⚖️ পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 1 week ago
  • Category: পুলিশ আইন

পুলিশ কর্মচারীকে নানা পরিস্থিতিতে নানান ধরণের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করিতে হয়। দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নাই। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ২৩ ধারা অনুসারে পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য সমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হইল (পি আরবি ১১৭/১১৮)।

(১) উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ  কর্তৃক প্রদত্ত সকল বৈধ আদেশ দ্রুত পালন করা বা কার্যকরী করা।

(২) উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ  কর্তৃক প্রদত্ত সর্বপ্রকার বৈধ পরোয়ানা জারি ও দ্রুত কার্যকরী করা।

(৩) সর্বসাধারণের শান্তিরক্ষা সম্পর্কিত সংবাদ সংগ্রহ করা এবং যথাস্থানে রিপোর্ট করা (ফৌজদারী কার্যবিধি ১৫০ ধারা)।   

(৪) কোনো অপরাধ সংঘটিত হইতে দেখিলে বা হইবার আশংকা থাকিলে উক্ত অপরাধ প্রতিরোধ বা নিবারণ করা (ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৯ ধারা)।   

(৫) সর্বসাধারণের বিরক্তিকর কার্য অর্থাৎ পাবলিক ন্যুইসেন্স নিবারণ করা। 

(৬) অপরাধের বৃত্তান্ত অনুসন্ধান বা উদঘাটন করা (পিআরবি-২৫৬/৩৫৮)।  

(৭) অপরাধীকে বিচারার্থে আদালতে সোপর্দ করা (পিআরবি-২৭২ এবং ফৌজদারী কার্যবিধি ৮১ধারা)।  

(৮) আইনসংগতভাবে গ্রেফতারযোগ্য সকল ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা। 

উপরোক্ত কর্তব্য সমূহ পালনের জন্য সকল পুলিশ কর্মচারী যেকোনো সরাবখানা, জুয়ার আড্ডা, বা সন্দিগ্ধ ও উচ্ছৃংখল চরিত্রের লোকদের সমাগমের স্থানে বিনা পরোয়ানায় প্রবেশ করিতে পারিবেন এবং তথায় কি আছে, না আছে তাহা পরিদর্শণ করিতে পারিবেন। 

তাছাড়াও পুলিশের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হইল- জনসাধারণের এবং সরকারি মালামাল হেফাজত করা, জনগনের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা এবং অপরাধ নিবারণ ও সমাজের শান্তি শৃংখলা বজায় রাখা (পুলিশ আইনের ৩১ ধারা)। অপরাধ দমনের লক্ষ্যে পুলিশ অফিসার যে কোনো আইনানুগ পরোয়ানার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন করিবেন (পুলিশ আইনের ২৪ ধারা)। বেওয়ারিশ সম্পত্তির সংবাদ পাইলে পুলিশ হেফাজতে নিয়া আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান কার্যকরী করা (পুলিশ আইনের ২৫ ধারা)। পুলিশ আইনের ৩৪ ধারায় বর্ণিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা। 

পুলিশ সদস্য সঠিকভাবে তাহার কর্তব্য পালন না করিলে পুলিশ আইনের ৭ ও ২৯ ধারা মোতাবেক শাস্তির সম্মুখীন হইতে হয়। সেই শাস্তি দুই ধরণের যেমন-

(১) গুরুদন্ড,

(২) লঘুদন্ড। 

পুলিশ আইনের ৭ ধারা মোতাবেক অধস্তন পুলিশ কর্মচারী কোনো অযোগ্যতা, দোষত্রুটি বা কর্তব্যে অবহেলার দরুণ গুরুদন্ড হিসাবে চাকুরী হইতে বরখাস্ত, অপসারণ, পদাবনতি, বেতনবৃদ্ধি স্থগিতকরণ, পদোন্নতি স্থগিতকরণ হইতে পারে। ইহা ছাড়াও অসতর্কভাবে বা অবহেলা করিয়া কর্তব্য পালনের দায়ে পুলিশ কর্মচারীকে নিম্নলিখিত এক বা একাধিক শাস্তি ভোগ করিতে হয়।

(ক) অনধিক এক মাসের বেতনের সমপরিমান জরিমানা। 

(খ) অনধিক ১৫ দিন পর্যন্ত ব্যারাকে আটক করা এবং গার্ডডিউটি বা অন্যকোনো শ্রম সাধ্য কাজ দেওয়া।

(গ) সদাচরণ বেতন হইতে বঞ্চিত করা। 

(ঘ) কোনো বিশেষ পদমর্যদা বা ভাতা রহিত করা। 

গুরুদন্ড প্রদান করিতে হইলে পিআরবি-৮৬১ বা অন্য কোনো বিধানমতে বিভাগীয় প্রসিডিং করিতে হয়। গুরুদন্ড ও লঘুদন্ড পিআরবি-৮৫৭। বেতন বৃদ্ধি স্থগিত পিআরবি-৮৭১। ব্লাক মার্ক পিআরবি-৮৭৪ ইত্যাদী।

পুলিশ আইনের ২৯ ধারার বিধান মোতাবেক পুলিশ কর্মচারীর বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত অভিযোগ প্রমানিত হইলে অভিযুক্তকে বিচারার্থে ফৌজদারী আদালতের নিকট প্রেরণ করা হয়।

(১) কর্তব্যচ্যুতি, কোনো নিয়ম বা রেগুলেশন ইছাকৃতভাবে অমান্য করা এবং গাফিলতি পূর্বক কর্তব্য পালনে শৈথিল্য করা। 

(২) উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কোনো বৈধ আদেশ পালনে ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য বা অবহেলা করা। 

(৩) উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কর্ম ত্যাগ করা। 

(৪) বৈধ ছুটি ভোগ করিবার পর যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত অবৈধভাবে কর্মে যোগদান না করা। 

(৫) উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে পুলিশের কর্ম ব্যতীত অন্য কোনো কর্মে যোগদান করা। 

(৬) ভিরুতার অপরাধে অপরাধী হওয়া। 

(৭) পুলিশ হেফাজতে থাকা কোনো আসামীর উপর অন্যায়ভাবে শারীরিক নির্যাতন বা আঘাত করা। 

উপরোক্ত অপরাধে অভিযুক্তকে আদালতে সোপর্দ করা হইলে এবং বিচারে অপরাধ প্রমানিত হইলে তিন মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থদন্ড বা তিন মাস পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা উভয়দন্ড হইতে পারে।