⚖️ পুলিশ রিপোর্ট কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 1 week ago
- Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৫৬ ধারার বিধান মোতাবেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বা কোনো তদন্তকারী অফিসার কোনো মামলার তদন্ত শেষ করিয়া ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৭৩ ধারার বিধান মোতাবেক আমলী আদালতে যে রিপোর্ট দাখিল করিয়া থাকেন, তাহাকে পুলিশ রিপোর্ট বলা হয়। এই রিপোর্ট দুই ধরণের হয়। যেমন=
(১) অভিযোগপত্র বা চার্জ সিট,
(২) চুড়ান্ত রিপোর্ট বা ফাইনাল রিপোর্ট।
অভিযোগপত্র বা চার্জ সিটঃ
তদন্তকারী অফিসার তাহার তদন্ত শেষে যদি অভিযুক্ত বা সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মামলায় ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৭০ ধারা মোতাবেক পর্যপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ প্রাপ্ত হন, তবে তিনি আসামী বা আসামীদের বিরুদ্ধ্বে আইনের প্রযোজ্য ধারায় অভিযোগপত্র বা চার্জসিট দাখিল করেন। উহাতে মামলার যাবতীয় তথ্য থাকে। এমনকি আসামীর পূর্ব ইতিহাস ও পূর্ব দন্ড (যদি থাকে) উল্লেখ করা হয়। অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে মামলার কার্যক্রম শুরু হয় (পিআরবি-২৭২)।
চুড়ান্ত রিপোর্ট বা ফাইনাল রিপোর্টঃ
তদন্তকারী অফিসার যখন দেখেন যে, তাহার তদন্ত শেষে অভিযুক্ত বা সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করিবার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায় নাই এবং নিকট ভবিষ্যতেও পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায় না, সেই ক্ষেত্রে তিনি আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট বা ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেন (পিআরবি-২৭৫, ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৯ ধারা)। চুড়ান্ত রিপোর্ট বা ফাইনাল রিপোর্ট পাচ প্রকার হয়। যেমন-
(ক) চুড়ান্ত রিপোর্ট সত্য,
(খ) চুড়ান্ত রিপোর্ট মিথ্যা,
(গ) চুড়ান্ত রিপোর্ট তথ্যগত ভূল,
(ঘ) চুড়ান্ত রিপোর্ট আইনগত ভূল,
(ঙ) চুড়ান্ত রিপোর্ট অধর্তব্য।
আমলযোগ্য অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং ক্ষমতা ও অধিকার সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হইল।
(১) দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ
(ক) আমলযোগ্য অপরাধের এজাহার গ্রহণ পূর্বক মামলা তদন্ত করা।
(খ) নিরীহ মানুষকে হয়রানী না করা।
(গ) অপরাধী চিহ্নিত করিয়া আইনে সোপর্দ করা।
(ঘ) ঘটনাস্থলের ম্যাপ বা মানচিত্র তৈরী করিয়া ঘটনার সঠিক পরিচয় আদালতে উপস্থাপন করা।
(ঙ) সাক্ষীদের নিকট হইতে তদন্ত সহায়ক তথ্য সংগ্রহ করা।
(চ) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৫৬ ধারামতে সঠিকভাবে তদন্ত করা।
(ছ) আদালত সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আদেশ দিলে বর্ধিত তদন্ত করা।
(জ) আমলযোগ্য অপরাধের এজাহার কেউ না দিলেও পুলিশকে তদন্ত করিতে হইবে।
(ঝ) কোনো বিলম্ব ছাড়াই তদন্ত করিতে হইবে।
(ঞ) বর্ধিত তদন্ত অধিক গুরুত্বসহ করিলে নতুন তথ্য বাহির হইয়া আসিতে পারে।
(ট) সন্দেহজনক হত্যার ঘটনার তদন্তে তদন্তকিট তথা যন্ত্রপাতি সাথে নিতে হইবে।
(ঠ) প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বস্তু সাক্ষ্য সংগ্রহ করিয়া বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে হইবে।
(ড) ঘটনাস্থল দ্রুত পরিদর্শন, বস্তু সাক্ষ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করিতে হইবে।
(ঢ) সকল প্রকার তদন্তের ব্যবস্থা করা অফিসার ইনচার্জ এর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।
(ণ) আমলযোগ্য অপরাধের তদন্ত না করিলে অফিসার ইনচার্জ এর দায়িত্ব ও কর্তব্য হইল কারণসমূহ বিশেষভাবে জিডিতে নোট করা।
(ত) অফিসার ইনচার্জ তাহার অধিক্ষেত্রের বাহিরেও তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করিতে পারেন।
(থ) তদন্তকালে সাক্ষী আসিতে না পারিলে প্রয়োজনে সাক্ষীর বাড়ি গিয়া সাক্ষ্য গ্রহণ করা।
(দ) কোনো বিরতি ছাড়াই মামলা তদন্ত করা।
(ধ) তদন্ত প্রতিবেদন বিলম্ব ছাড়াই আদালতে দাখিল করা।
(ন) নির্ধারিত তারিখের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করা।
(প) সঠিকভাবে তদন্ত শেষ করিয়া আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা।
(২) ক্ষমতা ও অধিকারঃ
(ক) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬০ ধারা মোতাবেক সাক্ষী তলবের ক্ষমতা।
(খ) ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াই তদন্ত করা।
(গ) পুলিশের তদন্তে আদালত হস্তক্ষেপ করিতে পারিবে না।
(ঘ) অফিসার ইনচার্জ এর তদন্তের ক্ষমতা অন্য অফিসারকে দিতে পারেন।
(ঙ) তদন্তকালে যেকোনো ব্যক্তিকে তদন্তকারী অফিসার প্রশ্ন করিতে পারেন।
(চ) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬১ ধারার জবানবন্দী গ্রহণকালে সাক্ষী প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য।
(ছ) ধর্তব্য অপরাধ গুরুত্বর প্রকৃতির না হইলে এবং পর্যাপ্ত কারণ না থাকিলে অফিসার ইনচার্জ তদন্ত অস্বীকার করিবার অধিকার রাখেন।
(জ) অফিসার ইনচার্জ এর কোনো মামলার তদন্ত গ্রহণ করার বিষয়ে বিচার বুদ্ধি প্রয়োগের অধিকার আছে।
(ঝ) অফিসার ইনচার্জ সকল মামলার তদন্ত করিবার অধিকার রাখেন।
(ঞ) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৫৭ ধারা মোতাবেক তদন্ত অস্বীকার করার অধিকার অফিসার ইনচার্জ এর আছে।
(ট) পুলিশ অফিসারের তদন্তকাজে কোনো পর্যায়ে কোনো প্রশ্ন উথ্যাপন করা যাইবে না।