⚖️ ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা কখন জারী করা হয়?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 3 weeks ago
  • Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারার উদ্দেশ্য হলো উপদ্রব বা আসন্ন বিপদ মোকাবেলা করার জন্য জরুরী আদেশ দেয়া। এর প্রয়োগের মাধ্যমে একদিকে বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে দাংগা হাংগামা প্রতিরোধ করে শান্তিরক্ষা করা যায় এবং অন্যদিকে বৃহত্তর মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিলে প্রয়োজনীয় নিষেধাজ্ঞা জারী পূর্বক তা নিবারণ করা যায়। ম্যাজিষ্ট্রেটগণ বিশেষ সতর্কতার সাথে ইহা প্রয়োগ করবেন যাতে আদেশের ফলশ্রুতিতে জনগণের মৌলিক অধিকার যথাসম্ভব কম ক্ষুন্ন হয়।

 

 যদি ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ (১) ধারা অনুসারে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, থানা ম্যাজিষ্ট্রেট  অথবা সরকার বা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক অত্র ধারায় কার্য করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত অপর কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট (তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট নন) দেখেন যে, তার অধিক্ষেত্রাধীন এলাকার মধ্যে কোনো গণ উপদ্রবের জরুরী প্রতিরোধ না করলে শান্তিভংগের আশংকা রয়েছে অথবা দাংগা হাংগামা বেধে যেতে পারে এবং ফলশ্রুতিতে গণশান্তি বিনষ্ট হতে পারে তখন তিনি সমস্ত পরিস্থিতি উল্লেখ করে কোনো ব্যক্তিকে কোনো কার্য করা থেকে বিরত থাকার বা তাদের দখল বা পরিচালনাধীন কোনো সম্পত্তি সম্পর্কে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের তাৎক্ষণাৎ বলবৎ হবে এমন আদেশ দিতে পারেন যা ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৪ ধারার বিধানমতে জারী হবে। নিম্নে বর্ণিত তিনটি শর্তের যে কোনো একটি বিরাজমান থাকলে উক্ত ম্যাজিষ্ট্রেটগণ অত্র ধারা অনুযায়ী নির্দেশ দিতে পারেন-

(ক) আইনসংগতভাবে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তির প্রতি বাধা, বিরক্তি বা ঝুকির ক্ষেত্রে। 

(খ) মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তার প্রতি বিপদের আশংকার ক্ষেত্রে এবং

(গ) সর্বসাধারণের প্রশান্তির ব্যাঘাত বা দাংগা হাংগামার আশংকার ক্ষেত্রে, জরুরী পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর যথাসময়ে জারী করা সম্ভব নয় সে পরিস্থিতিতে এ ধারার আদেশ একতরফাভাবে দেয়া যাবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ (২) ধারা)। 

এই ধারার আদেশ কোনো বিশেষ স্থানে ঘনো ঘনো গমনকারী ব্যক্তি বা জনসাধারণের প্রতি প্রদান করা যেতে পারে (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ (৩) ধারা)। 

কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে বা কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির আবেদনক্রমে অত্র ধারা অনুসারে প্রদত্ত তার নিজের বা তার অধিনস্থ কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট বা তার স্থলাভিষিক্ত পূর্ববর্তী ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত কোনো আদেশ বাতিল বা পরিবর্তন করতে পারেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ (৪) ধারা)। 

ফৌজদ্রী কার্যবিধির ১৪৪ (৪) ধারায় কোনো আবেদন পাওয়া গেলে ম্যাজিষ্ট্রেট আবেদনকারীকে ব্যক্তিগতভাবে বা কৌশুলীর মাধ্যমে হাজির হয়ে আদেশের বিরুদ্ধে কারণ প্রদর্শনের সুযোগ দিবেন এবং ম্যাজিষ্ট্রেট কারণ লিপিবদ্ধ করে আবেদনটি সম্পর্ণ বা আংশিক বাতিল করতে পারেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ (৫) ধারা)। 

অত্র ধারার অর্থাৎ ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারার প্রদত্ত আদেশ, আদেশ প্রদানের তারিখ হতে দুই মাসের অধিককাল সময়ের জন্য বলবৎ থাকবে না। তবে মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তার প্রতি বিপদ অথবা দাংগা মারামারির আশংকায় সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আদেশ বলবৎ এর মেয়াদ বাড়াতে পাড়েন (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ (৬) ধারা)। 

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারার বিধানসমূহ মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রযোজ্য হবে না (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ (৭)( ধারা)।

