⚖️ জনসাধারণের আইনগত ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের সুযোগগুলি কি কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 2 weeks ago
  • Category: পিআরবি
অপরাধ দমন, অপরাধ প্রতিরোধ এবং আইনশৃংখলা রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ সব সময়েই জনসাধারণের সহায়তা কামনা করিয়া থাকেন। অর্থাৎ পুলিশ এলাকার জনসাধারণের সক্রিয় সাহায্য সহযোগিতা পাইলেই যাবতীয় পুলিশি কার্যক্রম তথা আইন প্রয়োগ ও আইনগত ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিচালনা করিতে পারে। দেশে প্রচলিত বিভিন্ন আইন ও বিধিতে তাই জনসাধারণের অংশগ্রহণের জন্যও সুযোগ রাখা হইয়াছে। যেমন-

 

(ক) ফৌজদারী কার্যবিধিঃ 

(১) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪২ ধারা মোতাবেক সকল পুলিশি কার্যক্রমে জনসাধারণ ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশকে সাহায্য করিতে বাধ্য। 

(২) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৩ ধারা মোতাবেক পুলিশ অফিসার ছাড়াও গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিলকারী যেকোনো ব্যক্তিকে জনসাধারণ সাহায্য করিতে পারেন। 

(৩) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৪ ধারা অনুসারে জনসাধারণ কতিপয় অপরাধ সম্পর্কে পুলিশকে সংবাদ দিবেন। 

(৪) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৫ ধারার বিধানমতে গ্রাম প্রধান, হিসাবনবিস, জমির মালিক ও অন্যান্য কতিপয় ব্যক্তি কিছু বিষয় সম্পর্কে পুলিশকে সংবাদ দিতে বাধ্য। 

(৫) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৬, ৪৭, ৪৮  ধারা মোতাবেক গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জনসাধারণ পুলিশকে সাহায্য করিতে বাধ্য। 

(৬) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫৯, ৬০ ধারা মোতাবেক নিজের দৃষ্টিসীমার মধ্যে কোনো ধর্তব্য অপরাধ সংঘটিত হইতে দেখিলে যেকোনো সাধারণ ব্যক্তি অপরাধীকে আটক করিতে বা আটকে সাহায্য করিতে পারে এবং পুলিশে সোপর্দ করিতে পারে। 

(৭) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৭৮ ধারার বিধান মোতাবেক আদালত হইতে পরোয়ানা পাইলে জমির মালিক উহা তামিল করিতে পারেন। 

(৮) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১০২ ধারা মোতাবেক কোথাও কোনো ব্যক্তি আটক থাকিলে সেই স্থানের মালিক বা প্রতিনিধি পুলিশকে তল্লাশী করিতে দিবেন। 

(৯) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬১ ধারা অনুসারে মামলা তদন্তকালে পুলিশের নিকট জনসাধারণ অপরাধের ঘটনা সম্পর্কে বিবৃতি দিবেন। 

(১০) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ২০০ ধারা মোতাবেক জনসাধারণ আদালতে জবানবন্দী প্রদান করিবেন। 

 

সাক্ষ্য আইনের বিভিন্ন ধারা উপধারার বিধান মোতাবেক সংশ্লিষ্ট সকল জনসাধারণ আদালতে সঠিকভাবে সত্য উপস্থাপন করিয়া আদালতকে সাহায্য করার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থাপনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিতে পারে। যেমন- 

(ক) সঠিক বিবৃতি প্রদান করা,

(খ) স্বীকারোক্তি প্রদান করা,

(গ) সংশ্লিষ্ট আলামত উপস্থাপন, 

(ঘ) তথ্য প্রমাণ এবং

(ঙ) দলিলপত্র আদালতে উপস্থাপন করা ইত্যাদি। 

 

কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাপনায় জনসাধারণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিয়া সকল প্রকার পুলিশি কার্যক্রম তথা আইন প্রয়োগ ও আইনগত ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করিতে পারে। দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং চরম আইনশৃংখলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হইলে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ১৭ ধারার বিধানমতে বিশেষ পুলিশ বাহিনীর সসদস্য হিসাবে আইন প্রয়োগ ও আইনগত ব্যবস্থাপনায় জনসাধারণ অংশগ্রহণ করিতে পারে (পিআরবি ৬৭৪)। 

 

পিআরবি ২৫২ এর বিধানমতে কোনো জমির মালিক, দখলকার বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শান্তি ভঙ্গের আশংকার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ১৫৪ ধারার নোটিশ প্রাপ্ত হইয়া পরস্পর সমঝোতার মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়া আইনগত ব্যবস্থাপনায় অংশ গ্রহণ করিতে পারেন। 

 

পিআরবি ৩০১ এর বিধান মোতাবেক জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হইয়া ইউনিয়ণ পরিষদ চেয়ারম্যান, সভাপতি, বন বিভাগীয় অফিসার কিংবা মনোনীত সদস্য আত্মহত্যা বা অপরাধমূলক কাজের সন্দেহ নাই এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত করিয়া আইনগত ব্যবস্থাপনায় অংশ নিতে পারেন। 

 

পিআরবি ৩৪০ এর বিধানমতে গ্রাম মাতব্বর, ইউনিয়ণ পরিষদ এবং গ্রাম পুলিশ এলাকায় বসবাসরত খারাপ লোকদের যথাযথ নিরীক্ষণের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থাপনায় অংশ নিতে পারেন। 

 

পিআরবি ৭৬৮ এর বিধান অনুসারে পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন ইউনিটে করণিক, হিসাবরক্ষক, রিডার ও ষ্টেনোগ্রাফার পদে যোগদানের মাধ্যমে তাহারা আইনগত ব্যবস্থাপনায় অংশ গ্রহণ করিতে পারেন।