⚖️ ফরেনসিক সাইন্স (Forensic Science) কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 4 days ago
  • Category: অপরাধ বিজ্ঞান
তদন্তকারী অফিসারকে অপরাধ তদন্তে বিজ্ঞানের সহায়তা নিতে হয়। তাই বিজ্ঞান ভিত্তিক অপরাধ তদন্তে পুলিশের গবেষণাগার রয়েছে। অপরাধ বিজ্ঞানী বার্টিলন, হ্যান্স গ্রস, গ্যাল্টন, হেনরী, লোকার্ড, ককেল প্রমুখ তাদের আবিস্কৃত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তদন্ত কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক পুলিশ বিজ্ঞানের সূচনা করেছে। অপরাধ তদন্তকালে ঘটনাস্থল ও পারিপার্শ্বিক দৃশ্যাবলির আলোকে তদন্তকারী অফিসার কার্যক্রম শুরু করেন। তবে দেখার ও বুঝার মধ্যে ভূল থাকতে পারে তাই ঘটনাস্থলে প্রপ্ত আলামত, বস্তু সাক্ষ্য  ও অন্যান্য ক্লু সমূহ যথাযথ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু এইগুলি শুধুমাত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করলেই চলবে না, এই সম্পর্কে বিশ্লেষণ ও গবেষণালব্ধ ফলাফল আদালতে পৌছানো জরুরী। অপরাধ তদন্তে বিজ্ঞানের যে শাখা উল্লিখিত বিশ্লেষণ ও গবেষণা করে আদালতে বিচার কার্যে সহায়তার জন্য সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করে থাকে, তাকেই ফরেনসিক সাইন্স (Forensic Science) বলা হয়। পুলিশের এই বিজ্ঞান গবেষণাগারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা বিশারদ (Expert) নিয়োজিত আছেন। তারাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দিয়ে থাকেন। মামলার বিচারকালে বিজ্ঞ আদালতে বিশেষজ্ঞ বা বিশারদ (Expert) এর মতামত সাক্ষ্য আইনের ৪৫ ধারা মোতাবেক গ্রহণীয়। অপরাধ ও অপরাধীকে সনাক্ত করণের উদ্দেশ্যে পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জীববিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা ইত্যাদি বিজ্ঞানের আধুনিক পদ্ধতি, যন্ত্রপাতি ও জ্ঞান অপরাধ বিজ্ঞানের যে শাখায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেই শাখাকে ক্রিমিন্যালিস্টিক্স বলা হয়। দক্ষ তদন্তকারী অফিসারের নিকট ক্রিমিন্যালিস্টিক্স অত্যন্ত কার্যকর ও নির্ভরশীল সয়াহক বিজ্ঞান। 

বাংলাদেশ পুলিশের ফরেনসিক বিজ্ঞানের ও ক্রিমিন্যালিস্টিক্সের যাবতীয় কার্যক্রম সিআইডি এর কর্তৃত্বাধীনে চালু আছে। ফরেনসিক শাকার বিভিন্ন ইউনিটগুলি হলো-

(১) হস্তলিপি শাখা,

(২) আংগুলাংক শাখা।

(৩) ফটোগ্রাফী শাখা,

(৪) অণুবিশ্লেষণ শাখা,

(৫) ব্যালিস্টিক শাখা,

(৬) জালনোট শাখা, 

(৭) পদচিহ্ন শাখা,

(৮) আলোক রশ্মি শাখা, 

(৯) রাসায়নিক পরীক্ষাগার এবং

(১০) DNA ল্যাব। 

          এই শাখাগুলি সবই সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকায় অবস্থিত, সীমিত আকারে চট্টগ্রামেও চালু আছে। ফরেনসিক শাখার বিভিন্ন ইউনিটে আলামত ইত্যাদি বিশেষ প্যাকিং এর মাধ্যমে চাহিদানুসারে পাঠালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পূর্বক মতামত প্রদান করে থাকে। 

 

নিম্নে ফরেনসিক শাখার বিভিন্ন ইউনিটের সহায়তা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ 

(১) হস্তলিপি শাখাঃ এই শাখা হতে তদন্তকারী অফিসারের চাহিদা মোতাবেক বিতর্কিত লেখা বা স্বাক্ষর সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করতে পারে এবং বিতর্কিত লেখা বা স্বাক্ষরটি সন্দেহভাজন ব্যক্তির লেখা বা স্বাক্ষরের সাথে মিল আছে কিনা বলে দিতে পারে। ফলে জালিয়াতকারী সনাক্ত হতে পারে। 

 

