⚖️ অপরাধের সাধারণ ব্যতিক্রম সমূহ কি কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 2 weeks ago
- Category: বাংলাদেশ দন্ডবিধি
-
ফৌজদারী কার্যবিধি এবং জেনারেল ক্লাসেস এ্যাক্ট অনুসারে অপরাধ বলতে বর্তমান বলবৎ যে কোনো আইনে দন্ডযোগ্য যে কোনো কার্য বা কার্যবিরতিকে বুঝায়। তবে সরল বিশ্বাসে সম্পাদন, কোনো ব্যক্তি বিশেষ কর্তৃক সম্পাদন, তথ্যজনিত ভূল, আইনগত অধিকার, আত্মরক্ষার অধিকার ইত্যাদির কারণে উক্ত কার্য বা কার্যবিরতি অপরাধ হিসেবে গণ্য নাও হতে পারে।
যেসব ক্ষেত্রে দন্ডযোগ্য কোনো কার্য অপরাধ নয়ঃ
যেসব ক্ষেত্রে কোনো দন্ডনীয় কার্য বা কার্যবিরতি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না, তা দন্ডবিধির ৭৬ হতে ৯৫ ধারায় সাধারণ ব্যতিক্রম হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
আইন বলে বাধ্য বা ভূল ধারণাবশত নিজেকে আইন বলে বাধ্য বলিয়া বিশ্বাসকারী ব্যক্তি বিশেষ কর্তৃক সম্পাদিত কার্য (দন্ডবিধির ৭৬ ধারা)।
যে ব্যক্তি কোনো কিছু সম্পাদন করার জন্য আইনগতভাবে বাধ্য অথবা তথ্যের ভূল ধারণাবশত, আইনের ভূলধারণাবশত নয়, সরল বিশ্বাসে নিজেকে কোনো কিছু সম্পাদন করার জন্য আইন বলে বাধ্য বলিয়া বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি উক্ত কার্য সম্পাদন করলে উহা অপরাধ নয়। যেমন-
কনস্টবল ‘ক’ তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে আইন বলে কোনো জনতার উপর গুলি চালায়। এক্ষেত্রে কনস্টবল ‘ক’ কোনো অপরাধ করেনি।
আদালতের কর্মকর্তা ‘প’ উক্ত আদালত কর্তৃক ‘ফ’ কে গ্রেফতার করার জন্য আদিষ্ট হয়ে এবং যথাযথ তদন্তের পর ‘খ’ কে ‘ফ’ মনে করে গ্রেফতার করেন। এক্ষেত্রে ‘প’ কোনো অপরাধ করেনি।
বিচার সম্পর্কিত কার্য পরিচালনাকালে বিচারকের কার্য (দন্ডবিধির ৭৭ ধারা)।
যদি বিচারক বিচার সম্পর্কিত কার্য পরিচালনাকালে আইনগতভাবে তা প্রদত্ত হয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন তাহলে এরূপ যে কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সম্পাদিত কোনো কিছুই অপরাধ হবে না।
আদালতের রায় বা আদেশের অনুসরণে সম্পাদিত কার্য (দন্ডবিধির ৭৮ ধারা)।
আদালতের রায় বা আদেশের অনুসরণে বা দাবীক্রমে সম্পাদিত কোনো কার্যই অনুরূপ রায় বা আদেশ বলবৎ থাকাকালে সম্পাদিত হলে অপরাধ নয়, উক্ত আদালতের অনুরূপ রায় বা আদেশ প্রদান করার কোনো অধিক্ষেত্র না থাকলেও। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত কার্য সম্পাদনকারী ব্যক্তি সরল বিশ্বাসে বিশ্বাস করেন যে, উক্ত আদালতের অনুরূপ অধিক্ষেত্র ছিলো।
আইন সমর্থিত বা ভূল ধারণাবশত নিজেকে আইন সমর্থিত বলে বিশ্বাসকারী ব্যক্তি কর্তৃক সম্পাদিত কার্য (দন্ডবিধির ৭৯ ধারা)।
