⚖️ তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্ব ও কর্তব্য
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 2 days ago
- Category: অপরাধ বিজ্ঞান
তদন্ত বলিতে সাধারণত কোনো অপরাধ সংঘটনের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করাকে বুঝায়। অর্থাৎ সত্য উদঘাটন করাই তদন্তের মূখ্য উদ্দেশ্য। এই সত্য উদঘাটনের জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করিতে হয়। সঠিক তথ্য সংগ্রহে যিনি যতো পারদর্শী তিনি ততো দক্ষ তদন্তকারী অফিসার। তাই তদন্তকারী অফিসারকে ফৌজদারী কার্যবিধি এবং পিআরবি এর বিধি-বিধান অনুসরণ করিয়া বিরতিহীনভাবে তদন্তকার্য পরিচালনা করিতে হয়। একজন দক্ষ তদন্তকারী অফিসারকে মামলা তদন্তকালে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সঠিকভাবে অনুসরণ করিতে হইবে।
(১) তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথেই এজাহার সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র গভীরভাবে পর্যালোচনা করিয়া মামলার ক্লু সংগ্রহ করা।
(২) তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থানার পুলিশ রেকর্ড পর্যালোচনা করিয়া তথ্য সংগ্রহ করা।
(৩) থানায় সংরক্ষিত ভিলেজ ক্রাইম নোট বুক (VCNB) অথবা সিডিএমএস হইতে অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ করা (পিআরবি-৩৯১)।
(৪) সম্পত্তি চুরি বা লূণ্ঠণ সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে সীমান্তবর্তী জেলার থানাসমূহে জরুরী ভিত্তিতে হৈচৈ বিজ্ঞাপন প্রেরণ পূর্বক মালামাল উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতারের উদ্যোগ গ্রহণ করা (পিআরবি-২৫০)।
(৫) জালনোট সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে সিআইডি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট অফিসারের সাথে যোগাযোগ করিয়া তথ্য সংগ্রহ করা (পিআরবি-২৫৩)।
(৬) তদন্তকার্যে অগ্রসর হওয়ার সময় ভিডিও এবং ষ্টিল ক্যামেরাসহ একটি উন্নতমানের আধুনিক তদন্ত কিটবক্স সংগে নেওয়া।
(৭) অপরাধের ঘটনাস্থলে পৌছিয়া প্রকৃত ঘটনাস্থলটিকে যথাযথভাবে সর্ব প্রথমেই সংরক্ষণের ব্যবস্থা করিতে হইবে এবং প্রয়োজনে সিআইডির বিশেষজ্ঞ টিমকে সহায়তা করার জন্য রিকুইজিশন পাঠাইতে হইবে।
(৮) ঘটনাস্থলের বস্তু সাক্ষ্য যাহাতে পুলিশ বেষ্টনীর ভিতরের কেহ বা বহিরাগত কেহ প্রবেশ করিয়া নষ্ট বা সরাইয়া কোনরূপ ক্ষতি করিতে না পারে, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে।
(৯) ঘটনাস্থলের একটি সার্থক খসড়া মানচিত্র তৈরি করিয়া ব্যাখ্যামূলক সূচিপত্র প্রস্তুত করা। খসড়া মানচিত্র এবং সূচিপত্র পৃথক কাগজে প্রস্তুত করিতে হইবে (পিআরবি-২৭৩)।
(১০) ঘটনার পরিস্থিতি অনুযায়ী মৃত্যু পথযাত্রীর (যদি থাকে) মৃত্যুকালীন জবান বন্দী (Dying declaration) রেকর্ড করার ব্যবস্থা করা (পিআরবি-২৬৬ এবং সাক্ষ্য আইনের ৩২(১) ধারা)।
(১১) ঘটনাস্থলে তল্লাশী চালাইয়া অপরাধের চিহ্ন বা বস্তুসাক্ষ্য (আলামত) যেখানে যাহা পাওয়া যায় তাহাই সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা।
(১২) আলামত যথানিয়মে সাক্ষীদের সামনে জব্দ তালিকা তৈরি করিয়া হেফাজতে নেওয়া এবং প্রয়োজনে আলামত জিম্মায় প্রদান করা (ফৌজদারী কার্যবিধি ৯৮ ধারা)।
(১৩)। জব্দ তালিকা ও জিম্মানামা যথাসময়ে আদালতে পাঠানো।
(১৪) মামলায় সংশ্লিষ্ট সাক্ষীদের জবানবন্দী গ্রহণকালে সাক্ষ্য আইনের বিধি-বিধান মনে রাখা ( ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬১ ধারা)।
