⚖️ তদন্ত কি এবং তদন্তের স্তরগুলি কি কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 1 week ago
  • Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
(ক) তদন্তঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪(১)(ঠ) ধারায় তদন্তের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, তদন্ত বলতে সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে কোনো পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অপর কোনো ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত সকল কার্যক্রমকে বুঝানো হয়েছে।    

       তদন্ত অর্থ হলো পুংখানুপুংখভাবে পরীক্ষা করা। অর্থাৎ কোনো কিছু পেয়ে উহার সত্যতা নির্ণয়ের জন্য ভালোভাবে যাচাই বাছাই করা তথা কোনো ঘটনা সম্পর্কে প্রকৃত সত্য নিরুপণ করা। 

তদন্তের উপাদান দুইটি-

(১) সাক্ষ্য গ্রহণ করা,

(২) পুলিশ অফিসার অথবা ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কর্তৃক সাক্ষ্য সংগ্রহ করা (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৬ ধারা এবং পিআরবি ২৫৮ প্রবিধান)। 

 

তদন্তের স্তরগুলি নিম্নরূপঃ 

(১) এজাহারের অনুলিপি প্রাপ্ত হওয়া বা গ্রহণ করা। 

(২) এজাহারের তথ্য অনুসারে থানায় রক্ষিত রেকর্ডসমূহ পর্যালোচনা করা এবং তথ্য সংগ্রহ করা (পিআরবি ২৫৬ প্রবিধান)। 

(৩) থটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া (পিআরবি ২৫৮ প্রবিধান)।

(৪) ঘটনাস্থল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

(৫) আলামত জব্দ করা এবং মালামাল উদ্ধার করা।

(৬) প্রকৃত আসামীকে গ্রেফতার করা এবং কোর্টে সোপর্দ করা। 

(৭) ঘটনার বিষয়ে অবহিত আছে এমন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা)। 

(৮) প্রাপ্ত তথ্য ও সাক্ষ্য মূল্যায়ন করা। 

(৯) আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলে অভিযোগপত্র দাখিল করা (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭০ ধারা এবং পিআরবি ২৭২ প্রবিধান)। 

(১০) তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ অপর্যাপ্ত হলে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৯ ধারা এবং পিআরবি ২৭৫ প্রবিধান)। 

 

(খ)    সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে থানায় মামলা রুজু করা হয়ে থাকে। ফৌজদারী কার্যবিধির দ্বিতীয় তফসিলে শুধুমাত্র আমলযোগ্য বা ধর্তব্য অপরাধেই বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। রুজুকৃত মামলার তদন্তকালে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সাক্ষীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা তথা ঘটনার সত্যতা নিরুপণ অত্যাবশ্যক। অভিযোগ সঠিক হলে সন্দিগ্ধ ব্যক্তিকে উল্লিখিত কারণে গ্রেফতার করা আইনসিদ্ধ। তবে অভিযোগ মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত হলে সন্দিগ্ধ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা আইনসিদ্ধ হবে না। 

 

(গ)    কোনো অপরাধের ঘটনাস্থলের ব্যবস্থাপনা বলতে মামলার তদন্তকারী অফিসারকে ঘটনার পরপরই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে ঘটনাস্থল এবং আশপাশ যে অবস্থায় পাওয়া যাবে সেই অবস্থাতে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করাকে বুঝায়। কোনো অপরাধ সংঘটনের স্থান বা ঘটনাস্থল বা অকুস্থলে দ্রুত পৌছে উহা সংরক্ষণ করা প্রতিটি তদন্তানুষ্ঠানের স্বার্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধী জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে ঘটনা সংঘটন সম্পর্কে কিছু না কিছু সূত্র ঘটনাস্থলে অবশ্যম্ভাবীভাবে ফেলে রেখে যাবেই। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কোনো অপরাধের ঘটনাস্থলের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারলে ঘটনা যতোই রহস্যজনক বা সূত্রবিহীন হউক না কেনো ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত তথ্য বা সূত্রের বদৌলতে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়। অন্যথায় ঘটনাস্থলের মূল্যবান আলামত নষ্ট বা মুছে যায় বা অপসারিত হয়ে যায়। তখন আর ঘটনা সুরাহা করা সহজ হয় না। তাই ঘটনাস্থলে কোনো প্রকার জন সমাগম পুরাপুরি নিষিদ্ধ করা হয়। বাড়ির লোকদের অন্যত্র সরায়ে দেওয়া উচিৎ। কোনো জিনিষপত্রে যাতে কেহ হাত দিতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয় (পিআরবি ২৫৮ প্রবিধান)। 

 

(ঘ)    তদন্তকারী অফিসারকে কোনো মামলার ঘটনাস্থলে পৌছে নিম্নলিখিত বিষয়ের প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য রাখতে হয়-

(১) ঘটনাস্থলের অবস্থান সঠিকভাবে নির্ধারণ করা।

(২) ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র অংকন করা (পিআরবি ২৭৩ প্রবিধান)। 

(৩) ঘটনাস্থলের ছবি উঠানো।

(৪) ধীরস্থিরভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ঘটনাস্থলের প্রতিটি অংশের প্রতি দৃষ্টি দেয়া। 

(৫) আলামত তথা বস্তুগত সাক্ষ্য সংগ্রহ করা। 

(৬) অপরাধী যেসকল সূত্র ফেলে গেছে তা খুজে বের করা। 

(৭) অপরাধীর পায়ের ছাপ, আঙ্গুলের ছাপ, আগ্নেয়াস্ত্র, কোনো জিনিষপত্র, রক্ত, দা, ছুরি, চাকু, জুতা, স্যান্ডেল, কাপড়-চোপড়, বীর্য, ছাই, মাটি, রং, কসমেটিক, চুল, কাগজ, কোনো দলিল ইত্যাদি ঘটনাস্থলে পড়ে থাকলে তা জব্দ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

(৮) বাড়ির লোক বা প্রতিবেশী বা বহিরাগত বা অনাহুত কোনো লোক যাতে কোনো আলামত নষ্ট করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। 

(৯) ঘটনাস্থলে আসামীদের আগমন ও নির্গমনের পথ সঠিকভাবে চিহ্নিত করা।  

(১০) ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ঘটনাস্থলের কোনো কিছুই যাতে তদন্তকারীর দৃষ্টি এড়াতে না পারে তা নিশ্চিত করা। 

(১১) ঘটনাস্থল সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে পাহারার ব্যবস্থা করা।

(১২) বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক কারণে যাতে ঘটনাস্থল ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার ব্যবস্থা করা। 

(১৩) বস্তু সাক্ষ্য সঠিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা। 

(১৪) ঘটনার সময়ে ঘটনাস্থলে সাক্ষী ও অপরাধীদের অবস্থান সঠিকভাবে নির্ণয় করা। 

Google News Google News
Google News এ বিরাট বাজারের সকল পোস্ট পেতে ক্লিক করে ফিডটি ফলো করুন