⚖️ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসি কে?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 1 week ago
  • Category: ফৌজদারী কার্যবিধি

ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪(ত) ধারার সংজ্ঞা মোতাবেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলিতে সেই সকল অফিসারকে বুঝাইবে যাহারা কনষ্টেবল পদের উপরে এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অব্যবহিত নীচে এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে, অসুস্থতা অথবা অন্য কোনো কারণে তিনি তাহার কর্তব্য পালনে অপারগ হইলে যে পুলিশ অফিসার থানায় উপস্থিত থাকেন অথবা সরকার নির্দেশ দিলে উপস্থিত অন্য যে কোনো পুলিশ অফিসারকে বুঝাইবে (PRB-201/205)। 

 

বাস্তব ক্ষেত্রে বর্তমানে থানায় ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার একজন অফিসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করিয়া থাকেন। ইন্সপেক্টর এর অনুপস্থিতিতে সিনিয়রিটি অনুযায়ী সাব- ইন্সপেক্টর (এসআই) এবং  সাব- ইন্সপেক্টর এর অনুপস্থিতিতে সিনিয়রিটি অনুসারে এসিস্ট্যান্ট সাব- ইন্সপেক্টর (এএসআই) এই দায়িত্ব পালন করিয়া থাকেন। পিআরবি ২০১ বিধি অনুযায়ী কনস্টেবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করিতে পারেন  না। 

 

যেহেতু থানায় উপস্থিত থাকা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সকল দায়িত্ব পালন করেন বা করাইয়া নেন এবং থানার সকল কাজের জন্য তাহাকে জবাবদিহি করিতে হয় এবং থানায় উপস্থিত সকলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়া সকল কার্যক্রম পরিচালনা করিয়া থাকেন, সেইহেতু থানার জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাকে ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা বা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলা হয়।

 

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অফিসার ইনচার্জ এর দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ

(ক) পিআরবি ২০৫ বিধি অনুযায়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অফিসার ইনচার্জ তাহার আওতার মধ্যে শান্তিরক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধে তাহার অধস্তন পুলিশ কর্মচারীদের যথাযথভাবে কাজে লাগানো ও ব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী। অপরাধ দমনের জন্য অপরাধী, অপরাধী দল, ভবঘুরে, ভ্রাম্যমান অপরাধী দলের আবাস অথবা থানা এলাকার মধ্য দিয়া ভ্রমণরত অপরাধী দল সম্পর্কে সঠিক তথ্য লাভ করা তার প্রধান লক্ষ্য হবে। অতঃপর তাহাদের প্রতি কার্যকর দৃষ্টি রাখা অথবা আইন অনুযায়ী তাহাদের বিরুদ্ধে যেমন প্রয়োজন তেমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এই উদ্দেশ্যে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পন্থাসমূহ নিম্নরূপঃ 

(১) তাহার দায়িত্বাধীন এলাকা এবং এলাকার অধিবাসীদের সম্পর্কে নিবিড় জ্ঞান এবং তাহাদের সহানুভূতি ও সহযোগিতা অর্জন। 

(২) অপরাধ, অপরাধী, সন্দেহভাজন চরিত্র ও অজ্ঞাত পরিচয় বা আগন্তুক সম্পর্কে প্রাত্যাহিক ও নিয়মিতভাবে আগেভাগে গ্রাম পুলিশ কর্তৃক প্রতিবেদন প্রদান করা।  

(৩) সন্দিগ্ধ ও দাগী অপরাধীদের সক্রিয় নজরদারী।

(৪) ভিলেজ ক্রাইম নোট বুক (ভিএনবি) ও নজনরদারী রেজিস্টার পর্যালোচনা এবং সযত্নে সংরক্ষণ। 

(৫) টহলের কার্যকরী ব্যবহার। 

(৬) অসৎ উপায়ে জীবিকা অর্জনের জন্য ফৌজদারীতে সোপর্দ করা।  

(৭) প্রতিবেশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অফিসার ইনচার্জদের সহিত উদার সহযোগিতা। 

 

(খ) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অফিসার ইনচার্জ এসব পন্থার কোনোটিই অবহেলা করিবেন না। তিনি তাহার এলাকার মধ্যে অব্যাহতভাবে চলাফেরা করিয়া সম্মানিত ব্যক্তিদের নিকট গিয়া আলোচনা করিয়া নিজে নিশ্চিত হইবেন যে, সক্রিয় অপরাধীদের সম্পর্কে তিনি নিয়মিত এবং পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেয়ে আসিতেছেন এবং সক্রিয় অপরাধীদের সম্পর্কে অবহিত আছেন।

 

(গ) বিধি বা আইন মোতাবেক প্রয়োজন না হইলে অথবা পুলিশ সুপারের বিশেষ আদেশে স্বহস্তে ঐ সকল রেজিস্টার লিখিবার জন্য নির্দেশ দেওয়া না হইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ব্যক্তিগতভাবে তাহা লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজন নাই। তথাপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এগুলোর জন্য দায়িত্ববান। থানার এসআই দ্বারা এইগুলি লিখিয়ে নিবেন এবং তিনি ঘন ঘন পরিদর্শণ করিয়া নিশ্চিত হইবেন যে, যথাযথভাবে রেকর্ড সংরক্ষণ করা হইতেছে এবং হালনাগাদ আছে।   

 

(ঘ) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অফিসার ইনচার্জ তাহার থানা এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ সকল ঘটনা সংক্রান্তে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করিবেন এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করিবেন।