⚖️ কমিউনিটি পুলিশিং কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 1 week ago
  • Category: অপরাধ বিজ্ঞান
কমিউনিটি পুলিশিংঃ “পুলিশেই জনতা এবং জনতাই পুলিশ”। পুলিশের মূখ্য কাজই হইল-দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। অর্থাৎ দুষ্ট লোকদের দমন করিয়া সমাজে শান্তি ও শৃংখলা বজায় রাখা। তবে এই দূরহ কাজটি পুলিশের একার পক্ষে সার্থকভাবে সব সময় করা সম্ভব হয় না। তাই জনগনের সহায়তা নিতে হয়। সমাজ বিজ্ঞানীরাও বলিয়া থাকেন- সমাজের বাসিন্দাদের জন্যই পুলিশ কাজ করিয়া থাকে, সমাজের বাসিন্দারাই যখন অপরাধ দমনে সম্পৃক্ত হইবে, তখনি পুলিশের পক্ষে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন সম্ভব হইবে। জনগনের সম্পৃক্ততার জন্যই সর্বপ্রথমে জাপানে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার উদ্ভব হয়। রবার্ট টি প্রিডম্যান উহা সমর্থন করেন। শহরে, বন্দরে, মহানগরে বসবাসরত বিভিন্ন গোষ্ঠী, বর্ণ, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের লোকজনের আস্থা অর্জন করিয়া তাদেরকে পুলিশি কার্যক্রমে সহায়তাকারী শক্তি হিসাবে গণ্য করিতে হইবে। একটি নির্দিষ্ট এলাকার পুলিশ এবং জনগণ নিজ নিজ চাহিদা অনুসারে একে অপরের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখিয়া অপরাধ দমন, সমাজে শৃংখলা স্থাপন, সামাজিক সমস্যা সমাধানকল্পে একসঙ্গে কাজ করিয়া সফলতা লাভ করার জন্যই এই ব্যবস্থা, যাহা কমিউনিটি পুলিশিং হিসাবে পরিচিত। এরফলে-

(ক) কমিউনিটি ভিত্তিক অপরাধ দমন,

(খ) জরুরী পরিস্থিতিতে পুলিশের পরিবর্তে জনতার মধ্য হইতে একজন হিতাকাংখী অর্থাৎ পুলিশ বন্ধু সৃষ্টি,

(গ) অপরাধ দমনের পরিকল্পনা ও কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ ও 

(ঘ) ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হয়। 

 

১৯৯২ সালে সর্বপ্রথম ময়মনসিংহ শহরে কমিউনিটি পুলিশ ফোর্স হিসাবে “টাউন ডিফেন্স পার্টি” সংগঠিত হয় এবং অপরাধ দমন অভুতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। ইহা মডেল হিসাবে গণ্য হয়। ১৯৯৪ সালে ঢাকা মহানগরীতে  এই ব্যবস্থা চালু হয় এবং বেশ প্রসংশিত হয়। পরে জামালপুরে চালু হয়। কমিউনিটি পুলিশিং হইল- বাংলাদেশ পুলিশের একটি কৌশলগত পরিকল্পনা। 

 

সীমাবদ্ধতাঃ দেশের প্রত্যেক থানায় “ওপেন হাউজ ডে” প্রবর্তনের মাধ্যমে কমিউনিটি পুলিশিং জোরদার করা হইলেও নানা কারণে পূর্ণতা লাভ করে নাই। যেমন-

(১) অবকাঠামোগত সমস্যা;

(২) সামাজিক সমস্যা;

(৩) স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি এলাকার জনগনের আস্থার অভাব;

(৪) স্থানীয় পুলিশের ইতিবাচক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির অভাব;

(৫) পুলিশ বাহিনীর কাঠামোতে এই ব্যবস্থা না থাকা;

(৬) স্থানীয় গোষ্ঠীগত কোন্দল ও দলাদলি;

(৭) হোয়াইট কলার অপরাধী ও স্থানীয় অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধাচরণ;

(৮) পুলিশ বাহিনীর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে স্থানীয় জনগনের অজ্ঞতা;

(৯) পুলিশের নিকট হইতে অতি প্রাপ্তীর উচ্চাশা;

(১০) স্থানীয় রাজনৈতিকদের সহযোগীতার অভাব;

(১১) স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সরাসরি অংশগ্রহণে/সমর্থনে অনিহা ইত্যাদি। 

 

উল্লিখিত সীমাবদ্ধতাসমূহ দূরীকরণে পুলিশ নিম্নরূপ ব্যবস্থা নিতে পারেঃ 

(ক) উপযুক্ত স্থানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির ব্যবস্থা করা;  

(খ) সামাজিক সমস্যা নিস্পত্তিকল্পে পুলিশকে বন্ধুর মতো আগাইয়া যাইতে হইবে;  

(গ) স্থানীয় জনগনের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করিয়া তাদের আস্থাভাজন হইতে হইবে; 

(ঘ) পুলিশের কর্মের উন্নতির মাধ্যমে মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাইতে হইবে;

(ঙ) স্থানীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ ও দলাদলি বন্ধ করার জন্য জনসংযোগ বৃদ্ধি করিতে হইবে;

(চ) হোয়াইট কলার অপরাধী এবং অন্যান্য অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে;

(ছ) পুলিশ বাহিনীর আর্থিক, জনবল, যানবাহন, সাজসরাঞ্জাম ইত্যাদির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জনগনকে ধারণা দিতে হইবে;

(জ) জনগণ পুলিশের নিকট সব কিছুই চাইতে পারে, ইহা হয়তো তাদের জন্য স্বাভাবিক ভাবনা- কিন্তু পুলিশের দেওয়ার মতো কতটুকু সামর্থ রহিয়াছে, তাহা জনগনকে বুঝাইয়া বলিতে হইবে;

(ঝ) সমাজে নানান দলে নানা মত রহিয়াছে এবং ভালো-মন্দ মিলাইয়াই সমাজ। সংখ্যা গরিষ্ট জনগনের সহযোগিতা পাওয়র জন্য ইতিবাচক দিকগুলির প্রতি দৃষ্টি দিতে হইবে এবং সমর্থ অনুযায়ী কাজ করিতে হইবে;

(ঞ) স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সমাজের চালিকা শক্তি। তাই তাদের সমর্থন আদায় করার জন্য পুলিশকে সচেষ্ট থাকিয়া সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাইতে হইবে।