⚖️ মামলা নিস্পত্তির বিধানসমূহ কি কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 1 month ago
- Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
-
নিম্নে বর্ণিত উপায়ে কোনো একটি মামলার পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে।
(১) নালিশ খারিজঃ
ম্যাজিষ্ট্রেট বাদী কর্তৃক ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারায় শপথ পূর্বক প্রদত্ত বিবৃতি (যদি থাকে) এবং ২০২ ধারা অনুসারে পরিচালিত অনুসন্ধান বা তদন্তের ফলাফল (যদি থাকে) বিবেচনার পর যদি মনে করেন যে, নালিশের উপর কার্যক্রম গ্রহণের মতো পর্যাপ্ত হেতু নেই তাহলে তিনি ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৩ ধারায় নালিশ খারিজ করতে পারবেন। এরূপ ক্ষেত্রে তিনি সংক্ষেপে তার এরূপ করার কারণ লিপিবদ্ধ করবেন। ২০০ ধারার জবানবন্দী গ্রহণ করার পর যদি আদালত সন্তুষ্ট হন যে আরজীতে লিপিবদ্ধ বক্তব্য ও বাদীর প্রদত্ত জবানবন্দীর মধ্যে প্রচুর অসমাঞ্জস্যতা বা গড়মিল রয়েছে তাহলে তাৎক্ষণাৎ দরখাস্তটিকে খারিজ করতে পারেন।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৩ ধারার অধীন নালিশ খারিজের অর্থ অব্যাহতি বা খালাস (discharge or acquittal) নয়। এরূপ নালিশ খারিজের ক্ষেত্রে আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য অগ্রসর হওয়া যায় (২৩ ডিএলআর ১২১)।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৩ ধারায় ডিসমিস করার পর একই ঘটনার উপর একটা নতুন নালিশ গ্রহণ করা একই ম্যাজিষ্ট্রেটের জন্য বাধা নেই (২৯ স্যাড ১২৬ এফবি)।
(২) সমন বা পরোয়ানার জন্য ফি প্রদান না করার ক্ষেত্রেঃ
বর্তমান বলবৎ কোনো আইন বলে সমন বা গ্রেফতারী পরোয়ানার জন্য কোনো ফি বা অপর কোনো ফি প্রদানের ব্যবস্থা থাকলে উক্ত ফি পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সমন বা গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রদান করা হবে না এবং এ ফি যদি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করা হয় তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৪(৩) ধারা অনুযায়ী নালিশ খারিজ করতে পারবেন।
(৩) পুলিশ কর্তৃক দাখিলকৃত চুড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণঃ
পুলিশ কোনো জিআর মামলায় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারা অনুসারে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ২০২(২খ) ধারা অনুসারে এরূপ প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামীকে অব্যাহতি দিতে পারেন।
(৪) অভিযোগ গঠন বিবেচনার সময় অব্যাহতিঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪১(ক) ধারা অনুসারে উভয় পক্ষকে শুনে এবং নথিপত্র পর্যলোচনাক্রমে ম্যাজিষ্ট্রেট যদি মনে করেন যে, আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ (Charge) ভিত্তিহীন তবে তিনি আসামীকে অব্যাহতি দিবেন। তবে এক্ষেত্রে তিনি এজাহার, অভিযোগপত্র, কেস ডায়রী, মেডিক্যাল সার্টিফিকেট, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারার জবানবন্দী, ২০০ ধারার হলফী জবানবন্দী , ফৌজদারী কার্যবিধির ২০২ ধারার তদন্ত প্রতিবেদন, পেশকৃত দলিল পত্রাদি ইত্যাদি বিবেচনা করবেন।
(৫) অভিযোগের সত্যতা স্বীকারঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪১-ক ধারা অনুসারে উভয় পক্ষকে শুনে ও নথিপত্র পর্যলোচনা করে ম্যাজিষ্ট্রেট যদি আসামী অপরাধ করেছে বলে মনে করেন তবে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪২ ধারা মোতাবেক আসামীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ (Charge) গঠন করবেন এবং যে অপধের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো তা যদি তিনি স্বীকার করেন তাহলে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৩ ধারায় আসামীকে দন্ডিত করে মামলা নথিভুক্ত করতে পারবেন।
আসামী Plea ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৩ ধারার বিধান অনুসারে রেকর্ড না করা হলে এবং আসামী তার দোষ অস্বীকার করলে সাক্ষ্য ব্যতীত guilty plead এর উপর ভিত্তি করে প্রদত্ত দন্ডাজ্ঞা সমর্থন করা যায় না ( ২০ ডিএলআর ৪৬১)।
(৬) ফরিয়াদীর অনুপস্থিতিঃ
নালিশের ভিত্তিতে কোনো মামলা রুজু হলে এবং ম্যাজিষ্ট্রেট মামলাটি আমলে নিয়ে আসামীকে নির্ধারিত তারিখে হাজির হবার জন্য সমন প্রদান করে থাকলে উল্লিখিত তারিখে ফরিয়াদী হাজির না হলে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৭ ধারা মোতাবেক ম্যাজিষ্ট্রেট আসামীকে অব্যাহতি দিবেন, তবে তিনি অন্যকোনো কারণ বশতঃ উপযুক্ত বলে মনে করলে অন্য কোনোদিন পর্যন্ত মামলার শুনানী মুলতবী রাখতে পারবেন। তবে আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করা হলে এ ধারা প্রযোজ্য হবে না।
আরও শর্ত থাকে যে, ফরিয়াদী যদি সরকারী কর্মচারী হন এবং তার ব্যক্তিগত হাজিরা প্রয়োজন না হয় তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে হাজির হতে অব্যাহতি প্রদান করে মামলার বিচারকার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৭ ধারায় কোনো আসামীর খালাস ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৩ ধারায় আসামীর খালাস বলতে যা বুঝায় সে পর্যায়ে পড়ে না, তাই একই বিষয়ের উপর নতুন নালিশ করতে কোনো বাঁধা নেই (৪৭ ডিএলআর (১৯৯৫) ৩১৩)।
(৭) নালিশ প্রত্যাহারঃ
কোনো মামলার চুড়ান্ত আদেশ হবার পূর্বে ফরিয়াদী যদি নালিশ প্রত্যাহারের জন্য ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট প্রার্থনা করেন এবং ম্যাজিষ্ট্রেট নালিশ প্রত্যাহারের অনুমতি প্রদানের পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে মর্মে সন্তুষ্ট হন, তাহলে ফৌজাদারী কার্যবিধির ২৪৮ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে উহা প্রত্যাহারের অনুমতি প্রদান করে আসামীকে খালাস দিবেন।
অভিযোগ উঠিয়ে নেয়ার আবেদন করলেই কাজের সাধারণ নিয়ম হিসেবে আদালত এর সম্মতি প্রদান করবেন তা নহে। বরং আদালত আবেদনে বর্ণিত কারণের প্রতি মনোনিবেশ করবেন (৪০ ডিএলআর ২৫৯)।
মামলা উঠিয়ে নেয়ার সম্মতি অবশ্যই বিচারকারী আদালত ইহার বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে দিবেন। এরূপ সম্মতি অবশ্যই প্রভাবমুক্ত হতে হবে (২৮ ডিএলআর ৩৮৬)।
(৮) সংবাদদাতা না থাকলে বিচার কার্যক্রম বন্ধঃ
নালিশ ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে রুজুকৃত মামলায় অর্থাৎ জিআর মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট অথবা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এর পূর্ব অনুমতি নিয়ে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট মামলার বিচার কার্যক্রমের যে কোনো পর্যায়ে সংবাদদাতার অনুপস্থিতিতে বা সাক্ষী হাজির না করানোর কারণে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৯ ধারা অনুসারে মামলার কার্যক্রম বন্ধ করে আসামীকে মুক্তি দিতে পারেন।
এক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম বন্ধ করার পরও পুনরায় কার্যক্রম শুরু করতে বাঁধা নেই।
যেক্ষেত্রে বন বিভাগ কর্তৃক মামলা চালানো হয় সেক্ষেত্রে ইহা নালিশ ব্যতীত অন্যভাবে দাখিল হয়। সুতরাং ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৯ ধারা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (১৩ সিআরএলজে ৮৬০)।
(৯) আপোষ মীমাংসাঃ
কোনো মামলার বাদী এবং বিবাদীদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা হলে এবং তারা যৌথভাবে আপোষনামার দরখাস্ত ম্যাজিষ্ট্রেট এর নিকট দাখিল করলে এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪৫(১) ও (২) ধারা অনুযায়ী অপরাধটি মীমাংসাযোগ্য হলে ম্যাজিষ্ট্রেট ৩৪৫(৬) ধারায় আপোষের অনুমতি প্রদান করে আসামীকে খালাস দিতে পারেন।
(১০) পূর্ণাংগ রায়ের মাধ্যমে খালাস বা শাস্তিঃ
ম্যাজিষ্ট্রেট যদি ২৪৪ ধারা অনুযায়ী সাক্ষ্য গ্রহণ করে এবং তিনি স্বতপ্রবৃত্ত হয়ে যে অতিরিক্ত সাক্ষ্য হাজির করতে বলেন তা গ্রহণ করে এবং আসামী পক্ষের সাফাই সাক্ষ্য (যদি থাকে) গ্রহণ করে তিনি যদি আসামীকে নির্দোষ সাব্যস্ত করেন তাহলে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৫(১) ধারায় আসামীকে খালাস প্রদান করবেন অথবা দোষী সাব্যস্ত করে ২৪৫(২) ধারায় শস্তি প্রদান করবেন এবং মামলা নথিভুক্ত করবেন।