আইন দ্বারা সমর্থিত ব্যক্তি কোনো কিছু সম্পাদনের জন্য বা যে ব্যক্তি তথ্যের ভূল ধারণাবশত তবে আইনের ভূল ধারণাবশত নয়, নিজেকে সরল বিশ্বাসে আইন দ্বারা সমর্থিত বলে বিশ্বাস করে তাহলে এরূপ ব্যক্তি কর্তৃক সম্পাদিত কোনো কিছু অপরাধ নয়। যেমন-
‘ক’ নামক কোনো ব্যক্তি ‘খ’ কে এমন একটি কার্য সম্পাদন করতে দেখে যা ‘ক’ এর নিকট খুন বলে প্রতীয়মান হয়। ‘ক’ সরল বিশ্বাসে তার স্বীয় সর্বোচ্চ বিবেচনায় খুনীকে গ্রেফতার করার জন্য আইন বলে সকল লোকের প্রতি অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট হাজির করার উদ্দেশ্যে ‘খ’ কে আটক করে। এক্ষেত্রে ‘ক’ কোনো অপরাধ করেনি যদিও এরূপ প্রমাণিত হতে পারে যে, ‘খ’ আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে কাজটি করেছিল।
আইনানুগ কার্য সম্পাদনকালে দূর্ঘটনা (দন্ডবিধির ৮০ ধারা)।
দূর্ঘটনা বা দূর্ভাগ্যবশত এবং কোনো প্রকার অপরাধমূলক উদ্দেশ্য বা সংবাদ ব্যতিরেকে আইনানুগ মাধ্যমে এবং যথাযথ যত্ন ও সতর্কতার সাথে সম্পাদিত কোনো আইনসম্মত কাজই অপরধ নয়। যেমন-
‘ক’ একটি কুঠার দিয়ে কাজ করছিল এবং উহার মাথা উড়ে গিয়ে সন্নিকটে দন্ডায়মান এক ব্যক্তিকে নিহত করে। এক্ষেত্রে যদি ‘ক’ এর যথাযথ সতর্কতার অভাব না থেকে থাকে তাহলে তার কাজ মার্জনীয় হবে এবং কোনো অপরাধ হবে না।
অপরাধমূলক অভিপ্রায় ব্যতিরেকে ক্ষতি নিবারণকল্পে সম্পাদিত কাজ (দন্ডবিধির ৮১ ধারা)।
ক্ষতি সাধনের অপরাধজনক অভিপ্রায় ব্যতিরেকে সরল বিশ্বাসে যদি কোনো ব্যক্তি বা সম্পত্তির ক্ষতি এড়ানোর উদ্দেশ্যে অন্য কোনো ক্ষতি হতে পারে এরূপ সম্ভাবনা জেনেও যদি কোনো কাজ করা হয়, তাহলে উক্ত কাজ অপরাধ হবে না।
ব্যাখ্যাঃ অনুরূপ ক্ষেত্রে যে ক্ষতি নিবারণ বা এড়ানোর প্রয়োজন তা এরূপ প্রকৃতির বা এরূপ আসন্ন ছিলো কিনা যাতে কোনো ক্ষতি করার সম্ভাবনা রয়েছে জেনেও উক্ত কাজ করা সমর্থনযোগ্য বা উহা করার ঝুকি নেয়া মার্জনীয় হতো, তা তথ্যের প্রশ্ন।
একটি জাহাজের কাপ্তান ‘ক’ হঠাৎ এবং তার নিজের কোনো দোষ বা ত্রুটি ব্যতিরেকে নিজেকে এরূপ অবস্থায় পতিত দেখতে পান যে, তিনি তার জাহাজ থামানোর পূর্বে জাহাজের গতিপথ পরিবর্তন না করলে ৩০ জন যাত্রী সহ একটি নৌকা ‘খ’ কে অনিবার্যভাবে ডুবিয়ে ফেলবেন কিন্তু গতিপথ পরিবর্তন করে সরল বিশেয়াসে ‘খ’ নৌকার যাত্রীদের রক্ষার জন্য ২জন যাত্রীসহ একটি নৌকা ‘গ’ কে ডুবিয়ে ফেলেন। এক্ষেত্রে তিনি কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবেন না। অর্থাৎ সরল বিশ্বাসে বড় ক্ষতির হাত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছোট ক্ষতির কাজ করলে তার দ্বারা কোনো অপরাধ হয় না।
‘ক’ একটি ব্যাপক অগ্নিকান্ডে উহার বিস্তৃতি নিবারণকল্পে আশেপাশের গৃহসমূহ ভেঙ্গে ফেলে। মানব জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার্থে সে সরল বিশ্বাসে একাজ করে। এক্ষেত্রে ‘ক’ কোনো অপরাধ করেনি।
৯ (নয়) বৎসরের কম বয়স্ক শিশুর কার্য (দন্ডবিধির ৮২ ধারা)।
