⚖️ সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভুমিকা

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 1 week ago
  • Category: অপরাধ বিজ্ঞান
যেকোনো দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রহিয়াছে। এই অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাত্রা যোগ হইয়াছে। সেই প্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ প্রনয়ণ করা হইয়াছে। উল্লিখিত বিষয়ে আইনী বৈধতা ও নিরাপত্তার স্বার্থেই আইনটি করা হইয়াছে। তবে আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নই হইল মূল কথা। এই আইনে সাইবার অপরাধের সংজ্ঞা, বিচার পদ্ধতি ও শাস্তির বিধান করা হইয়াছে। বিচার হইবে সাইবার ট্রাইব্যুনালে। সর্বোচ্চ সাজা এককোটি টাকা পর্যন্ত হইতে পারে। পুলিশের কমপক্ষে একজন সাব-ইন্সপেক্টরের রিপোর্টের ভিত্তিতে এবং এই আইনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুমোদনে অভিযোগ করা হইলে ট্রাইব্যুনাল (জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ) বিচার আমলে নিবেন। 

 

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ, চিহ্নিত বা দমন করার জন্য IT Expert দের সমন্বয়ে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং সিআইডিতে বিশেষ স্কোয়াড গঠন করা হইয়াছে। 

 

বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম তেমন ব্যাপক না হইলেও গত কয়েক বৎসর ধরিয়া কম্পিউটারকে যন্ত্র বা Tool হিসাবে ব্যবহার করিয়া সাইবার অপরাধীরা বাংলাদেশে জালমুদ্রা, জাল স্ট্যাম, জাল পাসপোর্ট বা আইডি কার্ড, ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড এবং নকল দলিলপত্র তৈরি করিয়া থাকে।

 

বাংলাদেশের জন্য এই ধরণের অপরাধ একটি ব্যতীক্রমধর্মী অপরাধ এবং যাহারা কম্পিউটার বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা সম্পন্ন তাহারাই সাইবার ক্রাইম করিতে সক্ষম। তাই পুলিশ তথা তদন্তকারী অফিসারকে এই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে সব ধরণের তত্বীয় এবং ব্যবহারিক জ্ঞান লাভ করিতে হইবে এবং দক্ষতা লাভ করিতে হইবে। ১৯৪৬ সালে আধুনিক কম্পিউটার আবিস্কৃত হইলেও উহার বাস্তব প্রয়োগ বাংলাদেশে শুরু হয় আশির দশকে। তবে উপযুক্ত প্রযুক্তি বিশারদ বাংলাদেশে সঠিকভাবে তৈরি না হওয়ায় বাংলাদেশ পুলিশ পিছাইয়া পড়ে। তবে গত দশকের মাঝামাঝি হইতে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশারদ তৈরি হইয়াছে। অপরাধীর modus operandi এর নীতিমালা অধ্য্যনের জ্ঞান হইতে জানিতে হইবে যে, অপরাধীরা যে পদ্ধতিতে অপরাধ করিতে সাচ্ছন্দ লাভ করে এবং সফলতা লাভ করে, পরবর্তীতে তাহারা সেই পদ্ধতি বার বার অপরাধ কাজে প্রয়োগ করিয়া থাকে। 

 

সাইবার ক্রাইম একটি প্রযুক্তি নির্ভর অপরাধ এবং উহার বিভিন্ন প্রকার ও ধরণ রহিয়াছে। একই কাজ বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পন্ন করা হয়। সাধারণ লোকের দ্বারা সেই অপরাধ প্রক্রিয়া জানা বা বুঝা সম্ভব নহে। তাই প্রত্যেক তদন্তকারী অফিসারকে কম্পিউটার প্রযুক্তি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করিতে হইবে এবং প্রয়োজনে প্রযুক্তি বিশারদের সাহায্য ও মতামত গ্রহণ করিতে হইবে। যেমন- যাহারা হ্যাকিং করিয়াছে, তাহাদের চিহ্নিত করিতে তাহাদের ব্যবহূত ID তথা তাহাদের Profile সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করিতে হইবে এবং প্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় তথ্য যাচাই বাছাই করিয়া অপরাধীদের সঠিক ঠিকানা ও অবস্থান চিহ্নিত করিতে হইবে। অপরাধী ছলনার আশ্রয় নিতে পারে। উহা খেয়াল রাখিতে হইবে। তাই বলা যায় যে, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করিতে হইলে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে পুলিশকে সম্যক জ্ঞান অর্জন করিতেই হইবে। 

 

অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে যেমন সুনির্দিষ্ট একটি ঘটনাস্থল থাকে, এইক্ষেত্রে সেইরকম কোনো ঘটনাস্থল থাকিতে নাও পারে। কারণ এই ধরণের অপরাধের ক্ষেত্রে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করিয়া অপরাধটি করিয়া থাকে। যেমন- কোনো অপরাধী ব্যক্তি বা সংঘবদ্ধ দল কোনো সাইবার ক্যাফেতে বসিয়া অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করিয়া ঐ স্থান হইতে দূরবর্তী কোনো প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হইতে থাকা কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপরাধটি সংঘটন করিতে পারে। এই ক্ষেত্রে অপরাধের ঘটনাস্থল উল্লিখিত সাইবার ক্যাফে এবং ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার কক্ষ- এই দুইটাই অপরাধের ঘটনাস্থল। উভয় ঘটানাস্থল হইতেই তদন্তকারী অফিসারকে অপরাধ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি বা অন্যান্য দ্রব্য মামলার আলামত হিসাবে জব্দ করিতে হইবে এবং প্রয়োজনে বিশারদের মতামত গ্রহণ করিতে হইবে। উল্লেখ্য যে, সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে বহুসংখ্যক ঘটনাস্থলও থাকিতে পারে।