⚖️ বিএল কেস কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 1 week ago
- Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
বিএল কেস অর্থাৎ (Bad Livelyhood Case) অসদাচরণকারীর বিরুদ্ধে পুলিশ কর্তৃক একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১০৮ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহীতামূলক বিষয় প্রচারকারী ব্যক্তির সদাচরণের মুচলেকা গ্রহণের বিধান রহিয়াছে এবং ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১০৯ ধারার অনুরূপভাবে ভবঘুরে ও সন্দেহজনক ব্যক্তির অসদাচরণের মুচলেকা নেওয়া হইয়া থাকে। তাছাড়া ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১১০ ধারায় অভ্যসগত অপরাধীদের সদাচরণের জন্য মুচলেকা গ্রহণের বিধান রহিয়াছে। উল্লিখিত অভ্যাসগত অপরাধীদের মধ্যে রহিয়াছে –
(১) অভ্যাসগত দস্যু, গৃহভঙ্গকারী চোর বা জালিয়াত।
(২) অভ্যাসগতভাবে চোরাইমাল গ্রহণকারী।
(৩) অভ্যাসগতভাবে চোরদের রক্ষাকারী বা আশ্রয় প্রদানকারী অথবা চোরাইমাল গোপন করিতে বা হস্তান্তর করিতে সাহায্যকারী (দন্ডবিধি আইনের ২১২ ধারা)।
(৪) অভ্যাসগতভাবে ফুসলাইয়া লোক অপহরণকারী, বলপূর্বক সম্পত্তি আদায়কারী, প্রতারণাপূর্বক ক্ষতি সাধনকারী অথবা দন্ডবিধি আইনের নিম্নলিখিত ধারার অপরাধকারী বা চেষ্টাকারী বা উস্কানী প্রদানকারীঃ
(i) কারেন্সি নোট বা ব্যাংক নোট জালকারী (দন্ডবিধি আইনের ৪৮৯-ক ধারা)।
(ii) জালনোটকে খাটি হিসাবে ব্যবহারকারী (দন্ডবিধি আইনের ৪৮৯-খ ধারা)।
(iii) জালনোট দখলকারী (দন্ডবিধি আইনের ৪৮৯-গ ধারা)।
(iv) জালনোট তৈরী করার যন্ত্রপাতি দখলে রাখে বা জালনোট প্রস্তুতকারী (দন্ডবিধি আইনের ৪৮৯-ঘ ধারা)।
(v) জালনোট সদৃশ্য কোনো দলিল প্রস্তুতকারী বা ব্যবহারকারী (দন্ডবিধি আইনের ৪৮৯-ঙ ধারা)।
(৫) অভ্যাসগতভাবে শান্তিভঙ্গকারী বা চেষ্টাকারী বা উস্কানী প্রদানকারী।
(৬) এইরূপ দূর্দান্ত ও বিপজ্জনক প্রকৃতির যে-জামানত ব্যতীত তাহাকে মুক্তরাখা সমাজের জন্য বিপজ্জনক, তাহা হইলে নির্ধারিত ম্যাজিস্ট্রেট কার্যবিধি আইনের ১১২ ধারায় বর্ণিত উপায়ে উক্ত ব্যক্তিকে তিন বৎসরের অনধিক কালের সদাচরণের জন্য জামিনদারসহ একটি মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দেওয়া হইবে না কেন, সেই মর্মে তাহাকে কারণ দর্শাইতে বলিতে পারেন।
পিআরবি ২৮৯ এর বিধানমতে কোনো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যদি উক্ত ব্যক্তিদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হন, তবে তিনি পিআরবি ৪০১ এর বিধানমতে ভিসিএনবিতে নোট করিয়া হিস্ট্রিসিট খুলিবেন এবং তাহাদের অভ্যাসগত সম্পৃক্ততা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাইবে কিনা তাহা নিশ্চিত হইয়া সার্কেল অফিসারের মাধ্যমে পুলিশ সুপারের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করিবেন। পুলিশ সুপারের অনুমোদন গ্রহণ পূর্বক বিএল কেসটি কোন ম্যাজিস্ট্রেট কবে কোথায় কিভাবে পরিচালনা করিবেন, তাহা নির্ধারিত হইলে অফিসার ইনচার্জ কমপক্ষে ১৫ দিন পূর্বে স্থানীয়ভাবে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করিয়া সংশ্লিষ্ট অপরাধী বা অপরাধীদেরকে কার্যবিধি ৫৫ ধারায় গ্রেফতার করিয়া কোর্টে সোপর্দ করিবেন এবং আসামী বা আসামীদের বিরুদ্ধে কার্যবিধি ১১০ ধারায় নির্ধারিত ফরমে (বিপি ফরম নং ৪৭) একটি নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করিবেন। ম্যাজিস্ট্রেট সেই মোতাবেক বিচার কার্যক্রম আরম্ভ করিবেন এবং বিচারের তারিখ নির্ধারণ করিবেন। তিনি গ্রেফতারকৃত আসামীর জামিন প্রদান করিতে পারেন। তবে নির্ধারিত তারিখে ম্যাজিস্ট্রেট এলাকায় পূর্ব নির্ধারিত স্থানে যথাসময়ে হাজির হইয়া একদিনেই সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ করিয়া বিচারকার্য নিস্পত্তি করিবেন। সেই বিচারে আসামী হাজির থাকিবেন।