ন্ত্রি পরিষদ বিভাগের স্মারক নং সিডি/সিজেআইই ৪১৩/৮৩শ ১৬৭(১৫০০) তাং ৩-১-৮৩ ইং অনুসারে আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণ যেমন পরীক্ষা অনুষ্ঠান, নির্বাচন অনুষ্ঠান, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ইত্যাদি ক্ষেত্রে থানা নির্বাহী অফিসার সংশ্লিষ্ট থানায় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করতে পারবেন। তবে সম্পত্তি বিরোধের ক্ষেত্রে থানা ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ এবং ১৪৫ ধারা প্রয়োগ করবেন না। 

 

উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত সমূহঃ 

(১) অত্র ধারার আদেশ স্বত্ব সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত দেয়ার অধিকার ম্যাজিষ্ট্রেটের আওতা বহির্ভুত। জমিটি নিয়ে বিবাদমান পক্ষগণের মধ্যে আশু শান্তিভংগের আশংকা আছে কিনা তিনি দেখবেন এবং যদি থাকে তবে তিনি কেবল তা প্রতিরোধ করার জন্য আদেশ প্রদান করবেন (১১ এমএলজে ১২২)। 

(২) অত্র ধারার প্রথম আদেশের সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর যদি নবতর অবস্থার সৃষ্টি হয় যা দ্বারা শান্তিভংগের আশু সম্ভাবনা দেখা দেয় তবে ম্যাজিষ্ট্রেট নতুনভাবে বিষয়টির প্রতি মনোনিবেশ করে অত্র ধারায় আদেশ দিলে তা বে-আইনী হবে না (২৬ ডিএলআর ৩৭৬)। 

(৩) যখন শান্তিভংগের গুরুত্বর আশংকা দেখা দেয় এবং তদ্বারা মানুষের জীবন এবং সম্পত্তির উপর হুমকি আসে তখন অত্র ধারা অনুযায়ী সান্ধ্য আইন জারী করা যায় এবং তা বলবৎ করার জন্য পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীকে তলব করা যায় এবং পরিস্থিতির প্রয়োজনে সান্ধ্য আইনের আদেশ অমান্যকারীদের গুলি করা অন্যায় হবে না (২১ ডিএলআর ২২৫)। 

(৪) স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে দুপক্ষের বিবাদ বাধলে এবং তদ্বারা শান্তিভংগের আশংকা দেখা দিলে তখন ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় আদেশ প্রদন না করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় কার্যক্রম গ্রহণ করতঃ দখল সম্পর্কে সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদেশ দেয়া বাঞ্চনীয় (১১ সিডব্লিউএন ২৭১)। 

(৫) ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় প্রদত্ত আদেশ অমান্যকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ১৮৮ ধারায় শাস্তি প্রদান করা যায়। এক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারার আদেশ প্রদানকারী ম্যাজিষ্ট্রেট দন্ডবিধির ১৮৮ ধারায় মামলা নিজে আমলে নিতে পারেন না। তাকে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯৫ ধারা অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের করতে হবে (২৯ সিডব্লিউএন ১০৫৩)। 

(৬) ঘটনার বর্ণনা সাপেক্ষে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা অনুযায়ী একতরফা আদেশ প্রদান করলে তা অবৈধ হবে না (২৬ ডিএলআর ৩৭৬)। 

(৭) ম্যাজিষ্ট্রেট অনুমানের উপর অথবা শুধুমাত্র পুলিশ রিপোর্টের উপর নির্ভর করে দরখস্তকারীকে না শুনে বা শুনানীর সুযোগ না দিয়ে অত্র ধারায় আদেশ দিতে পারবে না (২১ ডব্লিউআর ২৬)।  

(৮) ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারার কার্যক্রমের তারিখের দুমাসের মধ্যে উহার পরিবর্তন ঘটিয়ে ১৪৫ ধারার কার্যক্রম গৃহীত হলে উহা আইনে বৈধ ((২৬ ডিএলআর ৯৪৫)। 

(৯) জরুরী ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারার অধীন একতরফা আদেশ দেয়া যায় (২৬ ডিএলআর ৩৭৬)। 

(১০) মিছিলের ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করা যায়। মিছিল করার অধিকার আছে কিন্তু সে মিছিল দ্বারা গণশান্তি যাতে বিঘ্নিত না হয় তা দেখার অধিকার কর্তৃপক্ষের আছে। যেখানে শান্তিভংগের আশংকা দেখা যায় সেখানে এ ধারার আদেশ দেয়া যায় (এআইআর ১৬০ কেরালা ৭৮)। 

Google News Google News
Google News এ বিরাট বাজারের সকল পোস্ট পেতে ক্লিক করে ফিডটি ফলো করুন