা)।  

(৫) অপর্যাপ্ত দন্ডাদেশের ক্ষেত্রে কোনো ফরিয়াদী দন্ডাদেশের তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে আপীল আদালতে আপীল করতে পারবেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭ক(২) ধারা)।  


আপীল নিস্পত্তির সময়সীমাঃ 

আপীল আদালত বেসপন্ডেন্ট এর প্রতি নোটিশ জারীর পর হতে ৯০ কর্ম দিবসের মধ্যে আপীল নিস্পত্তি করবেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৪২ ক (১) (৩) ধারা)।  


আপীল দায়ের পদ্ধতিঃ 

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক আপীল আবেদন লিখিত আকারে হতে হবে এবং আপীলকারী বা তার নিয়োজিত কৌশুলীর মাধ্যমে দায়ের করতে হবে এবং আবেদন পত্রের সাথে যে রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা হচ্ছে তার একটি নকল দিতে হবে।  আপীলকারী যদি কারাগারে থাকে তবে রায়ের কপিসহ তার আবেদনপত্রটি কারাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট জমা দিবেন এবং উক্ত কর্মকর্তা আপীলকারীর টিপসই/দস্তখত ইত্যাদি নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে প্রেরণ করবেন (ফৌজদারী কার্যবিধি ৪২০ ধারা)।  

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৯ বা ৪২০ ধারা অনুসারে রায়ের নকলসহ আবেদনপত্র পাওয়ার পর আপীল আদালত উহা বিবেচনা করবেন এবং যদি মনে করেন যে, হস্তক্ষেপের মতো যথেষ্ট কারণ নেই তাহলে সরাসরি আপীল খারিজ করতে পারবেন, তবে আপীলকারী বা তার নিয়োজিত কৌশুলীকে তার বক্তব্য পেশের সুযোগ না দিয়ে আপীল খারিজ করবেন না। আপীল খারিজ করার পূর্বে আদালত মামলার নথি তলব করতে পারবেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ৪২১ ধারা)।  

আপীল আদালত যদি সরাসরি আপীল খারিজ না করেন তাহলে আপীল শুনানীর তারিখ, সময় ও স্থান উল্লেখ পূর্বক আপীলকারী বা তার নিয়োজিত কৌশুলীকে, মামলার বাদী বা সরকারপক্ষকে নোটিশ প্রদান করবেন এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭ ধারা অনুসারে আপীলের ক্ষেত্রে আদালত আসামীকে অনুরূপ নোটিশ প্রদান করবেন (ফৌজদারী কার্যবিধি ৪২২ ধারা)।  


আপীল নিস্পত্তির ব্যাপারে আপীল আদালতের ক্ষমতাঃ  

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪২৩ ধারায় আপীল নিস্পত্তির ব্যাপারে আপীল আদালতের ক্ষমতা সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। 

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪২৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে যে, মামলার নথিপত্র আপীল আদালতে না থাকলে আপীল আদালত উহা তলব করবেন। অতঃপর নথিপত্র পরীক্ষা করে এবং উভয় পক্ষকে শ্রবণ (যদি উপস্থিত থাকেন) করে আদালত যদি মনে করেন যে, নিম্ন আদালতের রায় বা আদেশ হস্তক্ষেপ করার মতো পর্যপ্ত কারণ নেই তাহলে আপীল খারিজ করে দিবেন, অন্যথায় নিম্ন বর্ণিত আদেশ প্রদান করবেন।  

(ক) খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে আপীলের ক্ষেত্রে খালাসের আদেশ পরিবর্তন করে আরও তদন্তের নির্দেশ দিতে পারবেন বা আসামীকে পুনঃ বিচারের জন্য পাঠাতে পারবেন অথবা তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আইনানুযায়ী দন্ড প্রদান করতে পারবেন।  

(খ) দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীলের ক্ষেত্রে-  

(১) সিদ্ধান্ত বা দন্ড রদ করতে পারবেন এবং আসামীকে খালাস দিতে পারবেন বা অধঃস্তন কোনো আদালতে পুনঃ বিচারের জন্য পাঠাতে পারবেন,  

(২) দন্ড বহাল রেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবেন অথবা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বা না করে দন্ডহ্রাস করতে পারবেন অথবা  

(৩) দন্ডের প্রকৃতি পরিবর্তন করতে পারবেন।  

(গ) দন্ড বৃদ্ধির জন্য আপীলের ক্ষেত্রে-  

(১) সিদ্ধান্ত ও দন্ড রদ করতে এবং আসামীকে খালাস বা অব্যাহতি দিতে অথবা যথাযোগ্য আদালতে তার পুনঃ বিচারের আদেশ দিতে পারবেন,  

(২) সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দন্ড বহাল রাখতে পারবেন অথবা  

(৩) দন্ডের প্রকৃতি ও পরিমাণ পরিবর্তন করতে পারবেন (দন্ড হ্রাস বা বৃদ্ধি)।  

(ঘ) অন্য কোনো প্রকার আদেশের বিরুদ্ধে আপীলের ক্ষেত্রে উক্ত আদেশ পরিবর্তন বা কোনো বিপরীত আদেশ প্রদান করতে পারবেন।  

(ঙ) ন্যায়সংগত বা যথাযথ কোনো সংশোধন করতে পারবেন বা কোনো প্রাসঙ্গিক আদেশ প্রদান করতে পারবেন।  

এখানে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন যে, দন্ডবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবশ্যই আসামীকে কারণ দর্শানোর সূযোগ দিতে হবে।  

 

