⚖️ কিশোর অপরাধ নিবারণে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইতে পারে?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 2 weeks ago
- Category: অপরাধ বিজ্ঞান
শিশু আইন ২০১৩ এর ৪ ধারা মোতাবেক অনুর্ধ ১৮ বৎসর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসাবে গণ্য। এই আইন মোতাবেক কিশোরও শিশু হিসাবে গণ্য এবং “কিশোর অপরাধী” বা আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু অর্থ এইরূপ কোনো শিশু যাহাকে অপরাধ বা দোষ করিতে দেখা যায়। প্রায় দেশেই কিশোর সাধারণত ১৭-১৮ বৎসরের কম বয়স্কদেরকে বুঝানো হইয়াছে। এই শিশু-কিশোর কর্তৃক কৃত অপরাধ বা দোষই হইল কিশোর অপরাধ । বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ বা দোষ নিবারণকল্পে সরকার এবং সামাজিকভাবে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যাইতে পারে। যেমন-
(১) অর্থনৈতিক উন্নতিঃ
দেশের দারিদ্রতা দূরীকরণে এবং জীবনের মান-উন্নয়নে সরকার পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করিতে পারে।
(২) পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণঃ
এই সংক্রান্তে সরকারিভাবে ব্যাপক পরিকল্পনা কার্যক্রম চালু আছে। সামাজিকভাবেও সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
(৩) গৃহ ব্যবস্থাঃ
প্রতিটি গৃহই শিশু-কিশোরের পাথমিক আশ্রয়স্থল এবং নিরাপদস্থান। সেখানে স্নেহ আদর, ভালোবাসা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সামাজিক আন্দোলন জোরদার করা প্রয়োজন।
(৪) বিদ্যালয়ঃ
গৃহের পরেই শিশু-কিশোরদের বিচরণ ক্ষেত্র হইল তাহার বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের ভুমিকা শিশুর মানসিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিক ও চারিত্রিক উন্নয়ন সেখানেই ঘটে। সরকারি ও সামাজিক কর্মকাণ্ড সেখানেও জোরদার করিতে হইবে।
পুলিশের ভুমিকাঃ
(১) কিশোর অপরাধীর বা দোষীর খোঁজ-খবর যেনো দ্রুত পুলিশের কাছে পৌছায় তার ব্যবস্থা করা।
(২) সংশোধনে ও পূনর্বাসনে পুলিশের ভূমিকা রাখিতে হইবে।
(৩) গ্রেফতারকৃত কিশোর অপরাধীদের বা দোষীদের সহিত অনানুষ্ঠানিক ও মানসিক এবং বন্ধু সুলভ প্রয়োজনে পিতৃসুলভ ব্যবহার করিতে হইবে।
(৪) দেশের জনগণকে কিশোর অপরাধী বা দোষী সম্বন্ধে সজাক করিয়া পুলিশের পরামর্শ গ্রহণের ব্যবস্থা করিতে হইবে।
(৫) অপরাধের বা দোষের গুরুত্ব অনুসারে বিচারের ব্যবস্থা করিতে হইবে।
(৬) সমাজকল্যাণ সংস্থার কাছে তাহাদের প্রেরণের ব্যবস্থা করিতে হইবে।
(৭) পুলিশ সদস্যদেরকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অপরাধ বা দোষ নিয়ন্ত্রণে আগাইয়া আসিতে হইবে।
(৮) অভিভাকের ইচ্ছানুসারে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কিশোরকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
(৯) কিশোর অপরাধের বা দোষের পিছনে যে নাটের গুরু থাকে, তাহাকে খুজিয়া বাহির করিয়া তাহার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(১০) সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করিয়া বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান ও সৎ নাগরিকের সাহায্য কিশোর অপরাধ বা দোষ নিবারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(১১) পুলিশ সদস্যরা বাংলদেশ দণ্ডবিধি আইনের ২১ ধারা অনুসারে সরকারি কর্মচারী বিধায় তাহারা জনগণের সেবক এবং বন্ধু। অন্যদিকে শিশু-কিশোররা হইল রাষ্ট্রীয় পোষ্য এবং আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই তাহাদের রক্ষা করা এবং স্বার্থ সংরক্ষণ করা পুলিশের নৈতিক দায়িত্ব ও আইনগত কর্তব্য।
(১২) পুলিশ সদস্যদেরকে শিশু আইন ২০১৩ এর বিধানাবলীর আলোকে কিশোর অপরাধীদের বা দোষীদের প্রতি যথাযথ ভূমিকা পালন করিতে হইবে।
উল্লেখ্য যে, শিশু আইন ২০১৩ এর ২(৩) ধারা অনুসারে শিশু অপরাধীকে অপরাধী বলা যাইবে না। আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু বলিতে হইবে এবং একই আইনের ৩৬(১) ধারা অনুসারে শিশু অপরাধীর ক্ষেত্রে অপরাধী, দণ্ডিত, দণ্ডাদেশ শব্দগুলি ব্যবহার করা যাইবে না। ঐ আইনের ৩৬(২) ধারা মোতাবেক অপরাধীর ক্ষেত্রে “দোষী সাব্যস্তকরণ ব্যক্তি” বা “দোষী সাব্যস্তকরণ” বা “দোষী সাব্যস্তকরণ আদেশ” শব্দগুলি ব্যবহার করিতে হইবে।