৯ (নয়) বৎসরের কম বয়স্ক শিশু কর্তৃক কৃত কোনো কিছুই অপরাধ নয়।
৯ (নয়) বৎসরের অধিক ও ১২ (বার) বৎসরের কম বয়স্ক অপরিণত বোধশক্তি সম্পন্ন শিশুর কার্য (দন্ডবিধির ৮৩ ধারা)।
৯ (নয়) বৎসরের অধিক ও ১২ (বার) বৎসরের কম বয়স্ক এমন শিশু কর্তৃক কৃত কোনো কিছুই অপরাধ নয় যদি উক্ত অপরাধের ব্যাপারে যে শিশুর বোধশক্তি যথেষ্ট পরিপক্কতা লাভ করেনি যারফলে স্বীয় আচরণের প্রকৃতি ও পরিণতি বিচার করতে পারে।
অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির কার্য (দন্ডবিধির ৮৪ ধারা)।
এমন কোনো ব্যক্তি কর্তৃক কৃত কোনো কিছুই অপরাধ নয় যে ব্যক্তি অনুরূপ অপরাধ সংঘটনকালে অপ্রকৃতিস্থতার কারণে কার্যটির প্রকৃতি সম্পর্কে বুঝতে অসমর্থ অথবা আইনের দৃষ্টিতে ভূল বা আইনের পরিপন্থী কোনো কাজ করেছে বলে তা জানার অযোগ্য।
অনিচ্ছাকৃত মাতাল হওয়ার কারণে বিচারশক্তি রহিত ব্যক্তির কার্য (দন্ডবিধির ৮৫ ধারা)।
কোনো ব্যক্তি কোনো কাজ সম্পাদনকালে অতিশয় মাতাল অবস্থায় থাকার কারণে উক্ত কাজের প্রকৃতি অথবা সে যে কাজ করছে তা ভূল বা আইনের পরিপন্থী বলে চিনতে অসমর্থ হলে তার দ্বারা কৃত কোনো কিছুই অপরাধ নয়। তবে শর্ত থাকে যে, মাতাল করার উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বস্তু তার অজ্ঞাতে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে পরিবেশন করা হয়েছিলো।
যে অপরাধের ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্দেশ্য বা জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে মাতাল ব্যক্তি কর্তৃক এরূপ অপরাধ সংঘটন (দন্ডবিধির ৮৬ ধারা)।
যেসব ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ জ্ঞান বা উদ্দেশ্য সহকারে করা না হলে কোনো কাজ অপরাধ বলে গণ্য হয় না সেসব ক্ষেত্রে যদি না উক্ত মাতাল হওয়া তার অজ্ঞাতে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়ে থাকে তবে উক্ত ব্যক্তি মাতাল না হলে যেরূপভাবে বিবেচিত হতেন, এরূপভাবেই বিবেচিত হবেন।
মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত ঘটানোর জন্য অভিপ্রেত নয় এবং অনুরূপ সম্ভাবনাপূর্ণ বলে অজ্ঞাত কাজ সম্মতি সহকারে সম্পাদন করা (দন্ডবিধির ৮৭ ধারা)।
মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত ঘটানোর জন্য অভিপ্রেত নয় এবং সংগঠক মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত ঘটানোর সম্ভাবনাপূর্ণ বলে জ্ঞাত নন এমন কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি সহ্য করার জন্য প্রকাশ্য বা পরোক্ষভাবে সম্মতি প্রদানকারী ১৮ (আঠার) বৎসরের অধিক বয়স্ক কোনো ব্যক্তির প্রতি কোনো ক্ষতি সাধনের কারণে বা সংগঠক কর্তৃক ক্ষতি সাধনের জন্য অভীষ্ট হওয়ার কারণে অথবা অনুরূপ ক্ষতির ঝুকি গ্রহণের সম্মতি প্রদানকারী অনুরূপ কোনো ব্যক্তির প্রতি ক্ষতি সাধন করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংগঠকের জানা থাকার অজুহাতেই তা অপরাধ নয়। যেমন-
ক এবং খ আনন্দের জন্য পরস্পর তরবারী খেলায় সম্মত হয়। অসাধুতার ক্ষেত্র ব্যতিরেকে অনুরূপ তরবারী খেলার সময় ঘটতে পারে এরূপ সম্ভাব্য যে কোনো ক্ষতি বহনে প্রত্যেকের সম্মতি রয়েছে বলে বুঝায় এবং যদি ‘ক’ সুন্দরভাবে উক্ত ক্রিয়া অনুষ্ঠানকালে ‘খ’ কে আঘাত করে তাহলে ‘ক’ কোনো অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে না।
মৃত্যু ঘটানোর জন্য অভিপ্রেত নয় এমন কাজ ব্যক্তি বিশেষের উপকার্থে সরল বিশ্বাসে সম্মতি সহকারে সম্পাদন (দন্ডবিধির ৮৮ ধারা)।
মৃত্যু ঘটানোর অভিপ্রায়ে নয়, উপকার করার অভিপ্রায়ে যে ব্যক্তির ক্ষতি সাধন করা হয় এবং যে ব্যক্তি কোনো ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে বা বহনের নিমিত্তে বা কোনো ক্ষতির ঝুকি গ্রহণের জন্য বা পরোক্ষভাবে সম্মতি দান করেছে সে ব্যক্তির প্রতি কোনো ক্ষতি সাধনের কারণে বা সংঘঠনের জন্য অভিপ্রেত হওয়ার কারণে বা যে ক্ষতি সংগঠক কর্তৃক সংঘঠনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংগটকের জানা থাকে তবে সে ক্ষতি অপরাধ নয়।
যদি চিকিৎসক ‘ক’ একটি বিশেষ অস্ত্রোপচারের ফলে অসুস্থ ‘খ’ এর মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে জেনে, তবে ‘খ’ এর মৃত্যু কামনা না করে এবং সরল বিশ্বাসে ‘খ’ এর মঙ্গলের জন্য ‘খ’ এর সম্মতিক্রমে ‘খ’ এর উপর উক্ত অস্ত্রোপচার করেন তাহলে এর দ্বারা ‘ক’ কোনো অপরাধ করেননি।
অভিভাবক কর্তৃক বা তার সম্মতিক্রমে শিশু বা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির মঙ্গলার্থে সরল বিশ্বাসে কৃত অপরাধ (দন্ডবিধির ৮৯ ধারা)।
১২ (বার) বৎসরের কম বয়স্ক বা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির মঙ্গলার্থে উক্ত ব্যক্তির অভিভাবক বা আইনানুগ তত্বাবধানকারী কোনো ব্যক্তি কর্তৃক বা তার প্রকাশ্য বা পরোক্ষ সম্মতিক্রমে সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কিছুই উক্ত ব্যক্তির প্রতি যে ক্ষতি সাধন করতে পারে তার জন্য কিংবা সংগঠক কর্তৃক তৎপ্রতি যে ক্ষতি অভীষ্ট হয় সে ক্ষতির কারণে বা তৎপ্রতি যে ক্ষতি সাধিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংগটকের জানা না থাকে সে ক্ষতির কারণে কোনো অপরাধ হয় না। তবে শর্ত থাকে যে,
প্রথমতঃ এ ব্যতিক্রম ইচ্ছাকৃতভবে মৃত্যু ঘটানোর প্রচেষ্টার প্রতি প্রযোজ্য হবে না।
দ্বিতীয়তঃ এ ব্যতিক্রম এমন কিছুই সম্পাদনের প্রতি প্রযোজ্য হবে না, যা মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত নিবারণ বা কোনো গুরুতর পীড়া বা পঙ্গুত্ব নিরাময় করার কাজ ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে মৃত্যু ঘটাতে পারে উক্ত কর্ম সম্পাদনকারী ব্যক্তি তা জানে।
তৃতীয়তঃ এ ব্যতিক্রম স্বেচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত প্রদান বা গুরুতর আঘার প্রদানের প্রচেষ্টার প্রতি প্রযোজ্য হবে না, যদি না উহা মৃত্যু বা গুরুতর আঘার নিবারণ করা কিংবা কোনো গুরুতর পীড়া বা পঙ্গুত্ব নিরাময়ের উদ্দেশ্যে সম্পাদিত হয়।
চতুর্থতঃ এ ব্যতিক্রম এমন কোনো অপরাধ সংঘটনের সহায়তায় প্রযোজ্য হবে না, যে অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে উক্ত ব্যতিক্রম প্রযোজ্য নয়। ক তার শিশুর মঙ্গলার্থে তার শিশুর সম্মতি ব্যতিরেকে একজন চিকিৎসক দ্ব্বারা পিত্তথলি হতে পাথর বাহির করানোর উদ্দেশ্যে তার শিশুকে অস্ত্রোপচার করায়। ক এর জানা ছিলো যে, উক্ত অস্ত্রোপচারের ফলে শিশুটির মৃত্যু ঘটতে পারে, কিন্তু শিশুটিকে মারার অভিপ্রায়ে কাজটি করা হয়নি। যেহেতু শিশুটিকে নিরোগ করাই ছিলো তার উদ্দেশ্য সেহেতু এ ক্ষেত্রে ক এর কাজ ব্যতিক্রমের আওতাধীন হবে।
ভীতি বা ভ্রান্ত ধারণার অধীনে প্রদত্ত সম্মতি (দন্ডবিধির ৯০ ধারা)।
যদি ক্ষতির ভয়ে বা তথ্যের ভ্রান্ত ধারণার কারণে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক সম্মতি প্রদত্ত হয় এবং যদি উক্ত কার্য সম্পাদনকারী ব্যক্তি জানে বা তার বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, উক্ত সম্মতি অনুরূপ ভীতি বা ভ্রান্ত ধারণার ফলে প্রদত্ত হয়েছিলো তাহলে অথবা যদি সম্মতি এরূপ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত হয় যে ব্যক্তি অপ্রকৃতিস্থতা বা অতিশয় মাতাল থাকার কারণে সে যেটাতে সম্মতি প্রদান করে তার প্রকৃতি বা পরিণতি হৃদয়ঙ্গম করতে অক্ষম তাহলে অথবা প্রসঙ্গের পরিপন্থী বলে প্রতীয়মান না হলে যদি উক্ত সম্মতি ১২ (বার) বৎসরের কম বয়স্ক কোনো ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত হয় তাহলে কোনো সম্মতি অত্র বিধির কোনো ধারায় অভিষ্ট কোনো সম্মতি বলে গণ্য হবে না।
যে সকল কাজ সাধিত ক্ষতি হতে স্বতন্ত্রভাবে অপরাধ বলে গণ্য সে সকল কাজ বর্জন (দন্ডবিধির ৯১ ধারা)।
সম্মতি প্রদানকারী ব্যক্তির বা যে ব্যক্তির পক্ষে সম্মতি প্রদান করা হয়েছে উক্ত ব্যক্তির ক্ষতির কারণ হতে পারে বা ক্ষতি করার অভিষ্ট কারণ হতে পারে অথবা ক্ষতি করতে পারে বলে ধারণা জন্মে, এ ধরণের যে কাজের ক্ষতির দ্বারা স্বতন্ত্রভাবেই অপরাধ হয়ে যায় উক্তরূপ কাজের ক্ষেত্রে ৮৭, ৮৮ ও ৮৯ ধারার ব্যতিক্রম সমূহ প্রযোজ্য হবে না।
গর্ভপাত ঘটানো (নারীর জীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে সরল বিশ্বাসে ঘটানোর ক্ষেত্র ব্যতীত) নারীটির যে ক্ষতি সাধন করতে পারে বা যে ক্ষতি সাধনের জন্য অভিষ্ট হতে পারে তাহাতে স্বতন্ত্রভাবে একটি অপরাধ বলে গণ্য হবে। অতএব ইহা ‘অনুরূপ ক্ষতি অজুহাতেই’ অপরাধ বলে গণ্য হবে না এবং অনুরূপ গর্ভপাত ঘটানোর ব্যাপারে উক্ত নারীর বা অভিভাবকের সম্মতি উক্ত কাজে ন্যায় সংগত প্রতিপন্ন করতে পারে না।
