⚖️ আইন শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ দলের সাথে উপস্থিত ম্যাজিষ্ট্রেটের দায়িত্ব কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 2 weeks ago
  • Category: পিআরবি

(ক) সশস্ত্র পুলিশ দলের সাথে উপস্থিত ম্যাজিষ্ট্রেটের দায়িত্বঃ  

পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল (পিআরবি) ১৫১ প্রবিধানে বলা হয়েছে যে, কোনো দাঙ্গা দমনে কিংবা বে-আইনী সমাবেশ ছত্রভংগ করার জন্য নিয়োজিত সশস্ত্র পুলিশ দলের সাথে যখন কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট উপস্থিত থাকেন তখন-  

(১) পুলিশ দলের পরিচালক কর্তৃক পুলিশ বাহিনীর পরিচালনায় তিনি হস্তক্ষেপ করবেন না।

(২) কখন বল প্রয়োগ করতে হবে এবং কখন গুলি ছুড়তে হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তিনিই দায়ী থাকবেন। 

(৩) যখন প্রয়োজন দেখা দিবে তখন তিনি পুলিশ দলের পরিচালককে বল প্রয়োগ করতে বা গুলি চালাতে নির্দেশ দিবেন। কিন্তু নির্দেশকে বাস্তবায়নের জন্য পুলিশ বাহিনী পরিচালনা করা বা না করা সম্পর্কে পরিচালক পুলিশ অফিসারের স্বাধীন ইচ্ছাকে তিনি ব্যাহত করতে পারবেন না। 

(৪) তিনি প্রবিধান ১৫৩(গ)(২) মোতাবেক কোনো সমাবেশের উপর গুলি চালানোর আদেশ দেয়ার পূর্বে দাঙ্গাকারী জনতাকে এ মর্মে হুশিয়ার করে দিবেন যে, তারা যদি অবিলম্বে সরে না যায় বা ছত্রভঙ্গ না হয় তবে তাদের উপর গুলিবর্ষণ করা হবে। 

(৫) তিনি প্রবিধান ১৫৫(ঘ) অনুসারে দাঙ্গাকারী জনতা পশ্চাদপসারণের বা ছত্রভঙ্গ হবার সামান্যতম প্রবণতা দেখালে পুলিশ দলের পরিচালককে গুলি চালনা বন্ধের নির্দেশ দিবেন। 

(৬) প্রবিধান ১৫৬(গ) অনুসারে ঘটনা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ সঠিক রিপোর্ট এবং তারপর ব্যবহৃত গুলির সংখ্যাসহ ঘটনার একটি নিখুত বিস্তারিত বিবরণ প্রস্তুত করবেন। 

 

(খ) গুলির আদেশ ও গুলি চালনা নিয়ন্ত্রণঃ 

পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল (পিআরবি) প্রবিধান ১৫৫ তে গুলির আদেশ ও গুলি চালনা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছেঃ 

(ক) পুলিশ দলের পরিচালক ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশ পেলে অথবা ম্যাজিষ্ট্রেট অনুপস্থিত থাকলে তিনি নিজেই প্রয়োজন মনে করলে বল প্রয়োগ বা গুলি চালানোর নির্দেশ দিবেন। 

(খ) তিনি এমনভাবে গুলি পরিচালনা করবেন যাতে স্বল্পতম ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে ত্বড়িৎ উদ্দেশ্য হাসিল হয়। দাঙ্গাকারী জনতার মাথার উপর দিয়ে অথবা বে-আইনী সমাবেশের সদস্য ব্যতীত অন্য কারো দিকে গুলি ছোড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা এতে একদিকে যেমন নিরাপরাধ লোকদের ক্ষতি হয় অন্যদিকে তেমনি দৃশ্যতঃ কোনো কার্যকর ক্ষতি না দেখতে পেয়ে সংশ্লিষ্ট বে-আইনী জনতার উৎসাহ বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা থাকে। গুলি ছোড়ার আদেশ দেয়ার পূর্বে আদেশকারী দুরত্ব, লক্ষ্যবস্তু  ও গুলির সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিবেন। 

(গ) পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যতটুকু প্রয়োজন উহা অপেক্ষা বেশী পরিমাণে যাতে গুলি ছোড়া না হয় তা দেখার দায়িত্ব তার। সাধারণতঃ তিনি গুলি চালানোর জন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিশেষকে বা ক্ষুদ্র দলকে আদেশ দিবেন। জনসাধারণের সম্পত্তি ও জীবন রক্ষা বা পুলিশ অফিসারদের প্রাণ রক্ষার প্রয়োজন বোধ করলে তিনি সমগ্র পুলিশ বাহিনীর অর্ধেকের বেশী না হয় এরূপ সংখ্যক পুলিশকে একসঙ্গে গুলি চালানোর নির্দেশ দিতে পারেন। 

