⚖️ ডাকাতি মামলা তদন্তের নিয়ম কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 3 weeks ago
- Category: বাংলাদেশ দন্ডবিধি
-
বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৩৯১ ধারার বিধান মোতাবেক পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি মিলিতভাবে কোনো দস্যুতা অনুষ্ঠান করলে বা করার উদ্যোগ গ্রহণ করলে প্রত্যেক ব্যক্তি ডাকাতির অপরাধে অপরাধী হবে। ডাকাতি মামলা একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। তদন্তকারী অফিসারকে গুরুত্ব সহকারে ডাকাতি মামলা তদন্ত করতে হয়। ডাকাতি মামলা রুজু হওয়ার সাথে সাথে নিজ থানা সহ পার্শ্ববর্তী থানা সমূহে শোরগোল বা হৈ চৈ পড়ে যায়। দ্রুত আসামী গ্রেফতার এবং লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করার নিমিত্তে পার্শ্ববর্তী থানা সমূহে হৈ চৈ বিজ্ঞপ্তি প্রেরণ করতে হয়। কাজেই তদন্তকারী অফিসারকে অত্যন্ত ধৈর্য, সহিষ্ণুতা এবং তীক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে তদন্তে অগ্রসর হতে হয়।
এই ধরণের মামলার তদন্তে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে ভিলেজ ক্রাইম নোট বুক (ভিসিএনবি) ভালোভাবে পর্যালোনা করে বিগত ৫ বৎসর যেসব অপরাধী ডাকাতির কাজে সক্রিয় ছিলো এবং ডাকাতির অপরাধে সাজা ভোগ করেছে তাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করতে হবে। বর্তমানে সিডিএমএস পর্যালোচনা করে খুব সহজে অপরাধীদের নাম ঠিকানা সহ অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। অতি দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে হবে। ঘটনাস্থলের আশেপাশে আসামীরা কোনো আলামত ফেলে গেছে কিনা তার সন্ধান করতে হবে। ডাকাত দল কোনো বাড়িতে ডাকাতি করার সময় সেই বাড়ির আশেপাশে অথবা ঝোপ জঙ্গলে একত্রিত হয়ে পরিকল্পনা করাকালে বিড়ি-সিগারেট বা পড়নের কাপড়-চোপড় ফেলে গিয়েছে কিনা তদন্তকারী অফিসারকে তার অনুসন্ধান করতে হবে। বাড়ির সদস্য এবং গ্রামবাসীকে বিচক্ষণতার সহিত জিজ্ঞাসাবাদ করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা মোতাবেক তাদের জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করতে হবে। এজাহারের বর্ণনা অনুসারে ঘটনাস্থল হতে আলামত জব্দ করতে হবে। ডাকাত দল কর্তৃক বাড়ির কোনো সদস্য জখমপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হলে তদন্তকারী অফিসারকে হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে জখমীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা মোতাবেক জখমীর জবানববন্দী লিপিবদ্ধ করতে হবে। ঘটনাস্থলে ডাকাত দলের সদস্যদের হাতের ছাপ, পায়ের ছাপ পাওয়া গেলে তা সাবধানতার সহিত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে পরীক্ষার জন্য সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকার পরীক্ষাগারে প্রেরণ করতে হবে। বাড়ির কোনো সদস্যকে ডাকাতেরা হত্যা করলে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মৃতদেহের ময়না তদন্ত করার জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করতে হবে।
বাদী বা বাদীর লোকজন ডাকাত দলের কাউকে চিনতে পারলে অথবা সন্দেহ করলে দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ পূর্বক লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গ্রেফতারকৃত অপরাধীগণ অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক তাদের জবানবন্দী রেকর্ড করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদকালে তাদের ভয়ভীতি দেখানো অথবা পারপিট করা যাবে না। লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হলে উদ্ধারকৃত মালামালের সনাক্তকরণ মহড়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে তাকেও সনাক্তকরণ মহড়ার মাধ্যমে চিহ্নিত করতে হবে। ঘটনার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষী পাওয়া গেলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক সাক্ষীর জবানবন্দী ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক রেকর্ড করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে পূর্বে কোনো মামলা আছে কিনা তা সিডিএমএস এর মাধ্যমে যাচাই করে সিডিতে উল্লেখ করতে হবে। ডাকাত দলের সদস্যগণ বাড়ির কোনো সদস্যের মোবাইল নিয়ে গেলে সেই মোবাইল নম্বারের সিডিআর সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করতে হবে। ডাকাত দলের সদস্যদের কারও মোবাইল নম্বার পাওয়া গেলে তারও সিডিআর সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করতে হবে।
ডাকার দলের কোনো সদস্য জনগণ কর্তৃক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কোথাও চিকিসাধীন আছে কিনা তার অনুসন্ধান করে গ্রেফতারের ব্যবস্থা নিতে হবে। ডাকাতি মামলা পুলিশ সুপার কর্তৃক এসআর মামলা হিসেবে ঘোষণা করলে তিন কপি সিডি লিখে এককপি পুলিশ সুপার বরাবর এবং এককপি সার্কেল অফিসার বরাবর প্রেরণ করতে হবে। অপর কপি মামলার ডকেটে সংযুক্ত করতে হবে। ডাকাতি মামলা সিআইডির তপশিল ভুক্ত মামলা। সিআইডি কর্তৃক মামলার তদন্তভার গ্রহণ করা হলে সঙ্গে সঙ্গে মামলার ডকেট সিআইডিতে হস্তান্তর করতে হবে। শুধুমাত্র ডাকাতির ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩৯৫ ধারায় মামলা রুজু হবে এবং ডাকাতি করার সময় ডাকাত দল কর্তৃক কোনো ব্যক্তিকে খুন করা হলে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩৯৬ ধারায় মামলা রুজু হবে।