⚖️ মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে কার্যক্রম কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 1 month ago
  • Category: ফৌজদারী কার্যবিধি

ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫০ ধারায় মিথ্যা, তুচ্ছ বিরক্তির অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তার উল্লেখ আছে। 

 

ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫০(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো নালিশী মামলার (সিআর) বা পুলিশী মামলার (জিআর) বা অন্যকোনোভাবে রুজুকৃত মামলার বিচারে ম্যাজিষ্ট্রেট যদি সকল বা যে কোনো একজন আসামীকে খালাস অথবা অব্যাহতি দেন এবং তিনি এ মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, আসামী বা আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, তুচ্ছ বা বিরক্তিকর তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট অব্যাহতি বা খালাস দেয়ার আদেশের সাথে যে ব্যক্তির নালিশ বা সংবাদের ভিত্তিতে অভিযোগ আনায়ন করা হয়েছে, সে ব্যক্তি উপস্থিত থাকলে কেনো অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে ক্ষতি পূরণ দেবেন না এ মর্মে সঙ্গে সঙ্গে কারণ দর্শাতে বলবেন। উক্ত ব্যক্তি উপস্থিত না থাকলে আদালতে হাজিত হয়ে উক্তরূপ কারণ দর্শানোর জন্য তার প্রতি সমন জারীর নির্দেশ দিবেন। 
 

ক্ষতিপূরণ ও শাস্তির পরিমাণঃ  

ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫০(২) ধারায় বলা হয়েছে যে, ফরিয়াদী বা সংবাদদাতা যে কারণ প্রদর্শন করবেন, ম্যাজিট্রেট তা  লিপিবদ্ধ করে বিবেচনায় আনবেন এবং তিনি যদি এ মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, আনীত অভিযোগ মিথ্যা, তুচ্ছ বা বিরক্তিকর ছিলো তাহলে তিনি কারণ লিপিবদ্ধ করে ফরিয়াদী বা সংবাদদাতা কর্তৃক আসামী বা আসামীদের প্রত্যেককে অনধিক ১০০০/- টাকার ক্ষতিপূরণের নির্দেশ প্রদান করবেন। 

 

যে ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দানের আদেশ দেয়া হয়েছে সে উহা প্রদান না করলে অনধিক ৩০ দিন মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদন্ড ভোগ করার আদেশ দিতে পারবেন (ফৌজদারী কার্যবিধি ২৫০ (২ক) ধারা)। 

 

ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫০(৫) ধারায় আরও বলা হয়েছে যে, ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫০(২) ধারা অনুসারে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ সম্বলিত আদেশ ব্যতীতও ম্যজিষ্ট্রেট ক্ষতিপূরণ দিতে আদিষ্ট ব্যক্তিকে অনধিক ৬ মাস মেয়াদের কারাদন্ড বা অনধিক ৩০০০/- টাকার জরিমানার আদেশ দিতে পারবেন। 

 

ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিরুদ্ধে আপীলঃ 

ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫০(৩) ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট বা অপর কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট ফরিয়াদী বা সংবাদদাতাকে ১০০ টাকার অধিক ক্ষতিপূরণ দানের নির্দেশ প্রদান করলে উক্ত ফরিয়াদী বা সংবাদদাতা উক্ত ম্যাজিট্রেট কর্তৃক কোনো বিচারে দন্ডিত হয়েছে বলে ধরে নিয়ে উক্ত ক্ষতিপূরণের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এবং প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আপীল করতে হবে। 

 

উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত সমূহঃ 

(১) ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৭ ধারার অভিযোগ কোনো দন্ডনীয় অভিযোগ নয় বিধায় আনীত অভিযোগটি মিথ্যা, তুচ্ছ এবং বিরক্তিকর প্রতীয়মান হলেও ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫০ ধারা অনুসারে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না (১৪ ডিএলআর ১৮৮)।

 

(২) ফরিয়াদী কর্তৃক হাজিরকৃত সকল সাক্ষীর সাক্ষ্য বিবেচনা না করে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫০ ধারায় আদেশ প্রদান  বাঞ্চনীয় নয়। সাক্ষীদের মধ্যে কয়েকজন সাক্ষী অসংলগ্ন বিবৃতি প্রদান করতে পারে এবং এক্ষেত্রে নথিতে রক্ষিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য ও তথ্য উপেক্ষা করে কেবল অসংলগ্ন বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে ম্যাজিষ্ট্রেটের এ মন্তব্য সমীচীন নয় যে, অভিযোগটি মিথ্যা ও বিরক্তিকর ছিলো মর্মে তিনি সন্তুষ্ট (৫ ডিএলআর ১৬৯)। 

 

(৩) যে ব্যক্তি নিজে নালিশ করে না বা পুলিশকে খবর দেয় না কিন্তু সংবাদ প্রদানে উৎসাহিত করে সে ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২৫০ ধারায় ক্ষতিপূরণ দানের আদেশ দেয়া যায় না (১৪ ডিএলআর ৫৬২)। 

 

(৪) কেবল ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য মামলায় এ ধারা প্রযোজ্য। দায়রা আদালতে বিচার্য মামলার ক্ষেত্রে এ ধারা প্রযোজ্য হবে না (এআইআর ১৯২২ এএলএল ১৮৮)। 

 

(৫) ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫০ ধারার কার্যক্রম একটি পৃথক ধরণের কার্যক্রম। ম্যাজিষ্ট্রেট ক্ষতিগ্রস্তকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে খালাসের আদেশ প্রদান করলে তা ক্ষমতা বহির্ভুত কার্য বলে গণ্য হবে না (২১ ডিএলআর ৩০৪ ডব্লিউ পি)। 

Google News Google News
Google News এ বিরাট বাজারের সকল পোস্ট পেতে ক্লিক করে ফিডটি ফলো করুন