(ঘ) দাঙ্গাকারী জনতা সরে যাবার বা ছত্রভঙ্গ হতে সামান্যতম আগ্রহ দেখামাত্রই তিনি গুলি চালানো বন্ধের নির্দেশ দিবেন। কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট উপস্থিত থাকলে তিনি পুলিশ দলের পরিচালককে এরূপ আদেশ দেয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন। 

 

(গ) আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্বাহী তদন্ত (Executive Enquiry): 

পুলিশ, বিজিবি তথা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক গুলি বর্ষণের পর ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক তদন্ত সাধারণতঃ নির্বাহী তদন্ত (Executive Enquiry) নামে অবহিত। 

 

কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশ কর্তৃক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার বৈধঃ 

পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল এর ১৫৩ প্রবিধান অনুযায়ী নিম্নোক্ত উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়ে থাকেঃ 

(১) ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা সম্পত্তি রক্ষার অধিকার প্রয়োগ করার জন্য (দন্ডবিধি ৯৬-১০৬ ধারা)।

(২) বে-আইনী সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য (ফৌজদারী কার্যবিধি ১২৮-১২৮ ধারা)। 

(৩) কতিপয় পরিস্থিতিতে গ্রেফতারী পরোয়ানা কার্যকরী করার জন্য (ফৌজদারী কার্যবিধি ৪৬ ধারা)। 

 

নির্বাহী তদন্ত কে করবেনঃ 

পিআরবি ১৫৭(ক) প্রবিধানে উল্লেখ আছে যে, যখনই পুলিশ কর্তৃক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হবে তখনই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার যুক্তিসংগত হয়েছে কিনা এবং নিয়ম মেনে চলা হয়েছে কিনা তা উদঘাটনের জন্য যত শীগ্র সম্ভব নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা পূর্ণাংগ প্রশাসনিক তদন্ত অনুষ্ঠিত হবেঃ 

(ক) জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অথবা বিজিবি কমান্ডেন্ট গুলি বর্ষণের সাথে জড়িত থাকলে বিভাগীয় কমিশনার তদন্ত করবেন। 

(খ) উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, সহকারী পুলিশ সুপার অথবা বিজিবি সহকারী কমান্ডেন্ট গুলি বর্ষণের সাথে জড়িত থাকলে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তদন্ত করবেন।

(গ) অন্যান্য ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট অথবা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক মনোনীত একজন ম্যাজিষ্ট্রেট তদন্ত চালাবেন। 

 

নির্বাহী তদন্তে পুলিশ অফিসারের অংশ গ্রহণঃ 

বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট নির্দেশ দিলে অথবা রেঞ্জের ডিআইজি বা সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার চাইলে গুলি বর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ অফিসারের চেয়ে উচ্চ পদাধীকারী এবং ইন্সপেক্টরের অপেক্ষা নিম্ন পদের নন এরূপ একজন পুলিশ অফিসার তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন। অনুরূপ পুলিশ অফিসারের সাক্ষীদের জেরা করার অধিকার থাকবে এবং ঘটনা সম্পর্কে তার মতামত ম্যাজিষ্ট্রেট বা কমিশনারের রিপোর্টের সাথে দাখিল করতে হবে (প্রবিধান ১৫৭(খ)। 

 

তদন্তের সময় আইনজীবির উপস্থিতিঃ 

তদন্তের সময় কোনো পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে আইনজীবির উপস্থিতি অনুমোদিত হবে না। তবে কোনো পুলিশ অফিসারের আচরণ বিচার্য বিষয় হলে তাকে সাক্ষীদের জেরা করার অনুমতি দেয়া যাবে এবং তিনি মৌখিক বা লিখিত বিবৃতি দিতে পারবেন (প্রবিধান ১৫৭(ঙ)।

তদন্ত সমাপ্ত হওয়ার পর তদন্তকারী অফিসার অনতিবিলম্বে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের নিকট একটি রিপোর্ট পাঠাবেন এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এর নিকট দাখিল করার জন্য এককপি অনুলিপি পুলিশ সুপার বা রেঞ্জের ডিআইজি এর নিকট প্রেরণ করবেন (প্রবিধান ১৫৭(চ)।  

Google News Google News
Google News এ বিরাট বাজারের সকল পোস্ট পেতে ক্লিক করে ফিডটি ফলো করুন