⚖️ মাদকদ্রব্য সেবনের কারণ এবং এর প্রতিরোধ কল্পে পুলিশের করণীয় কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 1 week ago
- Category: অপরাধ বিজ্ঞান
-
মাদকদ্রব্য বা নেশার বস্তুর সাথে মানুষ সেই আদিকাল হতেই সম্পৃক্ত। তাই মাদকদ্রব্য বা নেশার ইতিহাস এবং মানব সভ্যতার ইতিহাস দুটিই সমান। সমাজ বিবর্তনের সাথে সাথে মাদকদ্রব্যের প্রকারভেদও দেখা যায়। মানুষ একের পর এক নতুন নতুন মাদকদ্রব্য আবিষ্কার করে চলছে এবং সেগুলি নানাভাবে সমাজে অনুপ্রবেশ করে সমাজকে কলুসিত করছে। প্রাচীনকালে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, আনন্দ-উৎসব এবং ধর্মীয় উৎসবে মাদকদ্রব্য নেশার বস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার সারাবিশ্বে ভয়াবহ আতংক সৃষ্টি করছে। ফলে মানবজাতি আজ সামাজিক অবক্ষয় ও বিশাল হুমকির সম্মুখিন। মাদকদ্রব্যের ব্যবহার চোরাচালনীতে বিস্তারলাভ করেছে এবং বর্তমানে তরুণসমাজ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দিন দিন এর প্রবণতা বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ পুলিশ সহ মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর এর প্রবণতা রোধে কাজ করছে, তার পরেও মাদকদ্রব্য ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকদ্রব্য সেবনের নানাবিধ কারণ রয়েছে। তারমধ্যে কিছু কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো
(১) কুশিক্ষা;
(২) বেকারত্ব;
(৩) দারিদ্রতা;
(৪) অসৎ সঙ্গি;
(৫) মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা;
(৬) মাদকদ্রব্যের চোরাচালান;
(৭) মাদক ব্যবসায় প্রচুর লাভ;
(৮) পরিবারে ও সমাজে সচেতনতার অভাব;
(৯) সংঘাতময় পারিবারিক পরিবেশ। যেমন ব্রোকেন ফ্যামিলি;
(১০) পিতা-মাতার অযত্ন, অবহেলা, স্নেহ ভালোবাসার অভাব, বঞ্চনা ইত্যাদি;
(১১) ন্যূ্নতম চাহিদা পূরণ না হওয়ার মনোকষ্ট;
(১২) পিতা-মাতার মনোযোগের অভাব;
(১৩) পরিবেশ;
(১৪) পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা অথবা অতি প্রাচুর্য;
(১৫) ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়;
(১৬) সমাজে আদর্শবান ব্যক্তিত্বের অভাব;
(১৭) ধর্মীয় শিক্ষার অভাব;
(১৮) শিক্ষার অনুকূল পরিবেশের অভাব;
(১৯) অপসংস্কৃতির প্রভাব;
(২০) বস্তি জীবনের প্রভাব;
(২১) রাজনৈতিক অস্থিরতা;
(২২) চিত্ত-বিনোদনের অভাব;
(২৩) আইনের অপপ্রয়োগ ইত্যাদি।
পুলিশের করণীয়ঃ
পুলিশ একটি দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তবে একজন পুলিশ সদস্যও এই সমাজের বাসিন্দা এবং তাদের সন্তান-সন্ততিও এই সমাজের তরুণ প্রজন্মের অংশ। আজকের তরুণরাই ভবিষ্যতের কান্ডারী। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার জন্য আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকেও যুগোপযোগী হতে হবে। সমাজের অসঙ্গতি দূরিকরণে সাধ্যমত চেষ্টা করে যেতে হবে। মাদকাসক্ত তরুণ যারা নেশাগ্রস্ত, তারা নেশার অর্থ সংগ্রহের জন্য নানান ধরণের অপরাধের সহিত জড়িয়ে পড়ে। তাই তরুণ সমাজের বিপদগামী সদস্যদের আইনের আলোকে রক্ষা করার জন্য পুলিশের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। যেমন-
(১) তরুণদের অপরাধের জন্য সংশোধন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
(২) তরুণদের সর্বোত্তম স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করতে হবে।
(৩) তরুণদের সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
(৪) গ্রেফতারকৃতদের সাথে মানবিক ও বন্ধুসুলভ ব্যবহার এবং পিতার মতো আচরণ করতে হবে।
(৫) আইনের বাইরেও স্বতঃস্ফুর্তভাবে তরুণদের রক্ষায় কাজ করতে হবে।
(৬) তরুণদের মামলা সম্পর্কে সমাজকল্যাণ দপ্তরের সংশ্লিষ্টতা রাখতে হবে।
(৭) ২০১৩ সালের শিশু আইন মোতাবেক পুলিশকে যথাযথরূপে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
(৮) তরুণদের অপরাধের ক্ষেত্রে তাদের আসামী বা অপরাধী না বলে আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু বলতে হবে।
(৯) তরুণ সমাজকে বুঝাতে হবে যে তারা সমাজের উৎকৃষ্টাংশ।
(১০) সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে এই লক্ষ্যে উদ্ভুত করতে হবে।
(১১) ২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য বিরোধী দিবসের তাৎপর্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে তরুণদের অবহিত করতে হবে।