আপীল আদালত কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ দন্ডের পরিমাণঃ  

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪২৩ ধারার শেষাংশে আপীল আদালত সর্বোচ্চ কি পরিমাণ দন্ড প্রদান করতে পারেন তার উল্লেখ আছে। যে দন্ড বা আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা হয় সে দন্ড বা আদেশ প্রদানকারী আদালত একই অপরাধের জন্য আসামীকে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ দন্ড দিতে পারতেন আপীল আদালত তদপেক্ষা অধিক দন্ড প্রদান করতে পারবেন না। অর্থাৎ কোনো প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালত কোনো আসামীকে দন্ডবিধির ৩২৫ ধারার অপরাধের জন্য ৩ (তিন) বৎসরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করলে আপীলকারী আদালত উক্ত অপরাধের জন্য আসামীকে ৫ (পাঁচ) বৎসরের বেশী কারাদন্ড প্রদান করতে পারবেন না, কারণ প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের সর্বোচ্চ ক্ষমতা হচ্ছে ৫ বৎসর কারাদন্ড প্রদান। যদিও দন্ডবিধির ৩২৫ ধারায় অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বৎসর কিন্তু কোনো প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট উক্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ বৎসর কারাদন্ড প্রদান করতে পারবেন। তাই আপীল আদালতও উক্ত অপরাধের শাস্তির আপীলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বৎসর কারাদন্ড প্রদান করতে পারবেন। 

 

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক আপীল আবেদন লিখিত আকারে হতে হবে এবং আপীলকারী বা তার নিয়োজিত কৌশুলীর মাধ্যমে দায়ের করতে হবে। 

 

অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে আপীল আদালতের ক্ষমতাঃ  

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪২৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, আপীল আদালত অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করতে অথবা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারেন-

(১) কোনো আপীল বিবেচনার সময় আপীল আদালত যদি অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করেন তাহলে তার কারণ লিপিবদ্ধ করবেন এবং নিজেই এ সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারবেন অথবা কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক উহা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবেন। আপীল আদালত হাইকোর্ট বিভাগ হলে কোনো দায়রা আদালত বা কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক উহা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবেন। 

(২) দায়রা আদালত বা ম্যাজিষ্ট্রেট অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করে তা আপীল আদালতে প্রেরণ করবেন এবং উহার ভিত্তিতে আপীল আদালত আপীল নিস্পত্তির কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। 

(৩) অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আসামী বা তার কৌশুলী উপস্থিত থাকবেন। 

 

আপীল সম্পর্কিত উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত সমূহঃ 

(১) আসামীকে এক অপরাধের জন্য শাস্তি প্রদান করা হলে আপীল আদালত অন্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি প্রদান করতে পারেন (৭ বিএলডি ৩৬৬)।

(২) আপীলকারী যদি জেলে থাকে এবং তার কোনো আইনজীবি প্রতিনিধিত্ব না করে তাহলে তাকে অবশ্যই নোটিশ প্রদান করতে হবে (২৯ সিআরএলজে ৩৮৪)।

(৩) আপীলকারী অথবা তার আইনজীবির বক্তব্য শ্রবণ না করে আপীল খারিজ করা হলে বে-আইনী হবে (পিএলডি ১৯৬০ করাচী ৫৫০)। 

(৪) ফৌজদারী কার্যবিধির বিধান অনুসারে কোনো শ্রম আদালত গঠিত হয় না। সুতরাং শ্রমিক নিয়োগ আইনের ২৬ ধারার বিধান মতে প্রদত্ত কোনো আদেশের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধিতে বর্ণিত আপীলকারী কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো আপীল বা রিভিশন দায়ের করা যায় না (৪১ ডিএলআর ২৫৭)।

(৫) বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩০ (১) ধারার বিধান অনুসারে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইনে আপীলের বিধান থাকায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত খালাসের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭ (২) ধারার বিধানমতে দায়েরকৃত আপীল গ্রহণযোগ্য নহে (৪০ ডিএলআর ৩৪৬)। 

(৬) সিদ্ধান্তের জন্য যুক্তি না দেখিয়ে আপীল নিস্পত্তি করলে উহা সঠিকভাবে নিস্পত্তি হবে না (১০ ডিএলআর ৩৭২)। 

(৭) বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ পরিবর্তন করে আপীল আদালত সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করলে তা শাস্তি বৃদ্ধির শামীল (৬ বিএলডি ১৬১)। 

(৮) আপীল আদালত পুনঃ বিচারের আদেশ প্রদান করলে অন্যান্য আসামীদের বিচারও নতুনভাবে করতে হবে (এআইআর ১৯৬৩ এসসি ৬৩)।

(৯) রেকর্ড তলব না করে সরাসরি আপীল খারিজ করা সঠিক নহে (৬ ডিএলআর ৩৯ এফসি)। 

(১০) মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আসামী পলায়ন করলে হাইকোর্টের নিকট হতে প্রাপ্ত অধিকার হারায় এবং তার অনুপস্থিতিতেই মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদন করা যায় (২১ ডিএলআর ১০৯ এসসি)।  

(১১) কোনো নির্দিষ্ট অফিসার তদন্ত পরিচালনা করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে দন্ডাদেশ, খালাসের আদেশ এর উপর নির্ভর করে না। বিচারের সময় আসামীর বিরুদ্ধে দেয়া সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে মামলার বিচার করতে হবে। যে অফিসার সাক্ষ্য সংগ্রহ করছিলেন তিনি আইনের দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন কিনা এ প্রশ্নের গুরুত্ব সামান্যই এবং প্রকৃতপক্ষে বিচারের ফল এতে প্রভাবিত হয় না। অতএব, এ বিচার নষ্ট হয়নি (পিএলডি ১৯৫৬ লাহোর ৮৭)।  

Google News Google News
Google News এ বিরাট বাজারের সকল পোস্ট পেতে ক্লিক করে ফিডটি ফলো করুন