বিএল কেসের বিচারকার্য এলাকায় প্রকাশ্য আদালতে (যেমন-স্কুল মাঠে) অনুষ্ঠিত হইবে। স্থানীয় গন্যমান্য লোকজন সেখানে উপস্থিত থাকিবেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজে সেখানে কোর্ট অফিসারসহ হাজির থাকিবেন। বিচার আরম্ভ হওয়ার পূর্বে মামলার সাক্ষ্য সম্পর্কে একটি নোট প্রস্তুত করিয়া থানার ওসি কোর্ট অফিসারকে দিবেন- যাহাতে কোন কোন সাক্ষী কি ধরণের সাক্ষ্য, কোন আসামীর বিরুদ্ধে প্রমাণ করিবে, তাহা কোর্টে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়। যদি মামলাটি কোনো দলের বিরুদ্ধে হয়, তবে দলের প্রত্যেকটি সদস্যের বিরুদ্ধে প্রতিটি অভিযোগ সম্পর্কে পৃথক পৃথকভাবে সাক্ষ্য উপস্থাপন করিতে হইবে।
বিএল কেস বা কার্যবিধি ১১০ ধারার প্রসিকিউশনের মুল বিষয় হইল স্থানীয় নিরপেক্ষ ও সম্ভ্রান্ত সাক্ষ্য প্রমাণ পিআরবি ২৯০ এবং কার্যবিধি আইনের ১১৭(সি) ধারামতে সদাচরণের জন্য উক্ত সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। তবে শর্ত হইল যে-
(১) সাক্ষীদের স্বভাব-চরিত্র ভালো হইতে হইবে এবং তাহারা আসামীর স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জ্ঞাত থাকিবেন।
(২) সাক্ষীদেরকে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে বা এলাকা হইতে সংগ্রহ করিতে হইবে। আসামীর নিজ গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা হইতেও সাক্ষ্য সংগ্রহ করিতে হইবে।
(৩) সাক্ষীগণ যেন কোনোভাবেই আসামীর প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন না থাকে। সাক্ষ্য যেন গ্রাম্য দলাদলির ভিত্তিতে না হয়।
(৪) সাক্ষীগণ অন্যের মতামত ছাড়াই নিজস্বঃ মতে সাক্ষ্য দিবে এবং তাহা যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতেই যেন হয়।
উল্লিখিত সাক্ষ্যগুলি যেন নিম্নলিখিত ধরণের সাক্ষ্য দ্বারা সমর্থিত হয়ঃ
(ক) পূর্বের সাজা বা পুলিশ রেকর্ডে প্রাপ্ত তথ্য যাহা সাক্ষ্য আইনের ৮ ধারামতে গ্রহণযোগ্য হয়।
(খ) জীবন যাপনের জ্ঞাত আয়ের উৎস না থাকা বা অসংগতিপূর্ণ।
(গ) খারাপ চরিত্রের সহযোগীদের সাথে আসামীর সংশ্রব (সাক্ষ্য আইনের ১০ ধারা)।
(ঘ) আসামীর বাড়ি হইতে অনুপস্থিত থাকা, বিশেষ করিয়া রাত্রে।
(ঙ) আসামীকে যে স্থানে দেখা গিয়াছিল, সেই স্থানে বা আশেপাশে যদি কোনো অপরাধ সংঘটিত হইয়া থাকে এবং তাহা আসামীর অনুপস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যাহা সাক্ষ্য আইনের ১১(২) ধারামতে গ্রহণযোগ্য।
বিচার শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হইলে ম্যাজিস্ট্রেট কার্যবিধি আইনের ১১৮ ধারামতে মুচলেকার আদেশ দিতে পারেন। তবে এই মুচলেকা কোন শাস্তি নহে। ইহা হইল অভ্যাসগতদের হাত হইতে সমাজকে বারবার অপরাধের ঘটনা হইতে রক্ষা করিবার প্রচেষ্টা মাত্র। তবে আসামী যদি জামিনদারসহ মুচলেকা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে তাহাকে জেলখানায় আটক থাকিতে হইবে।