⚖️ সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতি বা Summary Trials কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 3 weeks ago
- Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
-
যে অপরাধ গুরুত্বর নয় এবং যে অপরাধমূলক কাজের শাস্তি লঘু সেসব অপরাধের মামলার বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে করা যেতে পারে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬০ ধারায় বর্ণিত হয়েছে যে, মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট অথবা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট অথবা সরকার কর্তৃক বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট অথবা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট এর ক্ষমতা সম্পন্ন কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট বেঞ্চ নিম্নে বর্ণিত অপরাধ সমূহের সবগুলো অথবা একটির বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে করতে পারবেনঃ-
(ক) দুই বৎসরের অধিক কারাদন্ডে দন্ডনীয় নয় এরূপ অপরাদ;
(খ) দন্ডবিধির ২৬৪, ২৬৫ ও ২৬৬ ধারা অনুসারে ওজন ও পরিমাপ সম্পর্কিত অপরাধ;
(গ) দন্ডবিধির ৩২৩ ধারার অপরাধ;
(ঘ) দন্ডবিধির ৩৭৯, ৩৮০ ও ৩৮১ ধারার অপরাধের ক্ষেত্রে চোরাইমালের মূল্য সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা হলে;
(ঙ) দন্ডবিধির ৪০৩ ধারার অপরাধের ক্ষেত্রে আত্মসাৎকৃত সম্পত্তির মূল্য সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা হলে;
(চ) দন্ডবিধির ৪১১ ধারার অপরাধের ক্ষেত্রে চোরাই মালের মূল্য সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা হলে;
(ছ) দন্ডবিধির ৪০৪ ধারা অনুসারে অপরাধ, যেক্ষেত্রে চোরাই মালের মূল্য দশ হাজার টাকা;
(জ) দন্ডবিধির ৪২৬ ও ৪২৭ ধারা অনুসারে ক্ষতিসাধন;
(ঝ) দন্ডবিধির ৪৪৭, ৪৫১, ৪৫৩, ৪৫৪, ৪৫৬ ও ৪৫৭ ধারা অনুসারে অপরাধ;
(ঞ) দন্ডবিধির ৫০৪, ৫০৬, ৫০৯, ও ৫১০ ধারা অনুসারে অপরাধ;
(ট) দন্ডবিধির ১৭১ ধারা অনুসারে নির্বাচনের ক্ষেত্রে মিথ্যা পরিচয় দান;
(ঠ) উপরোক্ত অপরাধ সমূহের যে কোনো একটিতে সহায়তা করা;
(ড) উপরোক্ত অপরাধ সমূহের যে কোনো একটি সংঘটনের চেষ্টা করা;
(ঢ) ১৮৭১ সালের গবাদী পশুর অনধিকার প্রবেশ আইনের ২০ ধারা অনুসারে অপরাধ।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬১ ধারা অনুসারে সরকার দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর ম্যজিষ্ট্রেট এর ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট বেঞ্চকে নিম্নে বর্ণিত অপরাধ সমূহের সবগুলি অথবা যে কোনো একটির বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে করার ক্ষমতা প্রদান করতে পারেনঃ-
(ক) দন্ডবিধির ২৭৭, ২৭৮, ২৭৯, ২৮৫, ২৮৬, ২৮৯, ২৯০, ২৯২, ২৯৩, ২৯৪, ৩২৩, ৩৩৪, ৩৩৬, ৩৪১, ৩৫২, ৪২৬, ৪৪৭, ৫০৭ ধারার অপরাধ;
(খ) পৌরসভা আইন ও পুলিশ আইনের কনজারভেন্সী ধারা সমূহের অপরাধ, যা কেবলমাত্র জামিনযোগ্য অথবা জরিমানাসহ বা ব্যতীত এক মাসের অনধিক মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডনীয়;
(গ) উপরোক্ত অপরাধ সমূহের যে কোনো একটিতে সহায়তা কর;
(ঘ) উপরোক্ত অপরাধ সমূহের যে কোনো একটি সংঘটন করার চেষ্টা কর।
অ-আপীলযোগ্য মামলার ক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেটের করণীয়ঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে সকল মামলা আপীলযোগ্য নয় সে সকল মামলায় ম্যাজিষ্ট্রেটের বা ম্যাজিষ্ট্রেট বেঞ্চের সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করার, অভিযোগ গঠন করার প্রয়োজন নেই, তবে তিনি বা তারা সরকার কর্তৃক নির্দেশিত ফরমে নিম্নেবর্ণিত তথ্য লিপিবদ্ধ করবেনঃ
(ক) ক্রমিন নম্বর,
(খ) অপরাধ সংঘটনের তারিখ,
(গ) এজাহার বা নালিশের তারিখ,
(ঘ) ফরিয়াদীর নাম (যদি থাকে),
(ঙ) আসামীর নাম, পিতার নাম ও বাসস্থান,
(চ) নালিশী অপরাধ এবং প্রমাণিত অপরাধ (যদি থাকে) এবং সম্পত্তির মূল্য (যদি থাকে),
(ছ) আসামীর বক্তব্য ও তার জবানবন্দী (যদি থাকে),
(জ) সিদ্ধান্ত এবং দন্ডাদেশের ক্ষেত্রে কারণ সমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ,
(ঝ) দন্ড বা অন্য চুড়ান্ত আদেশ,
(ঞ) বিচার সমাপ্তির তারিখ।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, যেসব মামলা আপীলযোগ্য সেসব ক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেট বা বেঞ্চ সাক্ষীদের জেরা- জবানবন্দীর সংক্ষিপ্ত সার লিপিবদ্ধ করবেন ও ২৬৩ ধারায় বর্ণিত তথ্যাবলীসহ রায় লিখবেন।
সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচারের ক্ষেত্রে কারাদন্ডের সীমাঃ
সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচারের ক্ষেত্রে কোনো অপরাধের জন্য ২(দুই) বৎসরের অধিক কারাদন্ডের আদেশ দেয়া যায় না (ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬২(২) ধারা)।
যেক্ষেত্রে আপীল করা যাবে নাঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, যখন কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচারের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে অনধিক দুইশত টাকা জরিমানা করেন তখন দন্ডিত ব্যক্তি কোন আপীল করতে পারবে না।
বিচার পদ্ধতিঃ
ম্যাজিষ্ট্রেট বিচারের জন্য একটি দিন ধার্য করে উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদান করবেন। বিচারের শুরু এবং শেষ একই তারিখে হওয়া বাঞ্চনীয়। সাক্ষীরা শপথ গ্রহণ পূর্বক সাক্ষ্য প্রদান করবেন। সাক্ষীদের প্রদত্ত পূর্ণাংগ সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজন নেই। বাদীপক্ষের সাক্ষ্য পর্ব শেষে আসামী পক্ষকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে। জেরা ও যুক্তিতর্কের সুযোগ থাকবে।
মারাত্মক অপরাধের জন্য কোনো আসামীকে অভিযুক্ত করা হলে সংক্ষিপ্তভাবে বিচার করার উদ্দেশ্যে নিজের এখতিয়ারে আনার জন্য কম মারাত্মক অপরাধে কমিয়ে আনা ম্যাজিষ্ট্রেটের উচিৎ নহে (২৭ ডব্লিউ এন ১৪৮)।