⚖️ অপরাধ প্রমাণের দায়িত্ব কার?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 2 days ago
- Category: সাক্ষ্য আইন
সাক্ষ্য আইনের বিধানমতে ফৌজদারী অপরাধ প্রমাণ করিবার দায়িত্ব মামলার বাদীপক্ষের উপর বর্তায়। সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারা অনুসারে অভিযোগ দায়েরকারী (বাদী) কেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করিতে হইবে। অর্থাৎ অভিযোগের অস্তিত্ব বিষয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে হাজির করিয়া বাদীপক্ষকেই তাহা প্রমাণ করিতে হইবে।
সাক্ষ্য আইনের ১০২ ধারামতে যদি কোনো পক্ষই আদালতে সাক্ষ্য হাজির না করে, তবে যে পক্ষের হার হইবে, তাহার উপরেই প্রমাণের দায়িত্ব বর্তাইবে। যে ব্যক্তি আদালতকে কোনো বিষয়ের অস্তিত্ব বিশ্বাস করাইতে চায়, সেই বিষয়টি প্রমাণের দায়িত্ব সেই ব্যক্তিরই। সাক্ষ্য আইনের ১০৩ ধারা।
সাক্ষ্য আইনের ১০৪ ধারার বিধানমতে যখন কোনো ব্যক্তি কোনো ঘটনার সাক্ষ্য দিতে চায়, যাহা অন্য একটি ঘটনার উপর নির্ভরশীল, তখন সেই ব্যক্তিকেই এই অন্য ঘটনাটির প্রমাণের দায়িত্ব নিতে হইবে। তাছাড়া কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি তাহার অপরাধ সংক্রান্তে দন্ডবিধির ব্যতিক্রমের আওতায় আসিতে চায়, তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি প্রমাণ করিবার দায়িত্ব অভিযুক্ত ব্যক্তিরই। সাক্ষ্য আইনের ১০৫ ধারা। ইহা ব্যতিক্রম।
সাক্ষ্য আইনের ১০৬ ধারা অনুসারে কোনো বিষয় যখন বিশেষভাবে কোনো ব্যক্তির অবগতির মধ্যে থাকে, তখন সেই বিষয় প্রমাণের দায়িত্ব সেই ব্যক্তির উপরেই বর্তাইবে। অভিযুক্ত ব্যক্তির উপর বর্তাইলে তাহাকেই প্রমাণ করিতে হইবে। ইহা ব্যতিক্রম।
সাক্ষ্য আইনের ১০৭ ধারামতে যে ব্যক্তি গত ৩০ বৎসরের মধ্যে জীবিত ছিল, তাহাকে কেহ মৃত বলিলে, যিনি মৃত দাবি করিবেন, তাহাকেই উহা প্রমাণ করিতে হইবে। বিগত সাত বৎসর যাবত জীবিত আছে মর্মে কোনো সংবাদ জানা না গেলে, যিনি জীবিত বলিয়া দাবি করিবেন, তাহাকেই জীবিত থাকার বিষয়টি প্রমাণ করিতে হইবে। সাক্ষ্য আইনের ১০৮ ধারা। এই দুইক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি দাবিদার হইলে তাহাকেই বিষয় দুইটি প্রমাণ করিতে হইবে। ইহা ব্যতিক্রম।
সাক্ষ্য আইনের ১০৯ ধারামতে-
(১) অংশীদারিত্ব
(২) রায়তীস্বত্ব এবং
(৩) প্রতিনিধিত্ব
এই তিনটি মানবিক সম্পর্কের বিষয়ে কেহ যদি সম্পর্ক নাই বলিয়া দাবি করে, তবে দাবীদারকেই বিষয়টি প্রমাণ করিতে হইবে। দখলকারী ব্যক্তি মালিক নহে বলিয়া দাবি করিলে, দাবিদারকেই উহা প্রমাণ করিতে হইবে। সাক্ষ্য আইনের ১১০ ধারা।
সাক্ষ্য আইনের ১১১ ধারা মোতাবেক ঘনিষ্ট দুই পক্ষের মধ্যে লেনদেনের ব্যাপারে সরল বিশ্বাসে করা হইয়াছে দাবি করা হইলে, সক্রিয় পক্ষকেই সরল বিশ্বাসের বিষয়টি প্রমাণ করিতে হইবে।
সাক্ষ্য আইনের ১১২ ধারা মোতাবেক পিতা-মাতার বৈধ বিবাহিত সময়কাল অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের ২৮০ দিনের মধ্যে মাতার পূনর্বিবাহ না হইলে, সেই মায়ের গর্ভের সন্তান বৈধ এবং উহা চুড়ান্ত প্রমাণ। এই অবস্থায় সন্তানের বৈধতা নিয়া যিনি প্রশ্ন তুলিবেন, তাহাকেই প্রনাণ করিতে হইবে যে-সংশ্লিষ্ট কথিত পিতা-মাতার দেখা-সাক্ষাৎ ছিল না।
প্রমাণের দায়িত্ব পরিবর্তনঃ সাক্ষ্য আইনের নীতি অনুযায়ী কোনো মামলার বাদীপক্ষ পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে তাহার পক্ষে রায়ের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করিলে আসামীপক্ষ সেই দাবি অগ্রাহ্য করারমত বিষয় রহিয়াছে উল্লেখ করিলে, এই বিষয়টি প্রমাণ করার দায়িত্ব আসামীপক্ষের উপর বর্তাইয়া থাকে। অর্থাৎ প্রমাণের দায়িত্বটি প্রথমে বাদী পক্ষের উপর থাকিলেও, পরে উহা পরিবর্তন হইয়া আসামীপক্ষ্যের উপর বর্তাইয়াছে।