⚖️ স্বীকারোক্তি বলিতে কি বুঝায়?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 2 weeks ago
- Category: সাক্ষ্য আইন
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৭ ধারায় স্বীকৃতির সংজ্ঞা প্রদান করা হইলেও কোথাও স্বীকারোক্তির সংজ্ঞা প্রদান করা হয় নাই। তবে উক্ত আইনের ২৪ হইতে ৩০ ধারা সমূহে স্বীকারোক্তির বিষয় সমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে। কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক তাহার কৃত অপরাধ সরাসরি স্বীকার করা বুঝায়। নিজেকে জড়াইয়া যে বিবৃতি দেওয়া হয় তাহাই স্বীকারোক্তি। যে সকল কাজের দ্বারা অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে, বিবৃতিতে সেই সকল বিষয় থাকিতে হয়। এই বিবৃতি স্বেচ্ছা প্রণোদিত হইতে হয়। ভয়, প্রলোভন বা ফুসলাইয়া বিবৃতি গ্রহণ স্বীকারোক্তি নহে। সাক্ষ্য আইনের ২৪ হইতে ২৬ ধারায় বিবৃতি স্বীকারোক্তি হিসাবে গণ্য হয় না। তাই এইগুলি আইনে প্রাসঙ্গিকতা পায় না।
সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারায় পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন কোনো ব্যক্তির দোষ স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক হয় না, যদি না তাহার এইরূপ স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে অভিযোগের সহিত সম্পর্কযুক্ত কোনো আলামতের অর্থাৎ অপরাধ সংক্রান্ত কোনো বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায় এবং সেই অনুসারে যদি কোন আলামত উদ্ধার হয়। তবে সেই বিবৃতিতে যে অংশ শুধুমাত্র উদ্ধারকৃত বিষয়ের সহিত স্পষ্টরূপে সংশ্লিষ্ট, সেই অংশটি স্বীকারোক্তিতে থাকুক বা না থাকুক এই ধারামতে প্রাসঙ্গিক। যেমন- ঘটনার সময়ে যে পিস্তল দিয়া গুলি চালাইয়াছিল এবং ঘটনার পর পিস্তলটি খরেড় গাদায় লুকাইয়া রাখিয়াছিল। তাহার বক্তব্যমতো খড়ের গাদা হইতে পিস্তলটি উদ্ধার হয়। এই উদ্ধারের বিষয়টি প্রাসঙ্গিগ এবং আলামতটি আদালতে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য। কিন্তু স্বীকারোক্তিকারীর এই বক্তব্য “ঘটনার সময়ে আমি পিস্তল দিয়া গুলি চালাইয়াছিলাম” এই কথাগুলি সরাসরি সম্পৃক্ত নহে বিধায় সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারায় গ্রহণযোগ্য নহে।
সাক্ষ্য আইনের ৩০ ধারা অনুসারে যখন একই অপরাধে একাধিক ব্যক্তির যৌথভাবে বিচার কার্যক্রম চলে, তখন আসামীদের মধ্যে যে কোনো একজন দোষ স্বীকার করিয়া নিজেকে জড়াইয়া সহযোগীদের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতি দিলে উক্ত স্বীকারোক্তি আদালতে সহযোগী আসামীদের বিরুদ্ধে প্রাসঙ্গিগ এবং গ্রহণীয়। যে স্বীকৃতি বা স্বীকারোক্তি সহযোগী বা অন্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে দেওয়া হয় এবং এই বিবৃতিতে যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি ঐক্যমত্য পোষণ করে, তাহা হইলে উক্ত বিবৃতি সহযোগী আসামীর বিরুদ্ধে প্রমাণে বাধা নাই। তবে এই ধরনের সাক্ষ্য দুর্বল সাক্ষ্য। অন্যকোনো সমর্থন প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ নিরপক্ষ সাক্ষ্য দ্বারা দৃঢ়ভাবে সমর্থিত হইলে উহা ভালো সাক্ষ্য হইতে পারে। তাছাড়া স্বীকারোক্তিটি আইন মোতাবেক প্রমাণিত হইতে হইবে।
সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারার বিধান অনুসারে অপরাধের সহযোগী বা সহায়তাকারী একজন যোগ্য সাক্ষী অর্থাৎ প্রাসঙ্গিক ও গ্রহণীয় সাক্ষ্য। তবে এইক্ষেত্রে আসামীর স্বীকারোক্তি নহে বরং বিবৃতি সাক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করা হইয়াছে। এখানে সমর্থনযোগ্য সাক্ষ্যের বিষয়ে কিছু বলা হয় নাই। ফৌজদারী কার্যবিধি আইন এর ৩৩৭ ধারার বিধান মোতাবেক একজন রাজসাক্ষীর সাক্ষ্যও সহযোগী আসামীর বিরুদ্ধে অন্য আসামীর সাক্ষ্য প্রদান করা হয়। সহযোগীর সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি প্রদান করিলে এই ধরনের সাক্ষ্য প্রাসঙ্গিক, বিশ্বাসযোগ্যা এবং গ্রহণযোগ্য।