১৫। ঘটনাস্থল ও উহার আশেপাশে প্রাপ্ত বস্তু সাক্ষ্য সিআইডির ফরেন্সিক শাখায় যথাযথভাবে পাঠাইয়া মতামত সংগ্রহ করা। কারণ বিশেষজ্ঞের মতামত সাক্ষ্য আইনের ৪৫, ৪৬ ও ৪৭ ধারায় আদালতে গ্রহণযোগ্য (পিআরবি-২৯৭ )।
(১৬) ঘটনাস্থলে পড়িয়া থাকা অতি সামান্য বস্তুসাক্ষ্য যেমন-চুল, রক্ত, বীর্য ইত্যাদি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা এবং বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া।
(১৭) তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামী গ্রেফতার করিয়া শীঘ্র কোর্টে পাঠানো এবং প্রয়োজনে পুলিশ রিমান্ডে গ্রহণ করিয়া গভীরভাবে ও বুদ্ধিমত্তার সাথে জিজ্ঞাসাবাদ করা (ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৬০/৬১/১৬৭ এবং পিআরবি-৩২৪)।
(১৮) জিজ্ঞাসাবাদজকালে আসামীর নিকট হইতে মামলা সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া গেলে সেইমতে সতর্কতার সাথে তদন্ত পরিচালনা করা এবং কোনো বস্তু সাক্ষ্য বা আলামত পাওয়া গেলে জব্দ তালিকামূলে হেফাজতে নেওয়া।
(১৯) জিজ্ঞাসাবাদকালে আসামী স্বেছায় স্বীকারোক্তি করিলে যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কোর্টে হাজির করিয়া বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করণের ব্যবস্থা করা এবং জবানবন্দী যাচাইয়ের ব্যবস্থা নেওয়া (পিআরবি-২৮৩)।
(২০) তদন্তকারী অফিসার কর্তৃক বিশ্বস্ত সোর্স নিয়োগ করিয়া সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা (পিআরবি-২৯৩)।
(২১) সোর্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য সঠিকভাবে যাচাই বাচাই করিয়া পলাতক আসামীদের গ্রেফতার, তাহাদের ব্যবহূত অস্ত্র শস্ত্র ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা।
(২২) ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নিহত ব্যক্তির মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করিয়া ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং জখমীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়া রিপোর্ট সংগ্রহ করা (ফৌজদ্যরী কার্যবিধি-১৭৪ এবং পিআরবি-২৯৯)।
(২৩) প্রতিদিনের জন্য তদন্তের ধারাবাহিকতা রক্ষা করিয়া কেস ডায়রী (CD) লিখিতে হইবে এবং উহাতে সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য সন্নিবেশিত করা। আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে তদন্তকারী অফিসার তাহার স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করণে সিডি ব্যবহার করিতে পারেন ( সাক্ষ্য আইনের ১৫৯ ধারা)।
(২৪) গ্রেফতারকৃত এবং সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদেরকে প্রয়োজনে বাদি ও সাক্ষীদের দ্বারা সনাক্ত করণের ব্যবস্থা করা (পিআরবি-২৮২)।
(২৫) প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অপরাধ সংশ্লিষ্ট ভিডিও, স্থিরচিত্র ও টেপরেকর্ডে ধারণকৃত কথাবার্তা ইত্যাদি আদালতে উপস্থাপন করা।
(২৬) গুরুত্বপূর্ণ মামলা এবং গ্যাং কেসের ক্ষেত্রে এক বা একাধিক আসামীকে রাজসাক্ষী করার প্রয়োজন হয়। সেই সকল ক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসারকে দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার সহিত আইনী কার্যক্রম গ্রহণ পূর্বক রাজসাক্ষীদেরকে কঠোর নিয়ন্ত্রণাধীনে পরিচালনা করা।
(২৭) সিআইডি এর ফরেনসিক শাখায় বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার সহায়ক হিসাবে বেশ কিছু ব্যবস্থা রহিয়াছে। তদন্তকারী অফিসারকে সিআইডির সাথে যোগাযোগ রাখিয়া তদন্ত পরিচালনা করা।