⚖️ মানুষ কেনো অপরাধ করে?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 5 days ago
  • Category: অপরাধ বিজ্ঞান

অপরাধ সংঘটনের কারণ বহুবিধ, যাহা এক কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন অপরাধ বিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানী এই মানব আচরণকে বা অপরাধকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করিয়াছেন এবং সেইগুলি অপরাধের কারণ হিসাবে উল্লেখ করিয়াছেন। তাছাড়া সমাজ বিজ্ঞানীরাও নানাভাবে অপরাধ সম্পর্কে বলিয়াছেন। যেমন-


বিজ্ঞানী কার (Carr) বলিয়াছেন- অপরাধ প্রবনতা হইল “সামীকরণ বিদ্যা, যেখানে মিলের চেয়ে বিচ্যুতি বেশি”। আবার মার্কসের নীতি অনুসারে বলা যায়, “দারিদ্রতা হইতে হেয় নীতিজ্ঞান জন্মে ও দরিদ্র মানুষেরাই অপরাধ প্রবণ হয়”। ড. বার্ট (D. Burt) বলিয়াছেন, “অপরাধী পরিবারের ছেলে-মেয়েরা অপরাধ  প্রবণ হয়”। হারউইজ (Harwitz) বলিয়াছেন, “অপরাধের  কারণগুলি অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের ফলে সৃষ্ট”। মেনডন এবং গ্যালটন বলিয়াছে, “বংশগতি হইল অপরাধের অন্যতম কারণ”। এই বিবেচনায় অপরাধের কারণগুলিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

(ক) ব্যক্তিগত কারণ,

(খ) সামাজিক কারণ,

(গ) পারিবেশিক কারণ এবং 

(ঘ) মনোবৈজ্ঞানিক কারণ ইত্যাদি। 


উপর্যুক্ত কারণসমূহ সম্পর্কে রাফায়েল গ্যারোফেলো, এনরিকো ফেরি, সিজার লোমব্রোসো এবং ক্যুইটলেট নানান মতবাদ ব্যক্ত করিয়াছেন। এডলফ ক্যুইটলেট অপরাধের কারণ হিসাবে শহর ও গ্রাম অঞ্চলের পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে দায়ী করিয়াছেন। শহরাঞ্চলে অপরাধীর অপরাধ প্রবণতা বেশি বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। এনরিকো ফেরি ও গ্যারোফেলো অপরাধের কারণ হিসাবে সামাজিক ও ভৌগলিক অবস্থা তথা পারিপার্শ্বিক বস্তুগত অবস্থা ও আর্থ সামাজিক পরিবেশের উপর গুরুত্ব দিয়াছেন। 


ইতালীর বিশিষ্ট মনীষী সিজার লোমব্রোসো সারা বিশ্বে শরীরবৃত্তির মতবাদ বা ইতালীয় মতবাদ বা দৃষ্টবাদ মতবাদ প্রচার করিয়াছেন। যেমন-

(১) পেশাদার অপরাধীরা জন্মসূত্রে অপরাধী হয়।  

(২) তাদের শরীর ও মনই অপরাধ প্রবণতার মূল কারণ। 

(৩) অপরাধীরা জন্মগতভাবে কতক দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করিয়া থাকে। যেমন-

(ক) ছোট মাথার খুলি,

(খ) ভাঁজ পড়া মাথার খুলি,

(গ) ছোট ও উচু কপাল,

(ঘ) চোয়ালবিহীন মুখ,

(ঙ) লতিবিহীন কান,

(চ) লোমবিহীন শরীর,

(ছ) অতিবেদনা সহিষঞ্চুতা, 

(জ) মানসিক হীনমন্যতা ইত্যাদি। 

(৪) পশু সুলভ বৈশিষ্ট্য এবং

(৫) কিছু মানসিক ও সামাজিক শর্ত ইত্যাদি। 


লোমব্রোসের শরীরবৃত্তির মতবাদের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমে ক্রমে হ্রাস পায় এবং এর পরিবর্তে অপরাধের কারণ হিসাবে নিচের তত্ত্বগুলি প্রধান্য পায়-

