⚖️ অপরাধ বিশ্লেষণ বলিতে কি বুঝায়?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 2 weeks ago
- Category: অপরাধ বিজ্ঞান
অপরাধ বিশ্লেষণ (Crime Analysis) বলিতে অপরাধ এবং অপরাধীদের সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করাকে বুঝায়। অপরাধ বিজ্ঞানে এই বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ইহার মাধ্যমে যথাসময়ে অপরাধের ধরণ, অপরাধের প্রবণতা, অপরাধে সংশ্লিষ্টতা, পারস্পারিক সম্পর্ক ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। অপরাধ বিশ্লেষণ বিভিন্নভাবে করা যাইতে পারে। যেমন-
(১) পরিকল্পিত (Tactical) অপরাধ বিশ্লেষণঃ
এই ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধ চিহ্নিত করিয়া অপরাধ দমনে ব্যবস্থা করা যায়। এইভাবে প্রাপ্ত তথ্য কোনো আইন শৃঙ্গখলা বাহিনী বা তদন্তকারী সংস্থাকে বিশেষ ধরণের অপরাধ প্রবণতা ও অপরাধী গ্রেফতারে সহায়তা করে। প্রাথমিক কাজটি হইল- অপরাধ প্রবণতা এবং ইহার ধরণ চিহ্নিত করা। এইক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্য দ্বারা অপরাধী কি অপরাধ প্রক্রিয়া (Modus operandi) ব্যবহার করিয়াছে তাহা তদন্তকারী অফিসার জানিতে পারিবেন এবং আসামীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হইবে। অপরাধের গুরুত্ব, প্রকৃতি, ধরণ, অপরাধীর শারীরিক বর্ণনা, তাহারা কি ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করিয়াছে, তাহা জানা যাইবে। অপরাধ বিশ্লেষণ হইল- বিশেষ টেকনিকসমূহের সমন্বয়।
(২) কৌশলগত (Strategic) অপরাধ বিশ্লেষণঃ
এইক্ষেত্রে তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা এবং চলমান সমস্যা নিরসন করা যাইবে। ইহার ইদ্দেশ্য হইতেছে-
(ক) অস্বাভাবিক অপরাধ কার্যক্রম বিশেষ পর্যায়ে চিহ্নিত করা,
(খ) সমাজের অস্বাভাবিকতা চিহ্নিত করা এবং পুলিশকে সঠিকভাবে কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে সমাজের চাহিদা পূরণে সাহায্য করা,
(গ) অপরাধ দমনে বা প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশিং এর বাস্তবতা নিরুপন করা,
(ঘ) কোথায়, কখন, কতটুকু পুলিশ ফোর্স নিয়োজিত করা হইবে, তাহা নিশ্চিত করা।
(৩) প্রশাসিক (Administrative) অপরাধ বিশ্লেষণঃ
এইক্ষেত্রে তথ্য বিশ্লেষণ দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় এবং সেইভাবে পুলিশ প্রশাসন প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করিয়া থাকে, বিশেষ করিয়া অর্থনৈতিক সংস্থাগুলি সম্পর্কে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তথা পুলিশকে সবসময়েই প্রাপ্ত সংবাদ এবং তথ্যের ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করিতে হয় বা পরিচালনা করিতে হয়। প্রাপ্ত তথ্যাদি যত বেশি দক্ষতার সহিত বিচার বিশ্লেষণ করা যাইবে, কর্মক্ষেত্রে তত বেশি সফলতা পাওয়া যাইবে। তাই অপরাধ তথ্য বিশ্লেষণ সব সময়েই সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে হইতে হইবে এবং বিশ্লেষণে লব্দ ফলাফলও সঠিক সুপারিশ ভিত্তিক হইতে হইবে। অন্যথায় পুলিশি তদন্তে অথবা পুলিশি অভিযানে কখনো সুফল পাওয়া যাইবে না। তাই সঠিক তথ্য পাইয়া বা সংগ্রহ করিয়া সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা সর্বক্ষেত্রেই অপরিহার্য। একজন ক্রাইম এনালিষ্ট সঠিকভাবে অপরাধ বিশ্লেষণ করিয়া সঠিক তথ্য দিতে পারেন।
জ্ঞান অর্জনঃ
অপরাধ বিশ্লেষণ দ্বারা যেসকল বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হইতে পারে, সেইগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হইলঃ
(১) কোনো এলাকার কোনো বিশেষ সময়ের অপরাধ প্রবণতা;
(২) অপরাধের প্রকৃতি বা ধরণ;
(৩) অপরাধে কে বা কাহারা জড়িত;
(৪) অপরাধীদের অপরাধ প্রক্রিয়া;
(৫) অপরাধী দলের প্রকৃতি এবং তাদের অপরাধের ক্ষেত্র;
(৬) অপরাধীদের অবস্থান;
(৭) অপরাধীদের বর্তমান ও আগামী পরিকল্পনা;
(৮) অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন;
(৯) অপরাধী দলবদ্ধ এবং পেশাদার কিনা;
(১০) অপরাধীদের বিরুদ্ধে ঠিক কখন অভিযান চালাইলে তাহাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হইতে পারে ইত্যাদি।
কিভাবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগাবেঃ
(ক) উপর্যুক্ত জ্ঞানের বিষয়গুলি আয়ত্ব করিয়া যথাসময়ে কাজে লাগানো,
(খ) সঠিক সময়ে সঠিকভাবে অভিযান পরিচালনা করা,
(গ) অপরাধ বিশ্লেষণে প্রাপ্ত সুপারিশের ভিত্তিতে অপরাধ প্রবণ এলাকায় পুলিশ টহল জোরদার করা,
(ঘ) বিশেষ এলাকার জন্য বিশেষ বাহিনী তৈরি করা,
(ঙ) সুপারিশের ভিত্তিতে জনবল, অস্ত্রবল, মনোবল, অর্থবল এবং আনুসঙ্গিক ব্যবস্থা বা সুবিধাসমূহ বৃদ্ধি করা,
(চ) আন্ত বিভাগীয় যোগাযোগ বৃদ্ধি করা এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা,
(ছ) সংগৃহীত তথ্য সুবিন্যস্ত করিয়া নিবিড় নিরীক্ষা দ্বারা নিয়মিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা,
(জ) ইন্টারনেট/কম্পিয়টার এর মাধ্যমে Mapping এর সহায়তায় অপরাধীদের চলাচলের তথ্য সংগ্রহ করিয়া ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি।