⚖️ জেলখানায় সাজাপ্রাপ্ত আসামীর সাথে সাক্ষাতের বিধানাবলী কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 1 week ago
- Category: পিআরবি
-
পিআরবি ৪৮৯ প্রবিধান অনুসারে যখন কোনো বন্দী বিচারের জন্য আদালতের এক্তিয়ারে থাকবে, তখন সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকের লিখিত অনুমতি নিতে হবে অথবা জেলা ম্যজিষ্ট্রেটের নিকট হতে অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় অপরাধীর সহিত জেলখানায় সাক্ষাৎ করা যাবে না। সাক্ষাৎ প্রার্থীকে লিখিত আবেদন করতে হবে। তবে কোর্ট ফি লাগবে না। আত্মীয়-স্বজন এবং অপরাধীর নিয়োগকৃত আইনজীবি এইরূপ আবেদন করতে পারবেন।
অন্যদিকে পুলিশ অফিসারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তের প্রয়োজনে আসামীর নিকট হতে কোনো তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হলে তিনি উল্লিখিত নিয়মে কর্তৃপক্ষের নিকট হতে লিখিত অনুমতি গ্রহণ পূর্বক জেলখানার জেল সুপারকে অবহিত করে অথবা পুলিশ অফিসার সরাসরি জেল সুপারের অনুমোদন নিয়ে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর সহিত সাক্ষাৎ করতে পারেন। জেল কোডের ৬৬৬ বিধি মোতাবেক জেল সুপার লিখিত আদেশ দিলে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর সহিত সাক্ষাৎ করে তদন্তকারী অফিসার মামলার তদন্ত সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। উক্ত বিধি অনুসারে কারাগারের ভিতরে জেল গেইটের নিকটে একটি নির্ধারিত কক্ষে অপরাধীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়। ঐ সময় কক্ষে কেউ থাকবে না। প্রয়োজনে অসুস্থ্য ব্যক্তিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়। তবে মৃত্যুদন্ড প্রপ্ত অপরাধীর সাক্ষাৎকার সাধারণত তার সেলে হয়ে থাকে।
জেল কোড ৬৭০ বিধি অনুযায়ী কোনো পুলিশ অফিসার যখন কোনো সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবেন, তখন কোনো জেল কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সেখানে হাজির থাকার প্রয়োজন পড়ে না। জেল কোড বিধি নং ৬৭২ অনুসারে জেল সুপার জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্ধারণ করে দিতে পারেন। যেকোনো সাক্ষাৎকারের পূর্বে ও পরে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সতর্কতার সহিত তল্লাশী করতে হয় (জেল কোড ৬৭৩ বিধি)।
অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সাক্ষাৎকারের গুরুত্বঃ
পুলিশের অপরাধ তদন্তে সাক্ষী, আসামী ও সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত জরুরী। জিজ্ঞাসাবাদকালে কখনও অতি সহজে তথ্য পাওয়া যায়, কখনোবা জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি কৌশলে তথ্য এড়ায়ে যেতে পারে। তাই তদন্তকারী অফিসারকেও জিজ্ঞাসাবাদকালে অতি কৌশলী হতে হবে। একজন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারী অফিসার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিম্নলিখিত বিষয়ে উপকৃত হতে পারেন।
(১) সহযোগী অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে।
(২) সে কোন কোন মামলায় পূর্বে জড়িত ছিলো।
(৩) তার সহযোগীরা বর্তমানে কে কোথায় অবস্থান করছে।
(৪) কে বা কারা দলবদ্ধভাবে অপরাধ করে থাকে।
(৫) কার বা কাদের অপরাধ করার এলাকা কোথায় কতদুর অবস্থিত।
(৬) কারাগারের বাইরে থাকা অন্যান্য অপরাধীদের ভবিষ্যৎ অপরাধ পরিকল্পনা কি।
(৮) অপরাধীদের ব্যবহৃত অস্ত্র ভান্ডার সম্পর্কে তথ্য প্রদান।
(৮) আন্তঃজেলা অপরাধ ও অপরাধীদের তথ্য প্রদান।
(৯) সহযোগী অপরাধীদের বিচরণ ক্ষেত্র এবং নিকট আত্মীয়ের অবস্থান স্থল।
(১০) অপরাধী দলের পৃষ্ঠপোষক কারা।
(১১) সমাজে কাদের সহযোগীতা বা ইন্ধনে অপরাধীরা নির্ভয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালায়ে থাকে ইত্যাদি।
একজন পুলিশ অফিসার উপর্যুক্ত তথ্যগুলি সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর নিকট হতে প্রাপ্ত হয়ে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেন। চোরাইমাল উদ্ধার করতে পারেন। সহযোগী অপরাধীদের নিকট হতে অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেন এবং সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য তথ্যাদি সংগ্রহ করে সেই মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণ করে মামলার যাবতীয় রহস্য উদঘাটন করতে পারেন। অপরাধীদের সনাক্ত করতে পারেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেন।