⚖️ অপরাধস্থল বা ঘটনাস্থল এর গুরুত্ব
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 2 weeks ago
- Category: অপরাধ বিজ্ঞান
কোনো অপরাধের বা মামলার ঘটনাস্থল একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা, মামলাটির তদন্তকার্যক্রম ঘটনাস্থল হইতেই পুলিশকে শুরু করিতে হয়। তাই কোনো তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকে সংশ্লিষ্ট অপরাধী সনাক্তকরণ ও তাহার শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তথা এলাকার শৃংখলা বিধানকল্পে অতিদ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়া পৌছাইতে হয়। ঘটনাস্থলে পৌছিয়াই উহাকে ভালভাবে সংরক্ষিত ও নিরাপদ করিতে হয়। ইহাতে তদন্তকাজে সফলতা আসে। কেননা, কোনো ঘটনার পর ঘটনাস্থলে অপরাধের নানাবিধ সূত্র প্রকাশ্যে ও গোপনে ছড়াইয়া ছিটাইয়া থাকে। তদন্তকারী অফিসার বিলম্বে ঘটাস্থলে পৌছিলে অনেক মূল্যবান সূত্র হারাইয়া বা নষ্ট হইয়া যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। ঘটনাস্থল হইতে যথাসময়ে বস্তুসাক্ষ্য সংগ্রহ করিয়া সংরক্ষণ করিতে না পারিলে মামলা উদঘাটনে তদন্তকারী অফিসার সফলতা হারাইয়া ফেলিতে পারেন এবং মামলার সুরাহা সুদুর পরাহত হইতে পারে। ঘটনাস্থলে পৌছিয়া তদন্তকারী অফিসার নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সহজেই অবহিত হইতে পারেনঃ
(১) কি ঘটিয়াছে;
(২) কোথায় ঘটিয়াছে;
(৩) কে বা কারা ঘটনা ঘটাইয়াছে;
(৪) কিভাবে ঘটিয়াছে;
(৫) অপরাধ সংঘটিত হওয়ার প্রধান কারণ কি কি;
(৬) মামলাটি সত্য না মিথ্যা;
(৭) বস্তুগত সাক্ষ্য সংগ্রহ, মালামাল উদ্ধার, অপরাধী গ্রেফতার ইত্যাদি।
ঘটনাস্থল হইতে আলামত সংগ্রহে তদন্তকারী অফিসারকে ঘটনাস্থলে পৌছিবার সাথে সাথে বিশেষ সতর্ক থাকিতে হইবে। প্রথমেই ঘটনাস্থল সংরক্ষন করিতে হইবে। যাহাতে কোনো অনুপ্রবেশকারী ঘটনাস্থলের আলামত নষ্ট বা সরাইয়া নিতে না পারে, সেই দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখিতে হইবে। ঘটনাস্থলটিকে চারিদিক হইতে বেষ্টনী দিয়া আবদ্ধ করিতে হইবে। বেষ্টনীর ভিতরে যাহারা অবস্থান করিবে, তাহাদেরকে সতর্ক থাকিতে হইবে- যাহাতে তাহাদের কোনো ক্রিয়াকর্মে যেন কোনো আলামত কোনোভাবেই নষ্ট বা কাজের অনুপযোগী না হয়। আলামত বা বস্তুসাক্ষ্য সংগ্রহে কোনোরূপ তাড়াহুড়া করা যাইবে না। ধীরস্থিরভাবে, মনোযোগ সহকারে এবং অতি সাবধানতার সাথে আলামত সংগ্রহ করিতে হইবে। আলামতের প্রকৃতি ও ধরণ এবং উপযুক্ততার প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া আলামত সংগ্রহ ও সংরক্ষন করিতে হইবে এবং যত্নসহকারে নিয়মনীতি মানিয়া বিশারদের নিকট পাঠাইতে হইবে।
বস্তুসাক্ষ্য সংগ্রহের পূর্বে করণীয়ঃ
(১) বস্তুসাক্ষ্য সংরক্ষণ ও সংগ্রহের পূর্বে ঘটনাস্থলকে নিরাপদ বেষ্টনীর মধ্যে রাখিতে হইবে। তদন্তকারী অফিসার এবং বিশারদ কর্তৃক ঘটনাস্থল পরীক্ষা, খসড়া মানচিত্র অংকন, প্রয়োজনীয় নোট গ্রহণ, আলোকচিত্র গ্রহণ, বিভিন্ন ছাঁচ তৈরিকরণ তথা বস্তুসাক্ষ্য যথাযথ সংরক্ষণ ও সংগ্রহ এই বেষ্টনীর মধ্যেই করিবেন।
(২) কোনো কিছুতে হাত দেওয়া, কিছু পরিবর্তন করা যাইবে না।
(৩) অনাকাংখিত ব্যক্তি বা পশু-পাখি ও জীবজন্তুর প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকিবে।
(৪) কোনো নগণ্য বস্তুসাক্ষ্যও যাহাতে হারাইয়া বা অন্য কিছুর সহিত মিলিয়া মিশিয়া না যায়, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে।
(৫) বিভিন্ন আঙ্গিকে ঘটনাস্থলের আলোকচিত্র উঠাইতে হইবে।
(৬) প্রত্যেকটি ছবির ক্রমিক নম্বর, বিষয়বস্তু, আলোর মাত্রা, এ্যাপারচার স্পিড, ক্যামেরার অবস্থান ইত্যাদি নোট বহিতে লিখিয়া রাখিতে হইবে।
(৭) বস্তুসাক্ষ্য নষ্ট হইতে পারে এমন বাস্তব পরিস্থিতি প্রথমেই ঠিক করিয়া নিতে হইবে।
(৮) ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র অঙ্কন করিয়া উহাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি চিহ্নিত করিয়া দিতে হইবে (পিআরবি ২৭৩)।
(৯) ঘটনাস্থলে অপরাধীর ফেলিয়া যাওয়া আঙ্গুলের ছাপ, পায়ের ছাপ ইত্যাদি যাহাতে নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখিতে হইবে।
(১০) উপর্যুক্ত কার্যক্রমগুলি গ্রহণ করিয়া তদন্তকারী অফিসার ঘটনাস্থল গভীর মনোযোগ সহকারে সুতীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করিয়া বস্তুসাক্ষ্য সন্ধান করিবেন এবং অতঃপর সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করিবেন।