⚖️ অপহরণ মামলা তদন্তের নিয়ম কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 12 hours ago
- Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
-
বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৩৬২ ধারা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ২(খ) ধারা মোতাবেক অপহরণ অর্থ বলপ্রয়োগ বা প্রলুব্ধ করে বা ফুসলায়ে বা ভূল বুঝায়ে বা ভীতি প্রদর্শন করে কোনো স্থান হতে কোনো ব্যক্তিকে অন্যত্র যেতে বাধ্য করা। অপহরণ মামলা দুই ধরণের হতে পারে। যেমন-
(১) ১৮ বৎসরের নিচে যে কোনো শিশু অথবা যে কোনো বয়সের নারী অপহরণ হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৭ ধারা মোতাবেক মামলা হবে।
(২) ১৮ বৎসরের উর্ধ্বে যে কোনো পুরুষ অপহরণ হলে অবস্থাভেদে দন্ডবিধির ৩৬৩, ৩৬৪, ৩৬৫ ধারায় মামলা হবে।
অপহরণ মামলা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা। মামলা রুজু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্তকারী অফিসারকে তৎপর থাকতে হবে। দ্রুত মামলার ঘটনাস্থল বা অপরাধস্থল পরিদর্শন করে ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র সূচীপত্রসহ প্রস্তুত করতে হবে। ঘটনাস্থলে কোনো আলামত পাওয়া গেলে তা জব্দ করতে হবে। মামলার বাদীকেসহ প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা মোতাবেক সাক্ষীর জবানবন্দী রেকর্ড করতে হবে। ঘটনায় জড়িত আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা করতে হবে। আসামীকে গ্রেফতারের পর ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। আসামী ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক আসামীর জবানবন্দী রেকর্ড করতে হবে। অতি দ্রুত ভিকটম উদ্ধারের চেষ্টা করতে হবে। ভিকটিম উদ্ধার হলে মামলাটি যদি দন্ডবিধি আইনে হয়ে থাকে তাহলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ভিকটিমের জবানবন্দী রেকর্ড করতে হবে। মামলাটি যদি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হয়ে থাকে তাহলে উক্ত আইনের ২২ ধারা মোতাবেক ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ভিকটিমের জবানবন্দী রেকর্ড করতে হবে।
তদন্তকারী অফিসারকে মনে রাখতে হবে অপহরণ মামলার মূল সাক্ষী হচ্ছে ভিকটিম। ভিকটিম ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট যে জবানবন্দী প্রদান করবেন তা পুংখানুপুংখভাবে বিশ্লেশণ করে তদন্তকারী অফিসারকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ভিকটিমের জবানবন্দীর সমর্থনযোগ্য অন্যান্য সাক্ষী সংগ্রহ করতে হবে। ভিকটিম যদি নারী বা শিশু হয়ে থাকে তাহলে অপহরণ অবস্থায় ভিকটিম আসামী কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করতে হবে। ধর্ষিত হয়ে থাকলে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ভিকটিমের ধর্ষণ ও বয়স নির্ধারণ সংক্রান্ত ডাক্তারী পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ভিকটিম ধর্ষিত হয়ে থাকলে ধর্ষণ সংক্রান্তে তদন্তকারী অফিসারকে তদন্ত করতে হবে এবং অপহরণের সঙ্গে ধর্ষণের ধারা যুক্ত করতে হবে। পরিশেষে মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহিত আলোচনা সাপেক্ষে আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। ভিকটিম ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করলে এবং মামলার তদন্তকালে ঘটনার সত্যতা পাওয়া না গেলে তদন্তকারী অফিসার আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করবেন এবং বাদীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১৭ ধারা মোতাবেক মামলা করার জন্য অনুমতি নিবেন। মামলাটি দন্ডবিধি আইনে হয়ে থাকলে বাদীর বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ২১১ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করবেন।