⚖️ নিজের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার অধিকারগুলি কি কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 2 weeks ago
- Category: বাংলাদেশ দন্ডবিধি
-
আত্মরক্ষার অধিকার বলতে নিজের দেহ বা সম্পত্তি অন্যের আক্রমণ হতে রক্ষা করার অধিকারকে বুঝায়। কোন পরিস্থিতিতে এবং কোন পদ্ধতিতে কতটুকু পর্যন্ত এ ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে তা দন্ডবিধির ৯৬ ধারা হতে ১০৬ ধারায় আলোচিত হয়েছে।
ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষায় কৃত বিষয়সমূহ (দন্ডবিধির ৯৬ ধারা)।
ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগকালে কৃত কোনো কিছুই অপরাধ নয়।
শরীর ও সম্পত্তি সম্পর্কিত ব্যক্তিগত অধিকার (দন্ডবিধির ৯৭ ধারা)।
দন্ডবিধির ৯৯ ধারায় বর্ণিত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক ব্যক্তির-
প্রথমতঃ মানবদেহ ক্ষুন্নকারী যে কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে তার স্বীয় দেহ ও অন্য যে কোনো ব্যক্তির দেহের,
দ্বিতীয়তঃ চুরি, দস্যুতা, অনিষ্ট, অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশের অথবা চুরি, দস্যুতা, অনিষ্ট বা অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশের উদ্যোগের বিরুদ্ধে স্বীয় বা অপর কোনো ব্যক্তির অস্থাবর বা স্থাবর সম্পত্তির উপর প্রতিরক্ষা অধিকার থাকবে।
অপ্রকৃতিস্থ ইত্যাদি ব্যক্তির কাজের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার (দন্ডবিধির ৯৮ ধারা)।
যখন কোনো কাজ যা প্রকারন্তরে একটি বিশেষ অপরাধ বলে গণ্য হতো তা উক্ত কার্য সম্পাদনকারী ব্যক্তির তারুণ্য, অপরিণত বিবেক, অপ্রকৃতিস্থতা বা মাতাল হওয়ার কারণে অনুরূপ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হয় না, তখন প্রত্যেক ব্যক্তির উক্ত কাজটি অনুরূপ অপরাধ বলে গণ্য হবার বেলায় উক্ত কাজের বিরুদ্ধে যেরূপ ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকতো সেরূপ ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে। যেমন-
‘ক’ অপ্রকৃতিস্থতার কারণে ‘খ’ কে হত্যা করার উদ্যোগ নেয়, ‘ক’ কোনো অপরাধে দোষী বলে সাব্যস্ত হবে না, কিন্তু ‘ক’ অপ্রকৃতিস্ত থাকলে ‘খ’ যেরূপ ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন তদ্রুপ ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে।
যেসব কাজের জন্য প্রতিরক্ষার অধিকার নেই (দন্ডবিধির ৯৯ ধারা)।
পদাধিকার বলে সরল বিশ্বাসে সরকারী কর্মচারী কর্তৃক সম্পাদিত বা সম্পাদনের জন্য উদ্যোগকৃত কোনো কাজ বা আইনের দৃষ্টিতে যথাযথরূপে যুক্তিসংগত না হলেও, যুক্তিসংগতভাবে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের আশংকা সৃষ্টি করে না তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার থাকবে না।
পদাধিকার বলে সরল বিশ্বাসে কোনো সরকারী কর্মচারীর নির্দেশক্রমে কোনো কাজ সম্পাদন করলে বা সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে তা আইনের দৃষ্টিতে পুরোপুরি সমর্থিত না হলেও মৃত্যু অথবা গুরুতর আঘাতের যুক্তিসংগত আশংকার ক্ষেত্র ব্যতীত উক্ত কার্যের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার থাকবে না।
যেসব ক্ষেত্রে সরকারী কর্তৃপক্ষসমূহের আশ্রয় লাভের সময় থাকে সেসব ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে না।
আত্মরক্ষার অধিকারী আত্মরক্ষার জন্য যতটুকু ক্ষতি করা প্রয়োজন তার অধিক ক্ষতি পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই প্রয়োগ করতে পারবেন না।
ব্যাখ্যা-১
সরকারী কর্মচারী কর্তৃক তার পদমর্যাদায় কৃত বা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণকৃত কাজের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি উক্ত কাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তি অনুরূপ সরকারী কর্মচারী বলে তার জানা না থাকলে বা তার বিশ্বাস করার কারণ না থাকলে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার হতে বঞ্চিত হবে না।
ব্যাখ্যা-২
সরকারী কর্মচারীর নির্দেশে কৃত বা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণকৃত কাজের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার হতে বঞ্চিত হবে না, যদি না সে জানে বা তার বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, উক্ত কাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তি অনুরূপ নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছে বা যদি না অনুরূপ ব্যক্তি যে কর্তৃত্ব বলে উক্ত কাজ সংঘটন করে তা প্রকাশ করে অথবা তার নিকট লিখিত কর্তৃত্ব থাকার ক্ষেত্রে যদি না সে অনুরূপ কর্তৃত্ব চাহিবামাত্র পেশ করে।
যেক্ষেত্রে দেহের ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার মৃত্যু ঘটানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (দন্ডবিধির ১০০ ধারা)।
দেহের প্রতিরক্ষার জন্য পূর্ববর্তী শেষ ধারায় বর্ণিত বিধি নিষেধ সাপেক্ষে নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে আক্রমণকারীর মৃত্যু বা অন্য যেকোনো ক্ষতি সাধন করা যাবে-
প্রথমতঃ এরূপ আক্রমণ যা এমন যুক্তিসংগত আতংক সৃষ্টি করে যে, প্রকান্তরে মৃত্যুই হবে অনুরূপ আক্রমণের পরিণতি।
দ্বিতীয়তঃ এমন আক্রমণ যার পরিণতিতে গুরুতর জখম হওয়ার যুক্তিসংগত আশংকা থাকে।
তৃতীয়তঃ ধর্ষণের অভিপ্রায়ে আক্রমণ।
চতুর্থতঃ অপ্রকৃত বা অস্বাভাবিক কামলালসা চরিতার্থ করণের অভিপ্রায়ে আক্রমণ।
পঞ্চমতঃ মানুষ্য হরণ বা অপহরণের অভিপ্রায়ে আক্রমণ।
ষষ্ঠতঃ এমন অবস্থায় যদি কোনো ব্যক্তিকে অবৈধ আটক রাখার অভিপ্রায়ে আক্রমণ করা হয়, যে অবস্থায় মুক্তির জন্য কোনো সরকারী কর্তৃপক্ষের আশ্রয় লাভ করতে পারবে না বলে যুক্তিসংগত আশংকা থাকে।
যেক্ষেত্রে অনুরূপ অধিকার মৃত্যু ব্যতীত অন্য কোনো ক্ষতির জন্য প্রযোজ্য হয় (দন্ডবিধির ১০১ ধারা)।
পূর্বোক্ত ধারায় বর্ণিত অপরাধসমূহের ক্ষেত্র ব্যতীত দেহরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করে ইচ্ছাকৃতভবে আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটানোর জন্য প্রযোজ্য হবে না। তবে ৯৯ ধারায় বর্ণিত ব্যতীক্রম সমূহ সাপেক্ষে স্বেচ্ছায় মৃত্যু ঘটানো ব্যতীত আক্রমণকারীর অন্য যেকোনো ক্ষতিসাধন করা যাবে।
দেহের ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকারের আরম্ভ ও স্থিতিকাল (দন্ডবিধির ১০২ ধারা)।
দেহের ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অপরাধ সংঘটিত না হয়ে থাকলেও উক্ত অপরাধ সংঘটনের উদ্যোগ বা দেহ বিপন্নকারী যুক্তিসংগত আশংকা দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরম্ভ হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত দেহ বিপন্ন হওয়ার আশংকা অব্যাহত থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত উক্ত অধিকার বহাল থাকবে।
যেক্ষেত্রে সম্পত্তি সম্পর্কিত ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার মৃত্যু ঘটানোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য (দন্ডবিধির ১০৩ ধারা)।
