⚖️ গণ উপদ্রব অপসারণ করার পদ্ধতি কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 3 weeks ago
  • Category: ফৌজদারী কার্যবিধি

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৩ ধারা হতে ১৪৩ ধারা পর্যন্ত গণ উপদ্রব অপসারণ সংক্রান্তে আদেশের বিধান রয়েছে। 

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, যখন কোনো জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট অথবা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশ রিপোর্ট অথবা অন্য কোনোরূপ সংবাদ পেয়ে এবং প্রয়োজনে সাক্ষ্য গ্রহণ পূর্বক মনে করেন যে- 

(ক) জনগণের ব্যবহৃত পথ, নদী, খাল বা সর্বসাধারণের ব্যবহার্য কোনো স্থান হতে বে-আইনী বাধা বা উপদ্রব অপসারণ করা প্রয়োজন,

(খ) জনগণের স্বাস্থ্য, শারীরিক আরাম আয়েষের পক্ষে ক্ষতিকর ব্যবসা, পেশা বা মালপত্রের নিয়ন্ত্রণ বা অপসারণ প্রয়োজন, 

(গ) ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন কোনো গৃহের নির্মণ কার্য বা বিস্ফোরণ বা অগ্নিকান্ড সংঘটিত হতে পারে এমন কোনো দ্রব্যের অপসারণ বা বন্ধ করা প্রয়োজন,

(ঘ) পতনোন্মুখ কোনো ঘর, তাবু বা গাছ প্রভৃতির অপসারণ বা মেরামত বা ঠেকা দেয়া প্রয়োজন, 

(ঙ) বিপদ নিবারণের জন্য কোনো পথের নিকটবর্তী কোনো পুকুর, কুপ বা গর্তের চারিদিকে বেড়া দেয়া প্রয়োজন,

(চ) বিপদজনক প্রাণী আটক রাখা বা মেরে ফেলার প্রয়োজন,

তাহলে উক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট যে ব্যক্তি এরূপ বাধা বা উপদ্রব সৃষ্টি করেছে অথবা এরূপ ব্যবসা বা পেশা চালাচ্ছে অথবা এরূপ মালপত্র বা পণ্যদ্রব্য রেখেছে অথবা এরূপ গৃহ, তাবু, কাঠামো, বস্তু, পুকুর, কুপ, প্রাণী বা বৃক্ষের মালিক, দখলকার বা নিয়ন্ত্রণকারী তার প্রতি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণ উপদ্রব অপসারণ, নিয়ন্ত্রণ, সংরক্ষণ বা রক্ষণা-বেক্ষণের শর্ত সাপেক্ষে  আদেশ দিবেন। তবে যার বিরুদ্ধে আদেশ প্রদান করা হয়েছে তিনি নির্ধারিত স্থান ও সময়ে আদেশ প্রদানকারী ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট হাজির হয়ে আপত্তি উত্থাপন করতে পারবেন এবং আদেশটি বাতিল বা সংশোধনের জন্য প্রার্থনা করতে পারবেন। 

 

আদেশ জারী অথবা বিজ্ঞপ্তি করণঃ 

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৩ ধারা অনুসারে কোনো গণ উপদ্রব অপসারণের আদেশ সমন জারীর পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর জারী করতে হবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৪(১) ধারা)। এরূপ আদেশ উক্তরূপে জারী করা সম্ভব না হলে সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধি অনুসারে বিজ্ঞাপিত হতে হবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৪(২) ধারা)। 

 

আদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তির কর্তব্যঃ

যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে এরূপ আদেশ দেয়া হয়েছে তিনি নির্দেশিত কার্য সম্পন্ন করবেন অথবা হাজির হয়ে উহার বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৫ ধারা)। 

 

ব্যর্থতার পরিণামঃ 

যার বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৩ ধারা অনুযায়ী গণ উপদ্রব অপসারণের আদেশ দেয়া হয়েছে তিনি যদি ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৫ ধারা অনুসারে উক্ত কার্য সম্পাদন না করেন বা হাজির হয়ে কারণ না দর্শান তাহলে তিনি দন্ডবিধির ১৮৮ ধারা অনুসারে দন্ডনীয় হবেন এবং আদেশটি চুড়ান্ত (absolute) করা হবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৬ ধারা)। 

 

কারণ দর্শানোর ক্ষেত্রে পদ্ধতিঃ 

(১) যার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর আদেশ হয় সে যদি হাজির হয়ে কারণ প্রদর্শন করে তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। 

(২) ম্যাজিষ্ট্রেট যদি সন্তুষ্ট হন যে, আদেশটি যুক্তিসংগত ও যথাযথ নয়, তাহলে এ সম্পর্কে আর কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করবেন না। 

(৩) ম্যাজিষ্ট্রেট যদি উক্ত রূপে সন্তুষ্ট না হন তাহলে আদেশটি চুড়ান্ত করতে হবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৭ ধারা)। 

 

উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত সমূহঃ 

(১) সাক্ষ্য গ্রহণ ব্যতিরেকে শুধু স্থানীয় পরিদর্শনের উপর ভিত্তি করে কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট ১৩৩ ধারার কার্যক্রম বন্ধ করতে পারেন না (১৪ ডিএলআর ৭৪১)। 

(২) ১৩৩ ধারার অধীন অগ্রসর হলে ১৪৭ ধারার অধীন কোনো আদেশ প্রদান করা যায় না (১৫ সিডব্লিউএন ৩১৭)। 

(৩) ১৩৭ ধারার (২) অথবা (৩) উপ-ধারার অধীন কোনো আদেশ প্রদান করার পূর্বে ১৩৭ ধারার (১) উপ-ধারায় সাক্ষ্য  গ্রহণে ম্যাজিষ্ট্রেটকে বাধ্যবাধকতায় আবদ্ধ করেছে (১৭ ডিএলআর ৩১৭)। 

(৪) সাক্ষ্য গ্রহণ ছাড়া কোনো অন্তরবর্তীকালীন আদেশ স্থায়ী করা হলে তা অবৈধ হবে (১১ ডিএলআর ৪৮ ডব্লিউপি)। 

(৫) ম্যাজিষ্ট্রেট উভয় পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। জনসাধারণের অধিকার অস্বীকারের সমর্থনে নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য থাকলে ম্যাজিষ্ট্রেট অবশ্যই কার্যক্রম বন্ধ করবেন (৮ পিএলডি ১৭১ লাহোর)।  

Google News Google News
Google News এ বিরাট বাজারের সকল পোস্ট পেতে ক্লিক করে ফিডটি ফলো করুন