⚖️ হোয়াইট কলার অপরাধী কারা?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 2 weeks ago
- Category: অপরাধ বিজ্ঞান
অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে হোয়াইট কলার অপরাধীরা অর্থনৈতিক অপরাধী হিসাবে গণ্য। পেশা বা ব্যবসার সুবিধার জন্য অথবা ব্যবসায় অবৈধ লাভ করিবার জন্য ব্যবসায়ী ও পেশাজীবিরা অহরহ যে অপরাধ করিয়া থাকে, তাহারাই হোয়াইট কলার অপরাধী। অপরাধ বিজ্ঞানী এডইন হ্যারি সাদারল্যান্ড উচ্চ আর্থ-সামাজিক মর্যাদার এই সকল অপরাধীদেরকে হোয়াইট কলার অপরাধী হিসাবে আখ্যায়িত করিয়াছেন। হোয়াইট কলার অপরাধীরা প্রধানত ফৌজদারী ও দেওয়ানী আইন ভঙ্গসহ বাংলাদেশে প্রচলিত শিল্প আইন, পরিবেশ আইন, ব্যবসা সংক্রান্ত আইন, চুক্তি আইন, গ্রন্থ-স্বত্ব আইন, ট্রেড মার্ক আইন, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ আইন, বীমা আইন, আমদানী রপ্তানী আইন, শুল্ক আইন, আয়কর আইন ইত্যাদীর পরিপন্থি কাজ করিয়া থাকে। অপরাধ বিজ্ঞানী সাদারল্যান্ড ১৯৪০ সাল হইতে হোয়াইট কলার অপরাধীদের বিশষটি সর্ব প্রথমে জনসম্যকে পরিচিত করেন।
অন্যান্য অপরাধীদের সহিত হোয়াইট কলার অপরাধীর পার্থক্য:
(১) এই অপরাধটি উচ্চ আর্থ-সামাজিক মর্যাদার লোকদের অপরাধ। নিম্ন আর্থ-সামাজিক মর্যাদার লোকেরা প্রচলিত আইন ভঙ্গ করিলেও তাহারা হোয়াইট কলার অপরাধী হয় না।
(২) নিম্ন আর্থ-সামাজিক ব্যক্তিরা বানিজ্য সংক্রান্ত আইন ভঙ্গ করিলেও তাহারা হোয়াইট কলার অপরাধী হিসাবে গন্য হয় না।
(৩) উচ্চ আর্থ-সামাজিক মর্যাদার ব্যক্তিরা তাহার ব্যবসা বা পেশার সহিত সম্পৃক্ত নহে এমন কোনো কাজ করিতে গিয়া ফৌজদারী আইন ভঙ্গ করিলেও তাহারা অপরাধী হয় না। কেননা হোয়াইট কলার অপরাধী হিসাবে গণ্য হইতে হইলে অপরাধীর পেশা বা ব্যবসার সহিত সম্পৃক্ততা থাকিতে হয়।
(৪) পেশা বা ব্যবসার সহিত সঙ্গতিহীন বা সম্পর্কহীন অপরাধগুলি হোয়াইট কলার অপরাধের অন্তর্ভুক্ত নহে।
হোয়াইট কলার অপরাধ নানাভাবে সমাজের ক্ষতি করিয়া থাকে। যেমন-
(১) ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে এই ধরণের অপরাধীরা পরস্পর যোগ-সাজসে সিন্ডিকেট তৈরী করিয়া বাজার ব্যবস্থা বিশৃংখলা করিয়া দেয়।
(২) দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটাইয়া জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়াইয়া দেয়।
(৩) ব্যবসায়িক প্রতারণার মাধ্যমে জনগণের ক্ষতি করিয়া থাকে।
(৪) সরকারী কর্মকর্তাদের ঘুষ গ্রহনে প্রলুদ্ধ করিয়া বা বাধ্য করিয়া সমাজে অন্য লোকের ক্ষতি করিয়া থাকে।
(৫) চিকিৎসা পেশা বা ব্যবসায় নিরীহ মানুষকে সর্বশান্ত করা হয়।
(৬) নকল ঔষধ তৈরী করিয়া বাজারজাত পূর্বক মানুষের সমূহ ক্ষতি করিয়া থাকে।
(৭) রাজনৈতিক প্রতারণার মাধ্যমে দেশের ও সমাজের অপূরনীয় ক্ষতি করিয়া থাকে।
(৮) প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রচুর আর্থিক ক্ষতি সাধন করে।
(৯) বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করিয়া অর্থনীতির উপর প্রভাব বিস্তার করিয়া থাকে।
(১০) শিল্প-কারখানা বিশেষ করিয়া গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ ও অগ্নিকান্ড ঘটাইয়া ব্যাপক প্রাণহানী এবং অর্থনীতির মেরুদন্ড ভাঙ্গিয়া দেয়।
(১১) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশৃংখলা সৃষ্টি করা হয়।
(১২) মিডিয়ার উপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করিয়া সমাজের অনেক ক্ষতি করে।