⚖️ ভ্রাম্যমান আদালত কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 3 weeks ago
  • Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
সচরাচর যে স্থানে আদালত বসে নিত্যদিনের কর্মকান্ড সমাধান করে থাকেন, সে স্থানে আদালত না বসে যদি অন্য কোনো স্থানে কোনো কোনো দিনের কোনো কোনো সময়ে কতিপয় মাইনর এ্যাক্টস এর অধীন সংঘটির অপরাধ সমূহের দ্রুত বিচার নিস্পত্তি করেন তবে তাকে ভ্রাম্যমান আদালত বলা হয়। মামলা আমলে নেয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন যে কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট হাট বাজারে, রেল স্টেশনে, রাস্তায়, ইটের ভাটায়, খাল-বিল-নদি ইত্যাদি যে কোনো স্থানে ভ্রাম্যমান আদলত পরিচালনা করতে পারেন। সাধারণত মোটরযান অধ্যাদেশ বর্তমানে সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮, বিশুদ্ধ খাদ্য আইন, রেলওয়ে আইন, ইট  পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন, জুয়া আইন, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন, অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের (মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং মজুদ নিয়ন্ত্রণ) আইন, মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, দি স্টান্ডার্স অব ওয়েটস এন্ড মেসার্স অর্ডিন্যান্স, দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইন, অভ্যান্তরীন নৌ চলাচল অধ্যাদেশ, বিদ্যুৎ আইন ইত্যাদি ধরণের মাইনর এ্যাক্টস এর আওতাধীন অপরাধের বিচারের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়ে থাকে। ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৫২ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ম্যাজিষ্ট্রেট তার বিচারের অধিক্ষেত্রভুক্ত যেকোনো এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে পারেন। 

 

ভ্রাম্যমান আদালত সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচলনার নিমিত্তে পেশকার, প্রসিকিউটিং অফিসার, পিয়ন প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স সাথে নিতে হয়। কোনো স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার পূর্বে উক্ত স্থানে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো ধরণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। ভ্রাম্যমান আদালতের কর্মকান্ড সঠিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য আদেশপত্র, অভিযোগ গঠনের ফরম, ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামীকে পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ফরম, জরিমানা আদায়ের রশিদ বই, ডিসিআর বই, আদালতের সীল মোহর ইত্যাদিও সাথে রাখতে হবে। 

 

প্রসিকিউটিং অফিসার হতে কোনো অপরাধের জন্য প্রসিকিউশন রিপোর্ট পাওয়ার পর ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪১ক ধারা অনুসারে বিবেচনা করে আসামীর বিরুদ্ধে ২৪২ ধারা মোতাবেক অভিযোগ গঠন করবেন। আসামীকে পড়ে শুনানো ও বুঝিয়ে দেয়ার পর যদি আসামী দোষ স্বীকার করে তাহলে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৩ ধারা অনুসারে আসামীকে দোষী সাব্যস্ত করে দন্ড প্রদান করবেন। আসামী দোষ স্বীকার না করলে শুনানীর জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ ধার্য করে এবং উক্ত তারিখে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করে আসামীকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন। জরিমানার অর্থ আদায় হলে অনতিবিলম্বে ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে ২৬, বিচার প্রশাসন ( 26, Administration of Justice) খাতে জমা দেয়ার জন্য পেশকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। জরিমানার অর্থ জমা না দিয়ে হাতে ধরে রাখা বা খরচ করে ফেলা অপরাধের শামিল। 

 

ধরা যাক ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ এর অধীনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে যাওয়ার পর প্রসিকিউটিং অফিসারের নিকট হতে আসামী কর্তৃক লাইসেন্স ব্যতীত ইট পোড়ানোর অপরাধের কারণে ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭ ধারায় আসামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন রিপোর্ট পাওয়া যায়। আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বিনা লাইসেন্সে ইট পোড়াচ্ছে বলে স্বীকার করে। তখন ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৩ ধারা মোতাবেক আসামীকে ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭ ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা জরিমানা দন্ডে অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। কিন্তু ঐ সময় আসামীর নিকট জরিমানার অর্থ পরিশোধের জন্য ১০,০০০/- টাকা নেই, তবে সময় দেয়া হলে সে পরিশোধ করতে পারবে বলে আদালতকে অবহিত করে। এ ক্ষেত্রে আদালত সন্তুষ্ট হলে আসামীকে জরিমানা অনাদায়ের কারণে কারাদন্ড ভোগের জন্য জেলখানায় প্রেরণ না করে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৮ ধারা অনুযায়ী অনধিক ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ কিস্তিতে জরিমানার অর্থ পরিশোধের জন্য আদেশ প্রদান করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, যে তারিখে বা তারিখ সমূহে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে হবে সে তারিখ বা তারিখ সমূহে আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে একটি মুচলেকা সম্পাদন করলে আদালত কারাদন্ডের আদেশ স্থগিত রাখবে এবং অপরাধীকে মুক্তি দিবেন।

Google News Google News
Google News এ বিরাট বাজারের সকল পোস্ট পেতে ক্লিক করে ফিডটি ফলো করুন