⚖️ জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে আসামীর আইনগত অধিকার কি কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 1 week ago
- Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
-
বাংলাদেশ সংবিধান মোতাবেক আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান (অনুচ্ছেদ ২৭)। সকলেরই আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার রয়েছে (অনুচ্ছেদ ৩১)। ব্যক্তি স্বাধীনতা হতে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না (অনুচ্ছেদ ৩২)। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের কারণ জানাতে হবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ৮০ ধারা) এবং অনাবশ্যক বিলম্ব ছাড়াই গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিষ্ট্রেটের সম্মুখে হাজির করতে হবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ৮১ ধারা)। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। গ্রেফতারকৃত কোনো ব্যাক্তির জামিনের বিষয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৯ নং অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন-
(১) ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৬ ধারার বিধান মোতাবেক জামিনযোগ্য অপরাধে কোনো ব্যক্তি গ্রেফতার হলে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর হেফাজতে থাকাকালে বা আদালতে উপস্থিত করা হলে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি জামানত দিতে প্রস্তুত থাকলে, সে ব্যক্তির জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে জামিননামা দাখিল করতে হবে এবং প্রয়োজনে আদালতের নির্দেশমতে আদালতে হাজির হবে মর্মে মুচলেকা সম্পাদন করতে হবে। একজন জামিনদার হবেন। জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির জামিন পাওয়া একটি অপ্রতিরোধ্য অধিকার (১৫ ডিএলআর ৪২৯ এসসি)। জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে জামানত ব্যতীত অন্য কোনো শর্ত আরোপ করা যাবে না।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৬ ধারা মোতাবেক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারকৃত জামিনযোগ্য অপরাধের আসামীকে জামিন-মুচলেকা গ্রহণ পূর্বক জামিন প্রদান করে আদালতকে জানাতে পারেন। তবে জামিননামা এবং মুচলেকা প্রদান করা না হলে আসামীকে জামিনে মুক্তি দেয়া যাবে না। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উপযুক্ত মনে করলে জামিনদার ব্যতীত আসামীর ব্যক্তিগত মুচলেকার ভিত্তিতেও মুক্তি দিতে পারেন।
(২) ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৭ ধারায় জামিনের অযোগ্য অপরাধেও অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোনো অপরাধে দোষী বলে মনে হলে জামিনে মুক্তি পাবে না। কিন্তু আদালতে ১৬ বৎসর বয়সের কম বয়স্ক বা স্ত্রীলোক বা পীড়িত বা অক্ষম ব্যক্তি জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাছাড়া আরও ইনকোয়ারী বা তদন্তের প্রয়োজন থাকলে আদলত জামিন বিবেচনা করতে পারেন। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এক্ষেত্রে জামিন প্রদান করতে পারেন। তবে যথাযথ কারণ লিপিবদ্ধ করতে হবে।
অনুসন্ধান ও বিচারের পর্যায়ে যদি আদালত দেখেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন অযোগ্য অভিযোগে সংশ্লিষ্ট আছে বলে যুক্তিসংগত কারণ নাই, তবে আদালত তার বিবেচনামতে জামিন প্রদান করতে পারেন। রায় প্রদানের পূর্বেও আদালত জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।
তবে জামিনের অযোগ্য অপরাধের অভিযুক্ত আসামী অধিকার হিসাবে জামিন পেতে পারে না যদি-
(১) আসামীর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ সত্য বলে মনে হয়।
(২) আসামী জামিন পেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যায়।
(৩) আসামী যদি সাক্ষীকে ভয়-ভীতি দেখাবে এবং সাক্ষ্য নষ্ট করতে পারে বলে আশংকা থাকে।
(৪) আসামীর বিরুদ্ধে যদি জঘন্য অপরাধের এবং গণধিকার লংঘনের অভিযোগ থাকে।
(৫) আসামী অভ্যাসগতভাবে একজন অপরাধী হলে।
(৬) আসামীর আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ থাকলে।
(৭) আসামীর পরিবার পরিজন অনাহারের সম্মুখীন না হলে।
(৮) আসামীর বয়স ও স্বাস্থ্য বিবেচনায় না আসলে এবং স্ত্রীলোক না হলে।
জামিন মঞ্জুর করা স্বেচ্ছা অধিকারমূলক হলেও জামিন মঞ্জুর করার নীতি নিরপেক্ষভাবে হওয়া উচিৎ (৩৫ ডিএলআর ২৭৯ এসসি, ৩ বিসিআর ১৭০ এসসি)।
দীর্ঘস্থায়ী কোনো অসুস্থতার ক্ষেত্রে আসামীর জামিন পূনঃবহাল থাকার অধিকার রয়েছে।
জামিন মঞ্জুর করা নিয়ম এবং তা অস্বীকার করা ব্যতীক্রম হিসাবে গণ্য (১৯৮৪ পিসিআর, ১৪৯ এলজে)।
জখম মারাত্মক না থাকলে এবং পক্ষগণ আপোষ মীমাংসায় উপনীত হলে আসামী জামিন পাওয়ার অধিকারী (১৯৮২ পিসিআর, ৫৭৯ এলজে)।
অভিযোগে সন্দেহের কিছু থাকলে আসামীর জামিন পাওয়ার অধিকার আছে। এজাহার দাখিলে বিলম্ব হলে আসামী জামিন পাওয়ার অধিকারী। মেডিক্যাল সাক্ষ্য এবং সাক্ষীর সাক্ষ্য বিরোধিতা থাকলে আসামী জামিন পাওয়ার অধিকারী হবে।
শিশু আইন ২০১৩ এর ৪৭(২)(ক) ধারা মোতাবেক থানার শিশু বিষয়ক পুলিশ অফিসার ১৮ বৎসর বয়সের নীচের কোনো শিশুকে জামিন মুচলেকায় মুক্তি দিতে পারেন।