⚖️ অপরাধীদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য থানায় কি পদ্ধতি চালু আছে?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 1 day ago
- Category: পিআরবি
-
বাংলাদেশের প্রত্যেক থানাতেই PRB Appendix-XIII এ বর্ণিত রেজিষ্টার ও ফাইলপত্র, অপরাধ ও অপরাধীর তথ্য সংরক্ষণের জন্য নিয়মিত ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অপরাধীদের সম্পর্কে প্রাপ্ত এবং সংগৃহীত তথ্যসমূহ সুনির্দিষ্টভাবে থানার রক্ষিত যেসব রেজিষ্টার ও ফাইলপত্রে নিয়মিতভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে তা নিম্নে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলোঃ
(১) প্রাথমিক তথ্য বিবরণীঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারা এবং পিআরবি ২৪৩ প্রবিধান মোতাবেক বিপি ফরম নং ২৭ এর মাধ্যমে ইহা রক্ষণা-বেক্ষণ করা হয়ে থাকে। আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ থানায় প্রাপ্ত হলে অপরাধের বিবরণ, অপরাধীদের নাম ঠিকানা এবং লুন্ঠিত মালামালের বর্ণনা ইহাতে লিপিবদ্ধ করা হয়। ইহাকে এজাহার বহিও বলা হয়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীরা কি ধরণের অপরাধ প্রক্রিয়া (Modus Operandi) অবলম্বন করে তার গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা ইহাতে থাকে।
(২) হৈ চৈ বিজ্ঞপ্তি জারীঃ পিআরবি ২৫০ প্রবিধান মোতাবেক পেশাদার এবং ভ্রাম্যমান অপরাধী কর্তৃক কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে দ্রুত অপরাধী গ্রেফতার এবং লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারের নিমিত্তে বিপি ফরম নং ২৮ এর মাধ্যমে হৈ চৈ বিজ্ঞাপন বা Hue and cry notice পার্শ্ববর্তী জেলার থানা (রেলওয়েসহ) সমূহে জরুরী ভিত্তিতে পাঠানো হয়। ইহাতে অপরাধী এবং চোরাইমালের সনাক্তযোগ্য বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে।
(৩) কেস ডায়রীঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭২ ধারা এবং পিআরবি ২৬৩, ২৬৪ প্রবিধান মোতাবেক যে সকল মামলা পুলিশ তদন্ত করে থাকে, সেই সকল মামলার তদন্ত সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কেস ডায়রী (CD)-তে লিপিবদ্ধ করতে হয়। ইহা অপরাধ এবং অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহে পুলিশের ধারাবাহিক বিবরণী। অপরাধীর যাবতীয় তথ্য ইহাতে লেখা হয়।
(৪) অভিযোগপত্রঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারা এবং পিআরবি ২৭২ প্রবিধান অনুসারে পুলিশ মামলার তদন্ত শেষে বিপি ফরম নং ৩৯ এর মাধ্যমে অভিযুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে থাকে। উহাতে অভিযুক্ত অপরাধীর নাম ঠিকানাসহ অপরাধের বিবরণ লেখা হয়। যার ভিত্তিতে আদালত অপরাধীর বিচার কার্যক্রম চালু করে।
(৫) গ্রেফতারী পরোয়ানা রেজিষ্টারঃ পিআরবি ৩২৩ প্রবিধান অনুযায়ী পলাতক অভিযুক্ত আসামীর বিরুদ্ধে আদালত হতে ইস্যুকৃত গ্রেফতারী পরোয়ানা সংক্রান্তে একটি রেজিষ্টার রক্ষণা-বেক্ষণ করা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আসামী গ্রেফতার না হয় বা আসামী স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ না করে, ততোক্ষণ পর্যন্ত এই রেজিষ্টারের কার্যক্রম চালু থাকে।
