⚖️ টি আই প্যারেড কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 6 days ago
  • Category: পিআরবি

টি আই প্যারেড (Test Identificatoin Parade) বা সনাক্তকরণ মহড়া বলিতে অপরাধ তদন্তকালে ঘটনার সাক্ষীদের দ্বারা ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আসামীকে সনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা বুঝায়। সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট অপরাধে জড়িত থাকিলে তাহাকে সঠিকভাবে সনাক্ত করিতে পারিলে অপরাধটি উদঘাটন করা সম্ভব হইতে পারে। কোনো ব্যক্তির পাশাপাশি উদ্ধারকৃত চোরাইমাল সনাক্তকরণের জন্যও সনাক্তকরণ মহড়ার ব্যবস্থা করা হইয়া থাকে।


সনাক্তকরণ মহড়ার পদ্ধতি সম্পর্কে পিআরবি ২৮২ বিধিতে আলোচনা করা হইয়াছে। যখন কোনো ব্যক্তিকে সনাক্তকরণের প্রয়োজন দেখা দেয় তখন এই বিধি মোতাবেক সনাক্তকরণ মহড়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মানিয়া উক্ত মহড়া করানো হইয়া থাকে। 

(ক) একজন ম্যাজিস্ট্রেট বা একজন সাব-রেজিষ্টার অথবা সংশ্লিষ্ট মামলার আগ্রহী বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নহে এইরূপ দুইজন সন্মানিত ব্যক্তির উপস্থিতিতে সনাক্তকরণ মহড়া পরিচালনা করিতে হয়। সন্দিগ্ধ ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে এই মহড়ার ব্যবস্থা করিতে হয়। যাহাতে যে সকল সাক্ষী সন্দিগ্ধ ব্যক্তিকে সনাক্ত করিবে, তাহারা যেন কোনোভাবেই সন্দিগ্ধ ব্যক্তিকে দেখিতে না পারে এবং এমনভাবেই সন্দিগ্ধ ব্যক্তিকে রাখিতে হইবে। তবে পুলিশের নিকট নহে। সন্দিগ্ধ ব্যক্তি বা ব্যক্তিদেরকে একজন হইলে ৮ বা ১০ জন এবং একাধিক হইলে ২০ হইতে ৩০ জনকে একই পোশাক পরিহিত, একই সামাজিক মর্যাদা ও ধর্মের অনুসারী সাথে মিশ্রিত করিয়া সনাক্তকরণ মহড়ায় এক লাইনে রাখিতে হইবে। সাক্ষী একজন একজন করিয়া আসিবে এবং সন্দিগ্ধ ব্যক্তি বা ব্যক্তিদেরকে  সনাক্ত করিবে। ঐ সময় অন্য সাক্ষী তাদের দেখা ও শুনার বাহিরে থাকিবে। তবে সাক্ষীদের প্রতি যদি কোনোরূপ হুমকি থাকে বা হুমকির সম্ভাবনা থাকিলে এমন ব্যবস্থা করিতে হইবে যেন- সন্দিগ্ধ ব্যক্তি কোনো সাক্ষীকে দেখিতে না পারে। সাক্ষীরা শুধু সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদেরকে দেখিতে পারিবে। মহড়া পরিচালনাকারী নিশ্চিত হইবেন যে, সাক্ষী ও পুলিশের মধ্যে কোনোরূপ যোগসাজস হয় নাই এবং এই মর্মে তিনি একটি সার্টিফিকেট দিবেন। 

(খ) সনাক্তকরণ মহড়ায় হাজির হওয়া সাক্ষীদের এবং সন্দিগ্ধ ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের উপস্থিতি বিপি ফরম ৪৬-এ অন্তর্ভুক্ত করিয়া ম্যাজিস্ট্রেট বা মহড়া পরলিচলানাকারী মন্তব্য সহ স্বাক্ষর করিবেন। 

(গ) পিআরবি প্রবিধান অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিগণ সাক্ষীদের মুখামুখি হইলে সাক্ষীরা পূর্ব-পরিচয় ছাড়াই তাহাদের দেখিয়াই সনাক্ত করিতে পারিবে জানাইলে এবং আসামীকে দেখিয়া এনং গলার আওয়াজ শুনিয়া চিনিতে পারিয়া থাকিলে আদালত তাহা গ্রহণ করিতে পারেন। 

(ঘ) সনাক্ত করণ মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হইল সাক্ষী কর্তৃক আসামীকে সনাক্তকরণ করার ক্ষমতা যাচাই করা। তাই এই কাজটি খুবই নিরপেক্ষতার সহিত করিতে এবং সাক্ষী যেন কোনোরূপ বিভ্রান্তি ও বিব্রতকর অবস্থায় না পড়ে তাহাও নিশ্চিত করিতে হইবে। 

(ঙ) পরিস্থিতি অনুসারে কারাগারের ভিতরেও এই মহড়ার ব্যবস্থা করা যায়, যদি বিচারাধীন কয়েদী এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি থাকে। তবে বিচারাধীন কয়েদী ও জামিনপ্রাপ্ত  ব্যক্তিদের মহড়া আলাদাভাবে করিতে হইবে। 

উপরোল্লিখিত পদ্ধতির অনুরূপ পদ্ধতিতে চোরাই উদ্ধারকৃত মালামাল সম্পর্কেও সনাক্তকরণ মহড়া করানো যায়। এইক্ষেত্রে উদ্ধারকৃত প্রায় একই ধরণের আনুপাতিক হারের মালামালের সহিত মিশাইয়া নিতে হইবে এবং কথিত চোরাই উদ্ধার অনুরূপ অন্য মালামাল বাদী বা সাক্ষীকে কখনও পূর্বেই দেখানো যাইবে না। এই মহড়া কোর্টে বা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক যে কোনো স্থানে করানো যাইতে পারে। এই ক্ষেত্রেও ম্যাজিস্ট্রেটকে পূর্বের মতো বিপি ফরম ৪৬-এ সার্টিফিকেটসহ স্বাক্ষর করিতে হইবে। 

(চ) এই প্রবিধান মোতাবেক ঘটনার সময়ে গ্রেফতারকৃত দাঙ্গাকারীকে এবং পরে সন্দিগ্ধ হিসাবে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের সহিত একসাথে রাখা যাইবে না। প্রত্যেকের নাম পরিচয় কোর্টে পাঠানোর পূর্বেই লিপিবদ্ধ করিতে হইবে। 

(ছ) কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি সনাক্তকরণ মহড়ায় হাজির হইতে অস্বীকৃতি জানাইলে শুধু এই কারণেই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাইবে না। সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ হইলে তাহাকে বিচারে সোপর্দ করা যাইবে। বিপি ফরম ৪৬-এ এই সংক্রান্তে নোট থাকিবে। যাহা আদালতে সাক্ষ্য হিসাবে গৃহীত হইবে। 


সনাক্তকরণ মহড়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট আইডেন্টিফিকেশন মেমো প্রদান করিবেন। উহা সাক্ষ্য আইনের ৮০ ধারা অনুসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ইহাতে সনাক্তকারী সাক্ষীর বক্তব্য লিপিবদ্ধ থাকে। এই কাজটি কোন ম্যাজিস্ট্রেট করিলে তাহার সাক্ষ্য দিতে হয় না, তবে ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া অন্য কেহ এই মেমো প্রদান করিলে তাহাকে আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করিতে হইবে। 


সনাক্তকরণ মহড়ায় আসামীপক্ষের উকিল হাজির থাকিতে পারে, তবে তাহার কোনো ভুমিকা থাকিবে না। শুধু নিরব দর্শক।