৯৯ ধারায় উল্লিখিত বিধি নিষেধ সাপেক্ষে যে অপরাধ সংঘটনের বা সংঘটনের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষার অধিকার জন্মে এবং উক্ত অপরাধ যদি নিম্নে বর্ণিত প্রকারের অপরাধ হয় তাহলে সম্পত্তি রক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে ইচ্ছাকৃতভাবে অপরাধীর মৃত্যু অথবা অন্য যেকোনো ক্ষতি সাধন করা যাবে-
প্রথমতঃ দস্যুতা,
দ্বিতীয়তঃ রাত্রিকালীন সময়ে অপথে গৃহে প্রবেশ,
তৃতীয়তঃ বাসগৃহ বা সম্পত্তি সংরক্ষণের স্থানরূপে ব্যবহৃত হয় এমন ইমারত, তাবু বা জাহাজে অগ্নিকান্ডের সাহায্যে অনুষ্ঠিত ক্ষতি,
চতুর্থতঃ চুরি, অনিষ্ট বা গৃহে অনধিকার প্রবেশ যদি এমন অবস্থায় সংঘটিত হয় যে অবস্থায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ না করলে এর ফলশ্রুতিতে মৃত্যু বা গুরুতর জখমের যৌক্তিক আশংকা থাকে।
যেক্ষেত্রে অনুরূপ অধিকার মৃত্যু ব্যতীত অন্য কোনো ক্ষতি সাধনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (দন্ডবিধির ১০৪ ধারা)।
যদি পূর্বোক্ত ধারায় বর্ণিত না হয়ে অন্য যে কোনো প্রকারের চুরি, অনিষ্ট বা অপরাধজনক অনধিকার প্রবেশ সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটনের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষার অধিকার জন্মে, সে অপরাধের ক্ষেত্রে ৯৯ ধারায় বর্ণিত বিধি নিষেধ সাপেক্ষে মৃত্যু ঘটানো ব্যতীত অন্য যে কোনো ক্ষতি সাধন করা যাবে।
সম্পত্তি সম্পর্কিত ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকারের আরম্ভ ও স্থিতিকাল (দন্ডবিধির ১০৫ ধারা)।
সম্পত্তি সম্পর্কিত ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার সম্পত্তির ক্ষতির আশংকা দেখা দেয়ার সাথে সাথে শুরু হবে।
চুরির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার উক্ত সম্পত্তি সহকারে অপরাধীর পলায়ন না করা বা সরকারী কর্তৃপক্ষ সমূহের সাহায্য লাভ না করা বা উক্ত সম্পত্তি উদ্ধার না করা পর্যন্ত বলবৎ থাকে।
দস্যুতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার অপরাধী কর্তৃক কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো বা আঘাত প্রদান বা অবৈধ অবরোধ করা বা এর উদ্যোগ অব্যাহত থাকা পর্যন্ত বলবৎ থাকে।
অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ বা ক্ষতি সম্পর্কিত অপরাধের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার অপরাধকারী কর্তৃক অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ বা অনিষ্ট সাধন অব্যাহত থাকা পর্যন্ত বলবৎ থাকে।
রাত্রিবেলায় সিধেল চুরির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার যে সময় পর্যন্ত গৃহে অনধিকার প্রবেশ অব্যাহত থাকে, সে সময় পর্যন্ত বলবৎ থাকে।
নিরাপরাধ ব্যক্তির ক্ষতিসাধন হওয়ার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে মারাত্বক আক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার (দন্ডবিধির ১০৬ ধারা)।
যৌক্তিকভাবে মৃত্যু ভীতি সৃষ্টি করে, এরূপ আক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে যদি কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তির ক্ষতি হওয়ার ঝুকি থাকে তাহলে তিনি ঝুকি নিয়েই আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। যেমন-
একদল উচ্ছৃংখল জনতা ‘ক’ কে হত্যা করার উদ্যোগ নেয়। উক্ত উচ্ছৃংখল জনতার উপর গুলি না চালিয়ে সে তার ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারে না এবং ঐ জনতার সাথে মিশে যাওয়া ছোট ছোট শিশুর ক্ষতির ঝুকি না নিয়ে গুলি চালাতে পারে না। অনুরূপভাবে গুলি চালিয়ে কোনো শিশুর ক্ষতি করলেও সে কোনো অপরাধ করেনি।