(২) আংগুলাংক শাখাঃ ইহাকে Fingerprint Bureau (FPB) বলা হয়। এখানে অপরাধী বা সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদের আংগুলের ছাপের ভিত্তিত্তে পুলিশ রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়। এই শাখা হতে তদন্তকারী অফিসারের চাহিদা মোতাবেক বিতর্কিত আংগুলের ছাপ বা টিপসহি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করতে পারে এবং বিতর্কিত আংগুলের ছাপটির সন্দেহজনক ব্যক্তির আংগুলের ছাপের সাথে মিল আছে কিনা তা বলে দিতে পারে। 

 

(৩) ফটোগ্রাফী শাখাঃ এই সংস্থার সদস্যরা সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটের সঙ্গে থেকে কাজ করে থাকে। ঘটনাস্থল ও পারিপার্শ্বিক সকল স্থাপনা ও পরিবেশের ছবি ধারণ করে তদন্তকারী অফিসারকে সাহায্য করতে পারে। 

 

(৪) অণুবিশ্লেষণ শাখাঃ এই শাখায় সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্র এবং ইলেক্ট্রনিক অণুবিক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে তদন্তকারী অফিসারের চাহিদা মতো ঘটনাস্থল বা তার আশপাশ হতে সংগৃহীত কোনো ধাতব পদার্থ বা যন্ত্রের কাটা দাগ, ধুলাবালি, পশম, আঁশ, চুল, কাগজ, কালি, রক্তের দাগ, পেন্সিলের লেখা, গুলি, গুলির খোসা, ফায়ারিং পিন ইত্যাদির বস্তুকণা অণুবিশ্লেষণ করে ২০ গুণ বর্ধিতক্রমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মামলা সংক্রান্তে সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করতে পারে। 

 

(৫) ব্যালিস্টিক শাখাঃ এই শাখার বিশেষজ্ঞগণ তদন্তকারী অফিসারের চাহিদা মোতাবেক আগ্নেয়াস্ত্র কার্যকরী কিনা, কোনো বুলেট নির্দিষ্ট গান হতে ফায়ার করা হয়েছে কিনা, গুলির খোসা নির্দিষ্ট বন্দুক হতে ছোড়া হয়েছে কিনা বা একাধিক গুলির খোসা একটি নির্দিষ্ট বন্দুকে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, আগ্নেয়াস্ত্রে লেগে থাকা পাউডার গানপাউডার কিনা, উক্ত পাউডার কোনো নির্দিষ্ট কার্তুজের কিনা, কতো সময় পূর্বে কতো দূর হতে ফায়ার করা হয়েছিলো ইত্যাদি নানা বিষয়ে এবং জব্দকৃত আগ্নেয়াত্রে অপরাধীর আংগুলের ছাপ আছে কিনা পরীক্ষায় জানা যায়। 

 

(৬) জালনোট শাখাঃ এই শাখায় জালনোট বা মুদ্রা আসল নাকি মেকি সে সম্পর্কে মতামত প্রদান করে থাকে। 

 

(৭) পদচিহ্ন শাখাঃ এই শাখায় মামলার ঘটনাস্থল বা আশেপাশে প্রাপ্ত মানুষের পায়ের ছাপ, পরিহিত স্যান্ডেল, জুতা ইত্যাদি পরীক্ষা করে মতামত প্রদান পূর্বক অপরাধী সনাক্তকরণে তদন্তকারী অফিসারকে সাহায্য করে থাকে। 

 

(৮) আলোক রশ্মি শাখাঃ বিভিন্ন আলোক রশ্মি যেমন- এক্স-রে, অবলোহিত রশ্মি, অতিবেগুনী রশ্মি ইত্যাদি পরীক্ষাগারে ব্যবহার করে তদন্তকারী অফিসারকে নানাবিধ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করে থাকে। যার ফলে ঘটনার সুরাহা হয় এবং অপরাধী চিহ্নিত হয়। 

 

(৯) রাসায়নিক পরীক্ষাগারঃ ফরেনসিক সাইন্সে রাসায়নিক পরীক্ষাগারের গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে ভিসেরা, বিষ, ভেজাল রাসায়নিক তরল পদার্থ, ভেজাল খাদ্য, সিমেন্ট, নারকোটিক্স ও মাদকদ্রব্য, চুল, রক্ত, বীর্য, লালা ইত্যাদি পরীক্ষা করে সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করে তদন্তকারী অফিসারকে সাহায্য করে থাকে। 

 

(১০) DNA ল্যাবঃ এই ল্যাবে ধর্ষণের আলামত, অবৈধ গর্ভধারণের ক্ষেত্রে পিতৃত্ব সনাক্তকরণ এবং অপরিচিত মৃত ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পূর্বক মতামত প্রদান করে থাকে।           

Google News Google News
Google News এ বিরাট বাজারের সকল পোস্ট পেতে ক্লিক করে ফিডটি ফলো করুন