(৬) নজরদারীঃ পিআরবি ৩৩৬ প্রবিধান মোতাবেক সাজাপ্রাপ্ত এবং সন্দিগ্ধ ব্যক্তিগণ, যাদের বিরুদ্ধে হিস্ট্রিসিট খোলা হয়েছ পুলিশ সুপারের নির্দেশক্রমে সেই সমস্ত ব্যক্তিদেরকে পুলিশের নিরীক্ষণে ((Surveillance) রাখা হয়। নিয়মিতভাবে তালিকাভুক্ত এই সকল ব্যক্তিদের সম্পর্কে স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধান করা হয়ে থাকে।
(৭) দুশ্চরিত্র লোকদের তালিকাঃ পিআরবি ৩৪৪ প্রবিধান মোতাবেক থানায় A রোল এবং B রোল রক্ষণা-বেক্ষণ করা হয়ে থাকে। কোনো দুশ্চরিত্রের লোক যদি ঠিকানা পরিবর্তন করে অন্য থানা এলাকা হতে নিজ থানা এলাকায় আগমন করে তাহলে উক্ত ব্যক্তির চরিত্র ও পিসিপিআর যাচাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় B রোল প্রেরণ করতে হয়। নিজ থানা এলাকার কোনো দুশ্চরিত্রের লোক যদি ঠিকানা পরিবর্তন করে অন্য থানা এলাকা চলে যার সেক্ষেত্রে A রোল প্রেরণ করা হয়।
(৮) পিআরবি ৩৪৯ প্রবিধান মতে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬৫ ধারার শর্ত সাপেক্ষে যে অপরাধী শর্তভংগ করে বাসস্থান পরিবর্তন করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানায় ফাইল চালু থাকে।
(৯) জেনারেল ডায়রীঃ পিআরবি ৩৭৭ প্রবিধান মতে সকল থানায় সাধারণ ডায়রী (GD) লেখা হয়ে থাকে। উহাতে সকল অপরাধ ও অপরাধীর তথ্যসহ থানার যাবতীয় কার্যক্রমের বিবরণ লেখা হয়ে থাকে।
(১০) পিআরবি ৩৭৮ প্রবিধান মোতাবেক সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক এবং ফেরারী অপরাধীদের সম্পর্কে থানায় দুই খন্ডে বিপি ফরম নং ৬৬ এর মাধ্যমে এই রেজিষ্টার রক্ষণা-বেক্ষণ করা হয়।
(১১) পার্শ্ববর্তী থানার দন্ডিত ও সন্দিগ্ধ ব্যক্তির তালিকাঃ পিআরবি ৩৮১ প্রবিধান মোতাবেক প্রত্যেক থানার পার্শবর্তী থানা সমূহের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী দন্ডিত ও সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদের তালিকা সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
(১২) পিআরবি ৩৮৬ প্রবিধান মোতাবেক প্রত্যেক থানা এলাকায় বসবাসকারী রাজসাক্ষীদের একটি তালিকা সংরক্ষন করা হয়। একই সাথে তাদের অপরাধপঞ্জীও থাকে, যাতে জীবনধারা ও আচরণ লেখা হয়ে থাকে।
(১৩) অনুসন্ধান শ্লিপঃ পিআরবি ৩৮৯ প্রবিধান অনুসারে বিপি ফরম নং ৭৬ এবং ৭৭ এর মাধ্যমে অপরাধীদের গ্রেফতার এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য অপরাধী যে থানা এলাকায় বসবাস করে, সেই থানা এলাকায় তদন্ত শ্লিপ পাঠানো হয়ে থাকে।
(১৪) পিআরবি ৩৯১ প্রবিধান মোতাবেক থানায় ভিসিএনবি রক্ষণা-বেক্ষণ করা হয়ে থাকে। ভিসিএনবি পাঁচটি খন্ডে সংক্ষণ করা হয়। উহাতে সাজাপ্রাপ্ত এবং সন্দিগ্ধ অপরাধীদের যাবতীয় বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয় এবং অন্যান্য জেলা ও থানার সাথে ক্রস রেফারেন্স দিয়ে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়।
(১৫) অপরাধীদের তালিকাঃ পিআরবি ৫৮২ এর বিধান মতে সকল রেলওয়ে থানার ভ্রাম্যমান রেলওয়ে অপরাধীর তালিকা ইহাতে সংরক্ষন করা হয়।
উপরোক্ত পদ্ধতি ছাড়াও বর্তমানে CDMS অর্থাৎ Crime data management system এর মাধ্যমে অপরাধীদের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। কোনো অপরাধী বাংলাদেশের যে কোনো থানা এলাকায় অপরাধ করলে এবং তার বিরুদ্ধে কোনো থানায় মামলা রুজু হলে CDMS এর মাধ্যমে তার সমস্ত রেকর্ড সংরক্ষন করা হয়।