⚖️ অভিযোগপত্র বা Chargesheet (CS) কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 1 week ago
  • Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
কোনো মামলা তদন্ত করিয়া সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করিয়া থাকেন। অভিযোগপত্রে আসামীদের ও সাক্ষীদের নাম, ঠিকানা, অপরাধের প্রকৃতি, ধৃত ও পলাতক আসামীর সংখ্যা, তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম, আসামীর প্রাক চরিত্র, আসামী অন্য আরও কোনো মামলার সাথে জড়িত কিনা ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। কোনো উর্ধ্বতন পুলিশ অফিসার তদন্তে তত্বাবধায়ণ করিয়া থাকিলে অভিযোগপত্রে তাহার সুপারিশ থাকে। তদন্তের বিবরণ সম্বলিত কেস ডায়রীও অভিযোগপত্রের সাথে আদালতে দাখিল করিতে হয়। আদালত নথিপত্র, কেস ডায়রী, অভিযোগপত্র ইত্যাদি গ্রহণ করিয়া আসামী পলাতক থাকিলে ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৪ ধারা মোতাবেক গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করিতে পারেন। 

 

মনও হইতে পারে যে, এজাহারে ১০ জন আসামীর নাম ছিল কিন্তু পুলিশ তদন্ত করিয়া ৬ জন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করিয়াছেন এবং বাকী ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন নাই অথবা এজাহার নামীয় সকল আসামীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৪ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করিয়াছেন কিন্তু এজাহারে দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারার অভিযোগ ছিল। এইসব ক্ষেত্রে অনেক সময় সংবাদদাতা বা বাদী নারাজী দরখাস্ত দাখিল করিয়া থাকেন। তখন আদালত নথিপত্র, কেস ডায়রী, নারাজির দরখস্ত ইত্যাদি পর্যালোচনাক্রমে সন্তুষ্ট হইলে যাহাদের নাম অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত হিসাবে দাখিল করা হয় নাই তাহাদের বিরুদ্ধ্বে অপরাধ সরাসরি আমলে নিতে পারেন এবং যেইক্ষেত্রে দন্ডবিধির ৩২৪ ধারার অভিযোগপত্র দাখিল করা হইয়াছে সেইক্ষেত্রে আসামীর বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩২৬ ধারার অপরাধ আমলে নিতে পারেন। অথবা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (৩খ) ধারা অনুসারে আরও তদন্তের (Further Investigation) জন্য থানায় প্রেরণ করিতে পারেন। 

 

উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত সমূহঃ 

(১) ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারা অনুসারে দায়েরকৃত অভিযোগপত্র অবৈধ বলিয়া ঘোষণা করার কোনো ক্ষমতা ম্যাজিষ্ট্রেটের নাই। তবে পুলিশ প্রতিবেদন পর্যলোচনা করিয়া ম্যাজিষ্ট্রেট যদি সন্তুষ্ট না হন তাহা হইলে তিনি আরও তদন্তের (Further Investigation) নির্দেশ দিতে পারেন (৩১ ডিএলআর ৭০)।  

 

(২) পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করার পরও পরবর্তীতে যে কোনো সংখ্যক সম্পূরক (Supplementary) অভিযোগপত্র দাখিল করিতে পারিবেন (৩৮ ডিএলআর ১২৪)।    

 

(৩) অভিযোগ আমলে নেওয়ার পূর্বে আরও তদন্তের জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করিতে পারেন কিন্তু পুলিশ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করিয়া অপরাধ আমলে নেওয়ার পর আরও তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিতে পারেন না। কিন্তু আরও  তদন্তের পরে পূর্বে অব্যাহতি প্রাপ্ত আসামীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অভিযোগপত্র দাখিল করিতে পারেন (৪ বিএলডি ২০৬ এডি)।


(৪) ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারা অনুসারে দাখিলকৃত পুলিশ রিপোর্টকে অবৈধ ঘোষণা করার কোনো ক্ষমতা ফৌজদারী কার্যবিধি ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রদান করে নাই। এই বিধিতে যে বিধান দেওয়া হইয়াছে তাহা হইতেছে পুলিশ রিপোর্ট পর্যালোচনা করিয়া ম্যাজিষ্ট্রেট আরও তদন্তের নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন (৩১ ডিএলআর ৭০ এসসি)। 

 

(৫) সংবাদদাতা কর্তৃক দাখিলকৃত নারাজির আবেদন ম্যাজিষ্ট্রেট নাকচ করেন কিন্তু দায়রা জজ ইহা মঞ্জুর করিয়া এবং তিনি শুধু অধিকতর তদন্তের আদেশই দেন না, সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমন আইনের অধীন চার্জশীট দাখিলের জন্য বিশেষভাবে নির্দেশও দেন। অধিকতর তদন্তের আদেশ আইনসঙ্গগত কিন্তু চার্হশীট দাখিলের আদেশ স্পষ্টভাবে আদালতের এখতিয়ার বহির্ভুত (৪৬ ডিএলআর ৬৭ এডি)।

 

(৬) অভিযোগপত্র দাখিলের মাধ্যমে তদন্তের কাজ শেষ হয় এবং উহা পুনরায় শুরু করা যায় না। পুলিশ চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করিলে ম্যাজিষ্ট্রেট আরও তদন্তের (Further Investigation) নির্দেশ প্রদান করিতে পারেন। পুণঃতদন্ত (Re- Investigation) ইতিমধ্যে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রকে বাতিল করে কিন্তু আইন এইরূপ কার্যক্রমকে অনুমতি দেয় না (২৭ ডিএলআর ৩৪২)। 

 

(৭) চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর অভিযোগপত্র দাখিল করার ক্ষমতা পুলিশের আছে (১৪ ডিএলআর ডব্লিউ পি)। 

 

(৮) পুলিশ কতিপয় ব্যক্তিকে আসামী না দেখাইয়া ফৌজদারী  কার্যবিবির ১৭৩ ধারার প্রতিবেদন দাখিল করেন। ম্যাজিষ্ট্রেট উহা প্রত্যাখান করিয়া তাহাদেরকে তলব করেন। ম্যাজিষ্ট্রেটের এইরূপ ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না (১৯ ডিএলআর ৪২৬ এসপি)।