⚖️ স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতি

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 1 day ago
  • Category: সাক্ষ্য আইন

কোনো আসামীর স্বীকারোক্তি ফৌজদারী কার্যবিধি আইন মোতাবেক করা হইয়া থাকে। সাক্ষ্য আইনে স্বীকারোক্তির কোনো সংজ্ঞা প্রাদান করা হয় নাই। সাক্ষ্য আইনের ২৪-৩০ ধারায় আসামীর স্বীকারোক্তির প্রাসঙ্গিকতা এবং গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে বলা হইয়াছে। 

 

ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক কোনো আসামীর এই স্বীকারোক্তি যেকোনো প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৩৬৪ ধারার নির্দেশিত পদ্ধতিতে করিয়া থাকেন। যেমন- আসামীকে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট হাজির করা হইলে তাহার হাতকড়ি খুলিয়া পুলিশ সরাইয়া দেওয়া হয় এবং ম্যাজিষ্ট্রেট আসামীকে নিজ পরিচয় দিয়া অভয় প্রদান করেন, স্বীকারোক্তি করিলে কি ফল হইতে পারে তাহা ভালো করিয়া বুঝাইয়া দেন। আসামী যখন সবকিছু বুঝিতে সক্ষম হইবে, তখন ম্যাজিষ্ট্রেট তাহাকে ধীরে সুস্থে চিন্তা করার জন্য আরও তিন ঘন্টা সময় দেন। ঐ সময় শেষ হওয়ার পর স্বীকার করিলে উহা তাহার (আসামীর) বিরুদ্ধে ব্যবহার হইতে পারে। তারপর ম্যাজিষ্ট্রেট ছয়টি প্রশ্ন করেন। যথা-

(১) পুলিশের হেফাজতে আপনি কতদিন ছিলেন?

(২) দোষ স্বীকার করার জন্য আপনাকে কেউ কোনো চাপ দিয়াছে কিনা?

(৩) দোষ স্বীকার করার জন্য আপনাকে কেউ ভয়-ভীতি দেখাইয়াছে কিনা?

(৪) আপনাকে কেউ কোনোরূপ প্রলোভন দিয়াছে কিনা? 

(৫) আপনাকে রাজসাক্ষী করার জন্য কোনো প্রস্তাব দেওয়া হইয়াছে কি? 

(৬) আপনি কেন দোষ স্বীকার করিবেন?

অতঃপর ম্যাজিষ্ট্রেট দোষ স্বীকার করার নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় ঘরগুলি পূরণ করেন এবং সংশ্লিষ্ট ঘরে প্রশ্ন লিপিবদ্ধ করেন এবং আসামীর নিজের ভাষায় তাহার বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন। আসামীকে ভালোভাবে প্রশ্ন করিয়া জবাব লিখিতে হয় প্রয়োজনে প্রশ্নোত্তর আকারে স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করিয়া আসামীকে পড়িয়া শুনাইতে হয়। আসামী না বুঝিতে পাড়িলে বোধগম্য ভাষায় বুঝাইয়া দিতে হয়। জবানবন্দী লিপিবদ্ধকারী ম্যাজিষ্ট্রেট উহা নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেন। 

 

দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী সঠিক আছে বলিয়া আসামী মন্তব্য করিলে ম্যাজিষ্ট্রেট এবং আসামী প্রত্যেকে উহাতে স্বাক্ষর করেন। এইরূপ স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধকারী ম্যাজিষ্ট্রেট এই মর্মে স্বাক্ষরিত প্রত্যায়নপত্র প্রদান করেন যে জবানবন্দী তাহার উপস্থিতিতে ও শ্রুতিগোচরে গ্রহণ করা হইয়াছে এবং নথিতে বিবৃতির পূর্ণাঙ্গ ও সত্য বিবরণ রহিয়াছে। 

 

সাক্ষ্য আইনের ৮০ ধারামতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী একটি সরকারী দলিল হিসাবে আদালতে গ্রহণযোগ্য। 

 

সাক্ষ্য আইনের ৩০ ধারার বিধানমতে যেইক্ষেত্রে একই অপরাধে একাধিক ব্যক্তির যৌথভাবে বিচার কার্যক্রম চলে, সেইক্ষেত্রে আসামীদের মধ্যে যে কোনো একজন নিজেকে জড়াইয়া সহযোগীদের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি প্রদান করিলে, উক্ত স্বীকারোক্তি আদালতে সহযোগীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসাবে প্রাসঙ্গিক ও গ্রহণীয়। তবে চারটি শর্ত রহিয়াছে। যেমন-

(১) স্বীকারকারী এবং অপর ব্যক্তির একত্রে বিচার হইতে হইবে।

 (২) যৌথ বিচার একই অপরাধ সংক্রান্তে হইতে হইবে। 

(৩) স্বীকারোক্তি প্রদানকারীর নিজেকে এবং অপরকে সমানভাবে অপরাধে জড়াইতে হইবে। 

(৪) স্বীকারোক্তিটি আইনত প্রমাণ করিতে হইবে। 

সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ এবং ৩২(১) ধারায় আসামীর বিবৃতি বা সাক্ষ্য সহযোগী আসামীদের বিরুদ্ধে প্রাসঙ্গিক ও গ্রহণীয় হইতে পারে।