⚖️ পেশাদার অপরাধী কারা?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 2 weeks ago
  • Category: অপরাধ বিজ্ঞান

পেশাদার অপরাধীর উৎসঃ 

পেশাদার অপরাধীদের মূখ্য অংশ আইনসম্মত পেশা হইতেই বাহির হইয়া আসে এবং অপরাধ জগতে তাহাদের অনুপ্রবেশ ঘটে। যেনোতেনো অপরাধীদের মধ্য হইতে সাধারণত পেশাদার অপরাধীর আগমন ঘটে না। অপরাধ বিজ্ঞানী ওয়ালটার সি. রেকলেসের মতে- পেশাদার চোরেরা তাদের জীবনের প্রথম দিকে আইনসম্মত পেশা, যেমন-বিক্রেতা, হোটেল কেরানী, বেলবয়, ওয়ার্ডবয়, ওয়েটার ইত্যাদি পেশায় ছিল কিন্তু পরবর্তীতে অনেকেই পেশাদার চোর বনিয়া যায়। প্রথমে পেশাদার অপরাধী বা অপরাধী দলের সহিত মিশিয়া ঘনিষ্ঠ হয় এবং তাহাদের দেওয়া একটি অপরাধ কর্ম সফলভাবে সম্পন্ন করিয়া দলে পাকাপোক্ত স্থান করিয়া নেয়। দীর্ঘ অপরাধ জীবনের অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন পড়ে না। একজন ব্যবসায়ী বা শ্রমিক নেতাও পেশাদার অপরাধী দলে নাম লেখাইতে পারে। পেশাদার অপরাধীরা অপরাধ সংঘটনে সুষ্টু পরিকল্পনা এবং বাস্তবতা ও অপরাধ প্রক্রিয়া এর সমন্বয়ে কাজ সম্পন্ন করিয়া থাকে। পেশাদার অপরাধীর জন্য গ্রামীণ পরিবেশের চেয়ে শহরে সমাজে অনুকূল পরিস্থিতি থাকে।


তাছাড়াও পেশাদার অপরাধীর অন্যতম উৎস হইল, কারাগার ও সংশোধনাগার। সেখানে তাহারা অভিজ্ঞ পেশাদার অপরাধীর নিকট সরাসরি শিক্ষা গ্রহণ করিয়া থাকে এবং পরবর্তীতে অধিক দক্ষতার সহিত কাজ করিতে সক্ষম হয়। কারাগার হইতে মুক্তির পর তাহারা উভয়েই ঘনিষ্ট হয় এবং সকলের অজান্তেই পেশাদার অপরাধী সৃষ্টির বৃদ্ধি ঘটিতে থাকে। 

 

পেশাদার অপরাধীর অপরাধ প্রক্রিয়াঃ 


পেশাদার অপরাধীর অপরাধ করিবার দক্ষতা ও কূটকৌশল তথা অপরাধ প্রক্রিয়া বা Modus Operandi অত্যান্ত উচ্চ মানের, যাহার প্রকৃতিতে নতুন নতুন বৈচিত্র পরিলক্ষিত হয়। তাহারা পুরাতন অপরাধ প্রক্রিয়ার সহিত নতুন কায়দা সংযোজন করিয়া অত্যান্ত চাতুর্যের পরিচয় দিয়া থাকে। এমনকি সম্পূর্ণ নতুন ধরণের অপরাধ প্রক্রিয়া সৃষ্টি করিতেও তাহারা সক্ষম এবং তাহাতে সৃজনশীলতার সুস্পষ্ট ছাপ দেখিতে পাওয়া যায়। 

 

পেশাদার অপরাধীদের জীবন দর্শন বা বৈশিষ্ট সম্পর্কে অপরাধ বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও পর্যালোচনায় প্রাপ্ত তথ্যাদি নিম্নে উল্লেখ করা হইলঃ 

 

(১) পেশাদার অপরাধীর ধারণা প্রত্যেক মানুষ মূলত অসৎ। সময় ও সুযোগ এবং অনুকূল পরিস্থিতি থাকিলে প্রত্যেকেই অন্যকে ঠকাইয়া অর্থ আদায় করে।

