⚖️ জাল নোট চিনার উপায় কি ?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 1 day ago
  • Category: অপরাধ বিজ্ঞান

সরকারিভাবে বা সরকারি নিয়ন্ত্রণে যে সকল কাগজে টাকা তৈরি, ছাপানো এবং  বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে অন্যান্য ব্যাংক ও বাজারে চালু করা হয় সেইগুলি আসল টাকা বা নোট। উহার বাইরে কোনো ব্যক্তি  বা গোষ্ঠী আসল টাকার অনুরূপ কোনো নোট প্রস্তুত করিয়া বাজারে চালু করিলে বা সংরক্ষণ করিলে, সেইগুলিই জালনোট হিসাবে গণ্য। জালকারী বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করিয়া থাকে এবং বিভিন্ন যন্ত্র ও সরঞ্জাম ব্যবহার করিয়া থাকে। 

 

সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে জালনোট প্রস্তুত করা হইয়া থাকে। 

(১) হাতে প্রস্তুতঃ টাকার আকৃতির সাদা কাগজে কলম দিয়া নকশা করিয়া কালি ও রং ব্যবহার করিয়া জাল নোট প্রস্তুত করা হয়। ইহা খুব নিম্নমানের। 


 ২) লিথোগ্রাফিঃ লিথোগ্রাফির সাহায্যে আসল টাকার আদলে তৈরি করা হয়। পরে হাত দিয়া রং করা হয়। ত্রুটিযুক্ত থাকে। ইহাও খুব নিম্নমানের। 


(৩) ফটো লিথোগ্রাফঃ আসল টাকার ছবি উঠাইয়া লিথোগ্রাফ প্লেটের উপর ছাপ দিয়া উক্ত জাল কাগজে নিয়া হাতে ফিনিশিং টাচ দেওয়া হয়। ইহা নিম্নমানের। 


(৪) ফটো জিংকোগ্রাফিঃ আসল টাকার ছবি উঠাইয়া নিগেটিভ এর ছবি উল্টা করিয়া ধাতুর প্লেটে বসানো হয় এবং ল্যান্স ও প্রিজম ব্যবহার করিয়া ফটোগ্রাফ নেওয়া হয়। পরে উক্ত প্লেটে প্রিন্টিং মেশিন দ্বারা ছাপ দেওয়া হয়। ইহাতে ফটো লিথোগ্রাফির অনেক ত্রুটি দূর হয় এবং টাকার মান কিছুটা উন্নত হয়। 


(৫) ফটোরিলিক ব্লকঃ এই পদ্ধতিতে ফটো জিংকোগ্রাফির মতো নিগেটিভ হইতে আসল টাকার ছাপ নেওয়া হয় এবং দস্তা বা তামার পাতের উপর টাকার ছাপ উঠানো হয়। উক্ত পাতের যে অংশ ছাপবিহীন থাকে, সেখানে যথাক্রমে নাইট্রিক এসিড এবং ফেরাস পার ক্লোরাইড ব্যবহার করিয়া কুচকানো ও অমসৃণ করা হয়। ইহাতে জাল টাকার মান খুব ভালো হয় না। 


(৬) হাতের খোদাই ব্লকঃ খোদাই ব্লক করিতে দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির পক্ষেই শুধু এই পদ্ধতিতে টাকা তৈরির ব্লক বানানো সম্ভব। ভালোমানের শক্ত কাঠের উপর খোদাই করিয়া টাকার ব্লক কাটা হয়। তবে এই জাল নোটে মসৃণতা থাকে না। 


(৭) সাধারণ ফটো কপিয়ারঃ এই পদ্ধতিতে ফটোস্টেট মেশিনের সাহায্যে আসল টাকার উভয় পিঠের ছায়াকপি তৈরি করিয়া ছায়াকপির সাদা পিঠে আঠা লাগাইয়া ভালোভাবে একই সাথে পেস্টিং করিতে হয়। পরে ছায়াকপিতে প্রয়োজনীয় রং দিয়া জালনোট তৈরি করা হয়। ইহা নিম্নমানের জালনোট। 


(৮) মাল্টি কালার ফটো কপিয়ারঃ এই পদ্ধতিটি হইল অধুনিক পদ্ধতি। এই যন্ত্রের সাহায্যে রঙিন ফটোকপি তৈরি করিয়া জাল টাকা তৈরি করা হইয়া থাকে। এই পদ্ধতিতে তৈরি জালনোটের রং, নকসা, ফিনিশিং খুবই উন্নতমানের। সহজে জাল বলিয়া ধরা পড়ে না। 


