⚖️ সমাজের অপরাধ প্রতিরোধ, দমন ও সংশোধনের পদ্ধতি কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 3 days ago
- Category: অপরাধ বিজ্ঞান
-
যেকোনো সমাজে অপরাধ আছে এবং থাকবে। সম্পূর্ণ নিরাময় বা বন্ধ করা সম্ভব নয়। অপরাধ প্রবণতা কমবেশি সবার মাঝেই আছে। অপরাধ আচরণের কারণ বিশ্লেষণ করে এক গবেষণায় অপরাধ বিজ্ঞানী সিজার লম্ব্রোসো এবং তার ছাত্র এনরিকো ও ফেরী অপরাধীদের জন্মগত অপরাধীতত্ব উদ্ভাবন করেন। আবার কেউ কেউ মানসিক বৈকল্য, সামাজিক বিশৃংখলা ইত্যাদিকেও দায়ী করেন। বর্তমান বিশ্বে উন্নত বা অনুন্নত সকল দেশেই অপরাধ প্রবণতা বেড়ে চলছে। তারপরও মানুষ সামাজিক উন্নয়নের জন্য সমাজে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য চেষ্টা করে থাকে। কাজটি পুলিশের হলেও পুলিশ কখনও উহা একা পারেনা। জনসাধারণের সহায়তা নিয়ে করতে হয়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ হলো একটি ব্যাপক কাজ। তবে নিরোধ বা প্রতিরোধমূলক কাজটিই পুলিশকে আগে করতে হয়।
(১) প্রতিরোধঃ ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে “Prevention is better then cure” অর্থাৎ নিরাময় অপেক্ষা প্রতিরোধ শ্রেয়। অপরাধ যাতে ঘটতে না পারে সেজন্য ঘটনা ঘটার পূর্বেই সঠিক সংবাদ সংগ্রহ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাছাড়া অপরাধ প্রবণ এলাকায় নিয়মিত পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করা, স্থানীয় জনগনের সহায়তায় কমিউনিটি পুলিশ গঠন পূর্বক নিয়মিত ও সঠিকভাবে নজরদারী করা ইত্যাদি।
(২) দমনঃ অপরাধ দমন করতে হলে অপরাধে যে বা যারা জড়িত থাকে তাদেরকে চিহ্নিত করে আটক পূর্বক আইনে সোপর্দ করা।
(৩) সংশোধনঃ কোনো অপরাধীকে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর সহায়তায় কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অপরাধ জগত হতে বাহির করে সুস্থ ও স্বভাবিক জীবনে ফিরে আনা। অপরাধী ভূলক্রমে অপরাধ করে বসতে পারে, তবে তাকে যদি বিষয়টি ভালোভাবে বুঝায়ে বা কোনো সংশোধনাগারে রেখে কিছু কিছু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজের মূল ধারায় ফিরে আনা যায়, তবেই একজন বাস্তবে সংশোধন হতে পারে। এই সুযোগটি তাকে দিতে হবে। অন্যথায় সে অন্যান্য অপরাধীদের সাথে মিলে পেশাদার অপরাধীতে পরিণত হবে।
ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে- নিরাময় অপেক্ষা প্রতিরোধ শ্রেয়। কেননা, অপরাধ সংঘটনের পূর্বেই অপরাধ হতে না দেওয়া সবদিক হতেই উত্তম। তাই অপরাধ প্রতিরোধকল্পে নিম্নরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য।
(১) অপরাধ সংঘটনের সংবাদ পূর্বেই সংগ্রহ করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(২) অভ্যাসগত অপরাধীদের গতিবিধির নিয়ন্ত্রণ করা।
(৩) হাট-বাজারে ও অপরাধ প্রবণ এলাকায় নিরাপত্তামূলক পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করা।
(৪) গ্রাম-পুলিশ, শহর প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা কার্যকরী ও জোরদার করা।
(৫) কোনো ঘটনার সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনক্রমে জড়িত অপরাধী বা অপরাধীদেরকে সন্ধান করে গ্রেফতার করা।
(৬) সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা এবং গণসচেতনতা সৃষ্টি করা।
তাই বলা চলে-Crime prevention is better then detection. কেননা অপরাধ সংঘটিত হলে সেখানে একপক্ষ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং নানারূপ বিরম্বনার ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাই অপরাধ প্রবণতা রোধে প্রতিরোধই শ্রেয়।