⚖️ আসামীর মিথ্যা তথ্য নিরূপণ করার পদ্ধতি কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 11 hours ago
- Category: অপরাধ বিজ্ঞান
-
তদন্তকালে পুলিশকে অনেক সময় প্রাথমিক সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও অপরাধের সুরাহার জন্য পারিপার্শ্বিক, পূর্ববর্তী অসৎ চরিত্র, ঘটনার পূর্বাপর আচরণ কিংবা নিছক সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে না কাউকে গ্রেফতার করতে হয়। বিদ্বেষবশত বা পূর্ব শত্রুতাবশত মামলাকারী কখনো কখনো নির্দোষ ব্যক্তিকে আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করলেও তাকে গ্রেফতার করা পুলিশের জন্য জরুরী হয়ে দাঁড়ায়। প্রত্যক্ষ সাক্ষীর কথামতো যে কোনো ব্যক্তিই যে অপরাধী হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। সাক্ষ্য মনস্তত্ত্ব বলে, মানুষের প্রত্যক্ষণে ভ্রান্তি থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাছাড়া তথাকথিত প্রত্যক্ষ ব্যক্তিও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মামলায় জড়িত করতে পারে-এ ব্যাপারে তদন্ত জগতে প্রমাণের অভাব নেই।
উপরোক্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে পুলিশ অফিসারকে অত্যন্ত জটিল ও দুরূহ দায়িত্ব পালন করতে হয় বাধ্য হয়ে। দোষীকে অভিযুক্ত করা এবং নির্দোষকে খালাশ করা, দুটোই তদন্তের পরম লক্ষ্য। অভিযুক্তের অপরাধ সংঘটনের সপক্ষে সাক্ষ্য যোগাড় এবং তার নির্দোষিতার পক্ষেও সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ তদন্তের অপরিহার্য অংশ। পুলিশের কোনো অধিভৌতিক বা ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা নেই; অথচ ক্ল্যুহীন অপরাধসহ প্রতিটি অপরাধের কুল-কিনারা তাকেই করতে হয়। আর সবকিছুই করা হয় মানবিক ক্ষমতা আর প্রজ্ঞার দ্বারা। দায়িত্ব পালনের সময় এমন ব্যক্তিদের পুলিশ গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকে হয়তোবা তারা যথার্থ অর্থেই নির্দোষ; অপরাধের সঙ্গে কোনো সংশ্রবই নেই। কিন্তু উপায় কি? এ ক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের ঢালাওভাবে অভিযুক্ত মনে না করে তদন্তকারীকে ধৈর্য ও ধী-শক্তির পরীক্ষা দিতে হবে। প্রথমেই তিনি গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিটি দোষী না নির্দষ; অপরাধে জড়িত বা জড়িত নয়, তা মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিতে নির্ধারণ করবেন। বলা বাহুল্য, বলা সহজ কিন্তু কাজটি করা অত্যান্ত কঠিন। এ জন্য তাকে মানব আচরণ, মনস্তত্ত্ব ও সমাজ মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে।
গ্রেফতারকৃত বা ডেকে আনা ব্যক্তিটি যখন নিজের অপরাধ সংশ্রবতা অস্বীকার করে এবং পুলিশের নিকটও কোনো প্রাথমিক প্রমাণ থাকে না তখন আসামী দোষী না নির্দোষ তা নির্ধারণ একান্ত জরুরী হয়ে পড়ে। কারণ দোষী অনুমান করা গেলেও জিজ্ঞাসাবাদের মনস্তাত্বিক কৌশলগুলো তার উপর প্রয়োগ করে স্বীকারোক্তি বা অপরাধ সংশ্লিষ্ট বক্তব্য পাওয়ার প্রচেষ্টা নিতে হবে। তদন্তের যে কোনো পর্যায়ে তদন্তকারী মনে রাখবেন আসামী হয়তোবা পুরোপুরি নির্দোষ-শুধু পরিস্থিতির শিকার। আসামীকে দোষী মনে হলেই জিজ্ঞাসাবাদ, পুলিশ হেফাজতে আনা, হাজতে প্রেরণ, কোর্টে উপস্থাপণ-এ বিষয়গুলো বিবেচনায় আসে। আর নিরপরাধী হলে তাকে দায়মুক্ত করে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মুক্ত করে দেয়া উচিত। জনৈক অপরাধ বিজ্ঞানী সমীক্ষা থেকে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, অধিকাংশ পুলিশ অফিসার ধরে নেন আসামী মাত্রই দোষী। তদন্তকারীর এমন বদ্ধমূল ধারণা মাতৃকুলের অন্ধদৃষ্টির তুল্য।
প্রশ্ন হলো একজন পুলিশ অফিসার কিভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন যে, আসামীর সংশ্রবতা আছে কিনা, সত্য গোপন করছে কিনা কিংবা ডাহা মিথ্যা বলছে কিনা? এ সমস্যার সহজ কোনো সমাধান নেই। বাস্তব অভিজ্ঞতা, মানব আচরণ সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং অপরাধ মনস্তত্ত্বের জ্ঞান ব্যতীত এমন বোধজ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। আসামীর মিথ্যা কথন, তথ্য গোপন ও অপরাধ সংশ্লিষ্টতা সনাক্ত করার জন্য অপরাধ বিজ্ঞানীরা কতিপয় মনস্তাত্ত্বিক কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এগুলোর যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্তকারী আসামীর মিথ্যা তথ্য নিরুপণ করতে পারেন। যেমন-
(১) আসামী যদি তদন্তকারীর চোখে চোখে না তাকায়, বিব্রতবোধ করে, তবে সে অসত্য বলছে বা কোনো কিছু গোপন করছে।
(২) আসামী যখন কথা বলতে থাকে তখন বলার ধরণ, মুখের অভিব্যক্তি, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের প্রকৃতি, হস্তপদের গতিবিধি তীক্ষ্ণ নজরে লক্ষ্য করতে হবে।
(৩) জিজ্ঞাসাবাদের সময় যে আসামী কিরা কসম বা শপথ করে কথা বলে, খুব সম্ভব সে মিথ্যাবাদী। যেমন- আল্লাহর দোহাই, ধর্মের দোহাই, বাচ্চার দোহাই ইত্যাদি।
গবেষণা থেকে জানা গেছে, মিথ্যা কথনের সময় মিথ্যাবাদীর অনেকগুলো শারীরিক লক্ষণ তার অজ্ঞাতে প্রকাশ পায়। শারীরিক ভাষা এক্ষেত্রে অর্থবহ এবং তদন্তকারীকে এ ভাষা ও এর তাৎপর্য বুঝতে হবে। যেমন-
(ক) মিথ্যাবাদী শুধু নিজে বলতে চায়, শুনতে চায় না।
(খ) চোখে চোখে খুব কম তাকায়।
(গ) হাত কচলায়।
(ঘ) কথায় উদাহরণ থাকে কম।
(ঙ) মাথা নেড়ে হ্যাঁ বা না কম বলে।
(চ) কথা বলার গতি অপেক্ষাকৃত শ্লথ।
(ছ) কথার ভূল হয় বেশী, মুখে কথা বাজে।
(জ) কথার মধ্যে সঙ্গতি থাকে না।
(ঝ) চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা ফুটে উঠে।
(ঞ) দুইপা আড়াআড়িভাবে স্থাপন করে একটির উপর অন্যটি রাখে।
(ট) অযথা উর্ধমুখি তাকায় যেনো কারো সাহায্য প্রার্থী এবং
(ঠ) উত্তর দেবার পূর্বে মুখের উপর অনর্থক হাত বুলায়।