⚖️ অপরাধীর আঙ্গুলের ছাপকে ভিজিটিং কার্ড বলা হয় কেন?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 2 weeks ago
  • Category: অপরাধ বিজ্ঞান
কোনো অপরাধীকে সনাক্তকরণের সর্বোত্তম পদ্ধতি হইল আঙ্গুলের ছাপের তুলনামুলক পরীক্ষা। অপরাধের ঘটনাস্থলে আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া গেলে তা যদি সন্দিগ্ধ ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপের সহিত মিলিয়া যায়, তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, উক্ত সন্দিগ্ধ ব্যক্তি ঘটনাস্থলে হাজির ছিল। কোনো অপরাধীর ঘটনাস্থলে আঙ্গুলের ছাপ পাওয়ার অর্থ যেন এই যে, সে নিজের নাম ঠিকানা সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড সেখানে রাখিয়া আসিয়াছে। কোনো ভিজিটিং কার্ড হইতে যেমন কোনো ব্যক্তিকে খুঁজিয়া বাহির করা সম্ভব, তেমনি ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত আঙ্গুলের ছাপ দ্বারা অপরাধীকে নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা যায়। সেই কারণেই কোনো অপরাধের ঘটনাস্থলে অপরাধী কর্তৃক ফেলাইয়া যাওয়া আঙ্গুলের ছাপকে পরিদর্শন কার্ড বা Visiting card  বলা হইয়া থাকে। 

 

ঘটনাস্থলে সাধারণত তিন ধরণের আঙ্গুলের ছাপ দেখিতে পাওয়া যায়। যেমন-

 

(১) খোদাই ছাপ (Plastic print): কোনো নরম দ্রব্যের উপর হাত রাখিবার ফলে এই ছাপ পড়ে। মাখন, মোম, ধুলার আস্তর, পেস্ট, সাবান, ফোম ও জেলি ইত্যাদিতে অপরাধীর আঙ্গুলের খোদাই ছাপ থাকে। তাই তদন্তকারী অফিসারকে দেখিতে হইবে ঘটনাস্থলে এই সকল দ্রব্যে অপরাধীর আঙ্গুলের ছাপ আছে কিনা।  

 

(২) দৃশ্যমান ছাপ (Visible print); আঙ্গুলে রঙিন বা রঞ্জক জাতীয় পদার্থ লাগিয়া থাকিলে উক্ত হাতের ছাপ যেখানে পড়িবে, সেখানেই দৃশ্যমান ছাপ তৈরি হইবে। সাধারণত রক্ত, কালি, ময়লা, শ্যাওলা, রং ইত্যাদি দ্বারা দেওয়ালে, দরজা, জানালা, মেঝে বা অন্যান্য তলে রঙিন ছাপ পাওয়া যায়। 

 

(৩) সুপ্ত ছাপ (Latent print): সুপ্ত ছাপ সাধারণত চোখে দেখা যায় না বিধায় এই ক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসার বা আঙ্গুলাংক বিশারদকে কোনো মসৃণ তলের উপর আলো ফেলিয়া বা বিশেষ ধরণের সূক্ষ্ম পাউডার স্প্রে করিয়া ছাপকে দৃশ্যমান করিয়া ছবি উঠাইতে হয়। 

 

উল্লেখিত ছাপপ্রাপ্ত হইয়া তদন্তকারী অফিসার সরাসরি ছবি উঠাইয়া সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করিতে পারিবেন। তবে ছবি অবশ্যই স্বাভাবিক আকৃতির যেন হয় এবং প্রয়োজনে পরে বড় করা যায়। ছবিগুলি আঙ্গুলাংক শাখায় সংরক্ষিত থাকিবে। তাছাড়া সেলুলয়েট পেপারের সাহায্যে আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করিয়া এই পেপারে সংরক্ষণ করিয়া রাখা যায়। সেলুলয়েট পেপারের সংরক্ষিত ছাপের ছবি সহজেই উঠানো যায় এবং প্রয়োজনে বড় করা যায়। তদন্তকালে সংগ্রহকৃত এবং সংরক্ষিত আঙ্গুলের ছাপ পরবর্তীতে আঙ্গুলাংক শাখায় (FBP-তে) সংরক্ষণ করা হইয়া থাকে। 

 

উপর্যুক্তভাবে সংরক্ষিত আঙ্গুলের ছাপের সহিত সন্দিগ্ধ ব্যক্তির নমুনা ছাপের তুলনামূলক পরীক্ষা করিয়া বিশেষজ্ঞ সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করিলে, সেই অনুসারে তদন্ত করিয়া অপরাধীকে সঠিকভাবে সনাক্ত করা যায় এবং ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়। কেননা আঙ্গুলের ছাপের সাথে মিলিয়া গেলে অপরাধীর ঘটনার সাথে অভ্রান্তভাবে যোগসূত্র স্থাপিত হয়। সাক্ষ্য আইনের ৪৫ ধারামতে বিশেষজ্ঞের মতামত বা এই বস্তুসাক্ষ্য আদালতে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য।