⚖️ দায়রা আদালতের বিচার পদ্ধতি কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 3 weeks ago
- Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
-
সকল অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা ম্যাজিষ্ট্রেটের নেই, আইনে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত গুরুত্বর অপরাধ সমূহের বিচার একমাত্র দায়রা জজই করতে পারেন। কিন্তু দায়রা আদালতে বিচার্য অপরাধের মামলা সমূহও ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত হতে বিচার নিস্পত্তির জন্য দায়রা আদালতে প্রেরণ করা হয়। ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ক-২৬৫ঠ ধারায় দায়রা আদালতের বিচার পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে।
সরকারী কৌশুলী (পিপি) কর্তৃক মামলা পরিচালনা (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ক ধারা)।
দায়রা আদালত কর্তৃক প্রত্যেকটি মামলার বিচার কার্যক্রমে সরকারী কৌশুলী অভিযোগকারী অর্থাৎ সংবাদদাতার পক্ষে মামলা পরিচালনা করবেন। লিগ্যাল রিমেমব্রান্সারস ম্যানুয়েল অনুযায়ী সরকারী কৌশুলী নিয়োগ পেয়ে থাকেন।
অভিযোগকারীর পক্ষ হতে মামলা শুরু (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫খ ধারা)।
আসামী ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৫গ ধারা অনুসারে আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে সরকারী কৌশুলী আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বর্ণনা এবং কি সাক্ষ্য দ্বারা তিনি আসামীর দোষ প্রমাণ করতে চান তা বিবৃত করার মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম শুরু করবেন।
দায়রা আদালতের বিচার মূলতঃ তখনই শুরু হয় যখন উকিল মামলাটি উত্থাপন (Opening) করেন (৩৬ সিআরএলজে ৩৪৪)।
আসামীর অব্যাহতি (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫গ ধারা)।
মামলার নথি ও উহার সাথে দাকিলকৃত দলিলাদী বিবেচনা এবং আসামী ও অভিযোগকারীর পক্ষের বক্তব্য শ্রবণের পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামীর বিরুদ্ধে মামলা চালানোর কোনো পর্যপ্ত হেতু নেই তাহলে আদালত আসামীকে অব্যাহতি প্রদান করবেন এবং তদ্রুপ করার কারণ লিপিবদ্ধ করবেন।
অভিযোগ গঠনের পূর্বে দায়রা আদালত যদি বিবেচনা করেন যে, আসামীর বিরুদ্ধে কার্যক্রম গ্রহণের পর্যাপ্ত কারণ নেই তাহলে তিনি ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫গ ধারা অনুসারে আসামীকে অব্যাহতি দিবেন।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪১ক ধারার অধীনে ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুরূপ ক্ষমতা আছে (৩৭ ডিএলআর ১০৭)।
অভিযোগ গঠন (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ঘ ধারা)।
(১) উপরোক্ত উপায়ে নথি ও দলিলাদী বিবেচনা এবং শুনানীর পর যদি আদালত এ অভিমতে উপনীত হন যে, আসামী অপরাধ করেছে এরূপ মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে তাহলে আদালত আসামীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ গঠন করবেন।
(২) যেক্ষেত্রে আদালত উপধারা ১ অনুসারে অভিযোগ গঠন করবেন সেক্ষেত্রে আসামীকে প্রণীত অভিযোগ পড়ে শুনাতে ও ব্যাখ্যা করতে হবে এবং আসামী স্বীকার করে, না বিচার প্রার্থনা করে তা তাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে।
পক্ষগণের মধ্যে দেওয়ানী মামলা আছে কেবল এ অজুহাতে সহকারী দায়রা জজ আসামীকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারেন না (৪ বিএলডি ২৮৫)।
দোষ স্বীকারে দন্ডাদেশ (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ঙ ধারা)।
যদি আসামী দোষ স্বীকার করে তাহলে আদালত তা লিপিবদ্ধ করবেন এবং তার সুবিবেচনায় দন্ডাদেশ প্রদান করতে পারবেন।
খুনের মামলায় কেবল আসামীর দোষ স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে দন্ড প্রদান করা আদৌ নিরাপদ নয় (৭ বিএলডি ৪৩২)।
সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫চ ধারা)।
আসামী যদি দোষ স্বীকার করতে অস্বীকার করে বা দোষ স্বীকার না করে অথবা বিচার প্রার্থনা করে অথবা ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ঙ ধারা অনুসারে দন্ডিত না হয় তাহলে আদালত সাক্ষীদের জবানবন্দী গ্রহণের জন্য তারিখ ধার্য করবেন এবং অভিযোগকারী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাক্ষীকে উপস্থিত হতে বা দলিল বা অন্য কিছু আদালতে উপস্থাপন করতে বাধ্য করার জন্য যে কোনো প্রকার প্রসেস ইস্যু করতে পারবেন।
বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে দায়রা জজ কোনো সাক্ষীকে হাজির হতে অথবা দলিল বা অন্য কিছু উপস্থাপন করতে বাধ্য করার জন্য ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫চ ধারায় প্রসেস ইস্যু করতে পারেন (৩৭ ডিএলআর ১০৭)।
অভিযোগকারী পক্ষের সাক্ষ্য (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ছ ধারা)।
(১) উক্তরূপে ধার্য তারিখে আদালত অভিযোগকারী পক্ষের সমর্থনে উপস্থাপিত সকল সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন।
(২) আদালত তার সুবিবেচনায় কোনো একজন সাক্ষীর জেরা অন্যান্য সাক্ষীর বা সাক্ষীদের জবানবন্দী গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্থগিত রাখতে পারবেন অথবা কোনো সাক্ষীকে আরও জেরা করার উদ্দেশ্যে পুনরায় ডাকতে পারবেন।
যে সাক্ষীদের পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের নাম যদি এজাহারে উল্লেখ করা না হয় তাহলে উহা তাদের সাক্ষ্য অবিশ্বাস করার কারণ হতে পারে না (৪৫ ডিএলআর ৬৮৮)।
খালাস (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫জ ধারা)।
অভিযোগকারী পক্ষের সাক্ষী, আসামীর বক্তব্য এবং বিষয়টির উপর অভিযোগকারী পক্ষ ও আসামী পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামী অপরাধ করেছে মর্মে কোনো সাক্ষ্য নেই তাহলে আদালত খালাসের আদেশ লিপিবদ্ধ করবেন।
বাদী পক্ষের সাক্ষীদের হাজির হতে বাধ্য করার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর আসামীকে খালাস দেয়া হলে উক্ত খালাসের আদেশ ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫জ ধারার অধীন সঠিক হবে (৩৯ ডিএলআর ৩১৯)।
আত্মপক্ষ সমর্থন (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ঝ ধারা)।
(১) যেক্ষেত্রে ২৬৫ঝ ধারা অনুসারে আসামীকে খালাস দেয়া না হয়, সেক্ষেত্রে আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার এবং তজ্জন্য তার কোনো সাক্ষ্য থাকলে উহা উপস্থিত করার আহবান জানাবেন।
(২) আসামী যদি কোনো লিখিত বিবৃতি দাখিল করে তবে আদালত তা নথিতে রাখবেন।
(৩) আসামী যদি কোনো সাক্ষীকে হাজির হতে বা কোনো দলিল বা অন্য কিছু উপস্থিত করতে বাধ্য করার জন্য কোনো প্রসেস দেওয়ার আবেদন করে তবে আদালত যদি এরূপ মনে না করেন যে, (কারণ লিপিবদ্ধ করতে হবে) বিরক্তি বা বিলম্ব ঘটানো অথাবা ন্যায় বিচার ব্যাহত করার উদ্দেশ্যেই উক্ত আবেদন করা হয়েছে বিধায় আবেদন অগ্রাহ্য করা উচিৎ, তাহলে উক্তরূপ প্রসেস ইস্যু করবেন।
সওয়াল জবাব (যুক্তিতর্ক) (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ঞ ধারা)।
আসামীপক্ষের সাক্ষীদের (যদি থাকে) জবানবন্দী গৃহীত হবার পর সরকারী কৌশুলী তার বক্তব্যের সার সংক্ষেপ পেশ করবেন এবং আসামী বা তার উকিল উহার উত্তরদানের অধিকারী হবেন। তবে শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে আসামী বা তার উকিল আইনত কোনো প্রশ্নের অবতারণা করেন সেক্ষেত্রে সরকারী কৌশুলী আদালতের অনুমতিক্রমে প্রশ্নটি সম্পর্কে তার বক্তব্য পেশ করতে পারবেন।
খালাস বা দন্ডাদেশের রায় (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ট ধারা)।
যুক্তিতর্ক এবং আইনগত প্রশ্ন (যদি থাকে) শ্রবণের পর আদালত মামলার রায় প্রদান করবেন।
পূর্ববর্তী দন্ডাদেশ (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ঠ ধারা)।
যেক্ষেত্রে কোনো মামলায় ফৌজদারী কার্যবিধির ২২১ (৭) ধারা অনুসারে পূর্ববর্তী দন্ডাদেশের চার্জ করা হয় এবং আসামী অনুরূপ পূর্ববর্তী দন্ডাদেশের চার্জ স্বীকার না করে, সেক্ষেত্রে আদালত আসামীকে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ঙ অথবা ২৬৫ট ধারা অনুসারে দন্ড দানের পর পূর্ববর্তী দন্ডাদেশের চার্জ সম্পর্কে সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন এবং সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, যতক্ষন পর্যন্ত না আসামী ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ঙ বা ২৬৫ট ধারা অনুসারে দন্ডাদেশ প্রাপ্ত হয়, ততক্ষণ আদালত উক্তরূপে কোনো চার্জ পড়ে শুনাবেন না অথবা আসামীকেও দোষ স্বীকার করতে বলা হবে না।