 

(২) তাহারা লাভবান হওয়ার জন্য যেকোনো অপকর্মে জড়িত হয় এবং উদ্দেশ্য পূরণে সতর্ক পরিকল্পনার মাধ্যমে যে কোনো ঝুঁকি নিয়া কাজ করিয়া থাকে। 

 

(৩) অপরাধ পেশাকে তাহারা অযৌক্তিক বা অন্যায় বলিয়া মনে করে না। বরং সঠিক পেশায় আছে বলিয়া ধারণা করে। 

 

(৪) পেশাদার অপরাধীরা মনে করে সাধারণ মানুষ ভীতু ও বুদ্ধিহীন- অপরাধ করিয়া অর্থ আয় করিবার মতো সাহস বা মেধা তাদের নাই। আইন মান্য করিবার মধ্যে কোনো গৌরব নাই। 

 

(৫) পেশাদার অপরাধী ধরা পড়িলে তাহারা বলিয়া থাকে যে, সমাজ ব্যবস্থার কারণে পিতা-মাতার আদর ভালোবাসায় বঞ্চিত হইয়া বরং নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ প্রাপ্ত হইয়া রাস্তায় ঘুরিয়া ফিরিয়া বড় হইয়াছে। 

 

(৬) পেশাদার অপরাধী কখনো অপরাধী হওয়ার কারণে অনুতপ্ত হয় না, তবে অনুতপ্ত হয় অপরাধ করিয়া ধৃত হওয়ার কারণে। 

 

(৭) এই ধরণের অপরাধীর কোনো নৈতিকতা বা বাধ্যবাদকতা নেই- এমন ধারণা সবসময় সঠিক নহে। সাধারণত তাহারা সঙ্গীদের কথা দিলে কথা রাখে। প্রতিজ্ঞা বা বিশ্বাস ভঙ্গ করে না। 

 

(৮) পুলিশের প্রতি পেশাদার অপরাধীদের  তীব্র ঘৃণা ও অবজ্ঞা থাকে। ফলে পুলিশকে কোনোরূপ সাহায্য তাহারা করে না। এমনকি কোনো অপরিচিত পেশাদার অপরাধী গ্রেফতার হইলে তাহাকে ছাড়াইয়া নিতে চেষ্টা করে। 

 

(৯) অপরাধ জগতে পেশাদার অপরাধী  তাহার তীব্র প্রতিযোগিকে হটানোর জন্য বিশ্বাসঘাতকতা করিয়া পুলিশে ধরাইয়া দিয়া থাকে। 

 

(১০) পেশাদার অপরাধী যখন নিজে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তখন উল্লেখ করিয়া থাকে যে, তাহার কোনো সহযোগী গাদ্দারী করিয়া তাহাকে ধরাইয়া দ্দিয়াছে। 

 

(১১) তাহারা নিজেদের তৈরি নিয়ম কানুন মানিয়া নিজেদের অপরাধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করিয়া থাকে। 

 

(১২) তাহারা নিজেদের মধ্যে বিশেষ ধরণের ভাষা ব্যবহার করিয়া থাকে। 

 

(১৩) পেশাদার অপরাধীরা তাহাদের পেশার প্রতি আস্থাশীল এবং পেশাটিকে ব্যবসা মনে করিয়া থাকে। কেউ ব্যর্থ হইলে তাহাকে অন্যরা পরিত্যাগ করে। 

 

(১৪) তাহারা একই ধরণের অপরাধ প্রক্রিয়া বারবার অবলম্বন করিয়া থাকে। 

 

(১৫) পেশাদার অপরাধীদের স্থায়ী বাসস্থান থাকে না। 

 

(১৬) তাহারা এক স্থান বা শহর হইতে অন্য স্থান বা শহরে গিয়া অপরাধ করে। 

 

(১৭) তাহারা জেল ও হাজত এড়িয়ে চলে। 

 

(১৮) তাহারা নিজের আসল পরিচয় গোপন রাখিতে চায়।