সম্মতি ব্যতিরেকে কোনো মঙ্গলার্থে সরল বিশ্বাসে কৃতকার্য (দন্ডবিধির ৯২ ধারা)।
যদি পরিস্থিতি এরূপ হয় যে, কোনো ব্যক্তির পক্ষে সম্মতি প্রদান করা অসম্ভব বা যদি উক্ত ব্যক্তি সম্মতি প্রদান করতে অপারগ হয় এবং তার এরূপ কোনো অভিভাবক বা আইনানুগভাবে তত্বাবধানকারী অন্য কোনো ব্যক্তি না থাকে, যার নিকট হতে করণীয় বস্তুর জন্য যথাসম্ভব সম্মতি অর্জন করা সম্ভব হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তির সম্মতি ব্যতিরেকেই তার মঙ্গলার্থে সরল বিশ্বাসে কোনো কাজ করার কারণে উক্ত ব্যক্তির ক্ষতি সাধন হতে পারে এরূপ কাজ অপরাধ নয়। তবে শর্ত থাকে যে-
প্রথমতঃ এ ব্যতিক্রম ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যু ঘটানো বা মৃত্যু ঘটানোর প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
দ্বিতীয়তঃ এ ব্যতিক্রম এমন কিছু সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, যা মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত নিবারণ বা কোনো গুরুতর পীড়া বা পঙ্গুত্ব হতে নিরাময় ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে মৃত্যু ঘটাতে পারে বলে উক্ত কার্য সম্পাদনকারী ব্যক্তির জানা থাকে।
তৃতীয়তঃ এ ব্যতিক্রম মৃত্যু বা আঘাত নিবারণ ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত প্রদান বা আঘাত প্রদানের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
চতুর্থতঃ এ ব্যতিক্রম এমন কোনো অপরাধের সহায়তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না যে অপরাধ সংঘটনের জন্য ইহা প্রযোজ্য হবে না। যেমন-
‘খ’ তার ঘোড়া হতে পড়ে যায় এবং সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। চিকিৎসক ‘ক’ দেখতে পান যে, ‘খ’ এর মাথা ট্রিপ্যান (Trepan) দিয়ে ছিদ্র করার প্রয়োজন রয়েছে । ‘খ’ এর স্বীয় বিচার বিবেচনা ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পূর্বে ‘ক’ এর মৃত্যু কামনা না করে ‘খ’ এর মঙ্গলার্থে সরল বিশ্বাসে ট্রিপ্যান (Trepan) প্রয়োগ করেন, এক্ষেত্রে ‘ক’ কোনো অপরাধ সংঘটন করেননি।
একটি বাঘ ‘ট’ কে টেনে নেয়। ‘ড’ বাঘটির প্রতি গুলি ছোড়ে। উক্ত গুলিতে ‘ট’ এর মৃত্যু ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে তা সে জানতো। তবে তার ‘ট’ কে মারার ইচ্ছে ছিলো না এবং ‘ট’ এর মঙ্গলার্থে সরল বিশ্বাসে উক্ত গুলি ছোড়ে। ‘ড’ এর গুলিতে ‘ট’ মারাত্মকভাবে আহত হয়। ‘ড’ কোনো অপরাধ করেনি।
চিকিৎসক ‘ক’ একটি শিশুকে এমন একটি দুর্ঘটানায় পতিত অবস্থায় দেখতে পান যে, অবিলম্বে অস্ত্রোপচার না করলে উক্ত দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করার সম্ভাবনা আছে। এ পরিস্থিতিতে উক্ত শিশুর অভিভাবকের নিকট আবেদন করারও সময় নেই। ‘ক’ সরল বিশ্বাসে শিশুর মঙ্গল কামনা করে শিশুটির অনুরোধ অগ্রাহ্য করে অস্ত্রোপচার করেন। ‘ক’ কোনো অপরাধ করেননি।