(৯) স্ক্যানার কাম প্রিন্টারঃ এই পদ্ধতিটি  একটি উন্নতমানের সর্বোৎকৃষ্ট আধুনিক পদ্ধতি। ইহা খুবই নিখুত ও ত্রুটিহীন পদ্ধতি। স্ক্যানারে আসল টাকা দিলে হুবহু টাকা প্রিন্ট হইয়া বাহিরে আসে। এই টাকা নকল বা জাল বলিয়া চিনিবার উপায় নাই। শুধুমাত্র জালনোট বিশেষজ্ঞ এবং গবেষণাগারে জাল বলিয়া সনাক্ত করা সম্ভব। তবে এই ধরণের মেশিন বাংলাদেশে আনা নিষিদ্ধ।

 

(১0) ফটো খোদাই পদ্ধতিঃ ইহাও একটি বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতেও নিখুতভাবে জাল টাকা তৈরি করা যায়। তামার মোটা পাতে খোদাই ছাপ দেওয়া হয় এবং আসল টাকার নিগেটিভ নিয়া পজিটিভ করা হয়। পরে পাল্টাপাল্টি ছবি তুলিয়া নিগেটিভ হইতে আবার পজিটিভও তৈরি করিয়া জাল টাকা প্রস্তুত করা হয়। 

 

জালনোট সনাক্তকরণ বা চিনার উপায়ঃ জালনোট সনাক্ত করিতে হইলে সর্বপ্রথমে প্রয়োজন সচেতনতা এবং পরে আসল নোট সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা দরকার। যত সাবধানতা অবলম্বন করিয়াই জালনোট প্রস্তুত করা হউক না কেন কিছু না কিছু ত্রুটি বা পার্থক্য থাকিয়াই যায়। ঐ ত্রুটিসমূহ জানা থাকিলে জালনোট সনাক্ত করা বা চিনা সহজতর হয়। যেমন-

(১) আসল টাকার কাগজ তৈরিতে ভেড়ার চামড়া ব্যবহুত হয়, কিন্তু জাল টাকা অনুন্নত মানের সাদা কাগজে তৈরি। আসল টাকা তৈলাক্ত হয়, জাল টাকায় তা থাকে না।

(২) উন্নতমানের কালিতে আসল টাকা তৈরি হয়। অ্যান্টি ফটোগ্রাফিক আল্ট্রাভায়োলেট-রে ব্যবহারে রঙের পরিবর্তন হয় না। কিন্তু জাল টাকায় অনুন্নতমানের কালি থাকায় উক্ত রে-তে উহা ভিন্ন রং প্রদর্শন করে। 

(৩) আসল টাকা সমতল নহে-নকশাটি উঁচু-নিচু। কিন্তু জাল টাকা সমতল এবং নকশাতে উঁচু-নিচু থাকে না। আসল টাকা ইন্ট্যাগলিও পদ্ধতিতে তৈরি। জাল টাকা তাহা নহে। 

(৪) আসল টাকার জলছাপ কাগজের ভিতরে থাকিলেও বাহির হইতে দেখা যায়। কিন্তু জাল টাকার জলছাপ টাকার উপরে অঙ্কিত থাকে। 

(৫) আসল টাকার নিরাপত্তা সুতা আণুবীক্ষণিক ধাতব পদার্থ দিয়া তৈরি এবং উহাতে বাংলাদেশ ব্যাংক লেখা থাকে। জাল টাকায় কোন সুতা থাকে না বরং পেন্সিলের দাগ থাকে। 

(৬) আসল টাকার ক্রমিক নং সমতল নহে-লেখাগুলি উঁচু-নিচু থাকে এবং লেখা চমৎকার। কিন্তু জাল টাকায় ক্রমিক নং  সমতল থাকে না এবং লেখা অমসৃণ থাকে। 

(৭) আসল টাকার সিলাই উন্নতমানের বুঝা যায় না। জাল টাকায় কোনো সিলাই থাকে না। 

(৮) আসল টাকায় মচমচে শব্দ হয়- যাহাকে কালশিরা বলা হয়। জাল টাকায় কোনো শব্দ হয় না। 

(৯) আসল টাকা খসখসে ধরণের কিন্তু জাল টাকা কিছুটা পিচ্ছিল। 

(১০) অধিক মূল্যমানের আসল নোটে নিরাপত্তামূলক কিছু লেখা ও চিহ্ন থাকিলেও জাল নোটে এই ধরণের কিছু থাকে না। 

(১১) আসল নোটের নকশার এই পিঠ ও উল্টা পিঠ মিলিয়া একটি সুন্দর নকশা হয় কিন্তু জালনোটে তাহা থাকে না। 

(১২) অধিক মূল্যমানের আসল নোটে অন্ধ ব্যক্তিদের বুঝার জন্য কিছু ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু জাল নোটে তাহা থাকে না।