(১) হীনমন্যতা তত্ত্ব, 

(২) কর্ম বুদ্ধিমত্ত্বা,

(৩) মানসিক বৈকল্য তত্ত্ব,

(৪) অন্তঃক্ষরা গ্রন্থী তত্ত্ব ইত্যাদি। 


তবে এই ধরণের মতবাদও গুরুত্ব হারাইয়াছে এবং অপরাধীকে মনস্তাত্তিক দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করিয়াছেন চিকিৎসক ও জীব বিজ্ঞানীরা। যেমন- নিউরোসেস, সাইকোসেস ও সাইকোপ্যাথিক। তবে মনবৈকল্যতত্ত্ব ও মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বের অবসান এখনও অনস্বীকার্য। কিন্তু কোনো মতবাদই সকল শ্রেণীর অপরাধ আচরণ এককভাবে ব্যাখ্যা করিতে সক্ষম হয় নাই। অপরাধ বিজ্ঞানী এনরিকো ফেরি এর মতে অপরাধ আচরণ হইলঃ 

(১) বহু কারণের ফলাফল, যাহা পরস্পর অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত,

(২) ব্যক্তিগত, নৃতাত্ত্বিক, জৈবিক, প্রাকৃতিক এবং সামাজিক কারণগুলি অপরাধ প্রবণতা সৃষ্টি করে। 

(৩) বস্তুগত কারণ, যেমন- জলবায়ু, ভুমির মালিকানা, আবহাওয়া, তাপমাত্রা ইত্যাদি।

(৪) সামাজিক কারণ, যেমন- জনসংখ্যার ঘনত্ব, জনমত, ধর্ম, শিল্পায়ন, কৃষি, শিক্ষা, জনশৃংখলা, বিচার ব্যাবস্থা ইত্যাদি। 

 

স্পেনের অপরাধ বিজ্ঞানী ড. কুইরস এর মতে ফেরির তত্ত্বই বিজ্ঞানসম্মত। যার বহুদিন পর বৃটিশ মনোবিজ্ঞানী ড. বার্ট অপরাধ আচরণের জন্য বহুবিধ কারণকে দায়ী করেন। তিনি চারটি কারণ চিহ্নিত করেন। যেমন-

(১) মুখ্য বা প্রধান প্রভাব, 

(২) পরিবেশের প্রধান সহায়ক শর্তাবলী,

(৩) গৌণ নেতিবাচক অবস্থার প্রভাব,

(৪) নেতিবাচক আচরণ করারমতো সম্ভাব্য সুযোগ। 

আধুনিক অপরাধ বিজ্ঞানীরা সংঘবদ্ধ অপরাধ ও আকস্মিক অপরাধ পৃথক বলিয়া বিবেচনা করেন। তাহারা মনে করেন যে, অন্যান্য মানব আচরণের মতোই অপরাধ আচরণ শিক্ষালব্ধ একটি সামাজিক আচরণ। ওপরকে অনুসরণ করিয়াই শিক্ষা লাভ করিয়া থাকে। কোনো কোনো সমাজ বিজ্ঞানীরমতে সাংস্কৃতিক বিরোধ ও সমাজ নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি দুর্বল হলেই অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অপরাধ বাড়িয়া যায়। 

 

মার্কিন অপরাধ বিজ্ঞানী ই, এইচ, সাদারল্যান্ড (Edwin Harry Suderland) সমাজের উচ্চ আর্থসামাজিক মর্যদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের এক ধরণের অপরাধ আচরণকে হোয়াইট কলার অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করিয়াছেন। যেমন- নিম্নবর্ণিত আইন ভঙ্গ করা-

(১) শিল্প আইন,

(২) পরিবেশ আইন,

(৩) ব্যবসা সংক্রান্ত আইন, 

(৪) চুক্তি আইন,

(৫) শ্রম আইন, 

(৬) প্রতারণা, 

(৭) গ্রন্থস্বত্ত্ব আইন,

(৮) বীমা আইন ইত্যাদি।