সরল বিশ্বাসে কৃত যোগাযোগ (দন্ডবিধির ৯৩ ধারা)।
যদি মঙ্গলার্থে কোনো ব্যক্তির নিকট কোনো সংবাদ পরিবেশন করা হয় তাহলে যে ব্যক্তির নিকট উক্ত সংবাদ পরিবেশিত হয় সে ব্যক্তির কোনো ক্ষতি সাধন হতে পারে এ কারণে সরল বিশ্বাসে কোনো সংবাদ পরিবেশন করা অপরাধ নয়।
চিকিৎসক ‘ক’ সরল বিশ্বাসে একজন রোগীকে তার অভিমত জানান যে, সে বাচবে না। উক্ত রোগী প্রবল স্নায়বিক উত্তেজনার কারণে মারা যায়। ‘ক’ কোনো অপরাধ সংঘটন করেননি। যদিও তিনি জানতেন যে, উক্ত যোগাযোগের ফলে রোগীর মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো।
ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কোনো ব্যক্তিকে কোনো কাজ করার জন্য বাধ্য করা (দন্ডবিধির ৯৪ ধারা)।
খুন ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয় অপরাধ সমূহ ব্যতিরেকে এরূপ কোনো কিছুই অপরাধ নয় যে এমন কোনো ব্যক্তি কর্তৃক করা হয় যে ব্যক্তিকে এরূপ ভীতি প্রদর্শন করে উক্ত কাজ করতে বাধ্য করা হয় যে, উক্ত কাজ সংঘটনের সময় অনুরূপ ভীতি প্রদর্শন এ মর্মে যৌক্তিকভাবে আশংকা সৃষ্টি করে যে, প্রকারান্তরে তাৎক্ষণিক মৃত্যুই হবে উক্ত ব্যক্তির পরিণতি। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত কার্য সম্পাদনকারী ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বা তার তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে লঘুতর ক্ষতির যৌক্তিক আশংকার কারণে নিজেকে এরূপ পরিস্থিতিতে সমর্থন করেনি।
ব্যাখ্যা-১
যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় প্রহৃত হওয়ার ভয়ে একদল ডাকাতের চরিত্র অবগত থাকা সত্ত্বেও উক্ত ডাকাত দলের সাথে যোগদান করে। সে তার সংগীদের দ্বারা আইনত অপরাদ বলে গণ্য কোনো কিছু করার জন্য বাধ্য হওয়ার অজুহাতেই এ ব্যতিক্রমে আশ্রয় লাভের অধিকারী হবে না।
ব্যাখ্যা-২
যে ব্যক্তিকে একদল ডাকাত আইনত অপরাধ বলে গণ্য কোনো কিছু সম্পাদনের জন্য অবরোধ ও তাৎক্ষণিক মৃত্যুর ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বাধ্য করে, তাহলে সে ব্যক্তি এ ব্যতিক্রমের আশ্রয় লাভের অধিকারী হবে। যেমন যখন একজন কামারকে তার যন্ত্রপাতি নিয়ে ডাকাতদের দ্বারা কোনো ঘরে প্রবেশ ও উহা লুন্ঠন করার জন্য উক্ত ঘরের দরজা জোরপূর্বক ভাঙ্গার জন্য বাধ্য করা হয়, তখন উক্ত কামার এ ব্যতিক্রমের আশ্রয় লাভের অধিকারী।
সামান্য ক্ষতিকারক কাজ (দন্ডবিধির ৯৫ ধারা)।
কোনো ক্ষতি যদি এতো সামান্য হয় যে, স্বাভাবিক বুদ্ধি ও মেজাজ সম্পন্ন কোনো ব্যক্তি উক্ত ক্ষতির জন্য কোনো অভিযোগ করবে না, তাহলে ক্ষতির অভিপ্রায় ছিলো না বা ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে জানতো কেবল এ কারণে তা অপরাধ হবে না।