⚖️ প্রাথমিক সাক্ষ্য ও মাধ্যমিক সাক্ষ্য কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 1 week ago
- Category: সাক্ষ্য আইন
-
সাক্ষ্য সাধারণত দুই প্রকার। যথা-
(১) মৌখিক সাক্ষ্য এবং
(২) দলিলী সাক্ষ্য (সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারা)।
দলিলী সাক্ষ্য আবার দুই প্রকার। যথা-
(ক) প্রাথমিক সাক্ষ্য এবং
(খ) মাধ্যমিক সাক্ষ্য।
(ক) প্রাথমিক সাক্ষ্যঃ প্রাথমিক সাক্ষ্য এক প্রকারের মৌল সাক্ষ্য। সাক্ষ্য আইনের ৬১ ধারায় কোনো দলিলের বিষয়বস্তু প্রমাণ সংক্রান্তে প্রাথমিক সাক্ষ্য এর বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ প্রাথমিক সাক্ষ্য দ্বারা কোনো দলিল প্রমাণ করা যায়।
সাক্ষ্য আইনের ৬২ ধারা মোতাবেক যখন কোনো দলিল আদালতের পরিদর্শনের জন্য উপস্থাপন করা হয়, তখন সেই দলিলটিই প্রাথমিক সাক্ষ্য। এই দলিল কয়েকটি খন্ডে বিভক্ত থাকলে প্রত্যেকটি খন্ডই ঐ দলিলের প্রাথমিক সাক্ষ্য।
(খ) মাধ্যমিক সাক্ষ্যঃ সাক্ষ্য আইনের ৬৩ ধারা মোতাবেক মূল দলিলের পরিবর্তে অন্য যে সকল বস্তু দলিলের অনুরূপ বিষয়বস্তুসহ পেশ করা হয়। যেমন- নিম্ন লিখিত সাক্ষ্যগুলি মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্যঃ
(১) সাক্ষ্য আইনের ৭৬ ধারায় বর্ণিত নিয়মে সরকারীভাবে প্রদত্ত সহিমোহরকৃত জাবেদা নকল।
(২) মূল দলিল হতে যান্ত্রিক উপায়ে সংগৃহীত নকল এবং এইরূপ নকলের সাথে মিলায়ে নেওয়া অন্যান্য নকল।
(৩) মূল দলিল হতে তৈরি অথবা মূল দলিলের সাথে মিলায়ে নেওয়া নকল।
(৪) কোনো দলিলের প্রতিলিপি (Counter Part) যে পক্ষ উহা সম্পাদন করে নাই, তার বিরুদ্ধে উহা ব্যবহারযোগ্য (সাক্ষ্য আইনের ৬২ ধারা)।
(৫) যে ব্যক্তি কোনো দলিল দেখেছে, সেই দলিলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তার মৌখিক বিবরণ।
মাধ্যমিক সাক্ষ্য দ্বিতীয় শ্রেণীর সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য।
সাক্ষ্য আইনের ৬৫ ধারা মোতাবেক নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে দলিলের অস্তিত্ব, অবস্থা বা বিষয়বস্তু সম্পর্কে মাধ্যমিক সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।
(ক) মূল দলিলটি যার বিরুদ্ধে প্রমাণ করতে হবে, সেই দলিলটি যদি সে ব্যক্তির দখলে বা কর্তৃত্বাধীনে থাকে অথবা আদালতের আওতার বাহিরে কোনো ব্যক্তির দখলে বা কর্তৃত্বাধীনে থাকে অথবা এমন লোকের দখলে বা কর্তৃত্বাধীনে আছে, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য আইনের ৬৬ ধারায় নোটিশ পাওয়া সত্বেও মূল দলিলটি আদালতে দাখিল করতেছে না।
(খ) মূল দলিলটি যার বিরুদ্ধে প্রমাণ করতে হবে, সে ব্যক্তি অথবা তার কোনো প্রতিনিধি যদি মূল দলিলের অস্তিত্ব, অবস্থা ও বিষয়বস্তু লিখিতভাবে স্বীকার করেছে বলে প্রতীয়মান হয়।
(গ) মূল দলিলটি যেক্ষেত্রে বিনষ্ট হয়েছে অথবা হারায়ে গেছে অথবা যেক্ষেত্রে মূল দলিলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি তার নিজের ত্রুটি বা অবহেলা ব্যতীত অন্যকোনো কারণে যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে উক্ত দলিল দাখিল করতে অপারগ।
(ঘ) মূল দলিলটি যদি এরূপ প্রকৃতির হয় যে, উহা সহজে স্থানান্তর করা যায় না, যেমন কোনো সীমানার চিহ্ন বা প্রাচীর পত্র বা স্মৃতি ফলক ইত্যাদি।
(ঙ) মূল দলিলটি যেক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইনের ৭৪ ধারা মোতাবেক সরকারী দলিল।
(চ) মূল দলিলটি যদি এরকম প্রকৃতির হয় যে, উহার সহিমোহরযুক্ত নকল সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহারের বিধান আছে।
(ছ) মূল দলিলটি যদি এমন হয় যে, উহাতে বহু দলিলের বিবরণ আছে এবং সেগুলি আদালতের পক্ষে পরীক্ষা করে দেখা সুবিধাজনক নয় এবং যা প্রমাণ করতে হবে তা ঐ নকল দলিলের ফল স্বরূপ।
উপর্যুক্ত (ক) (গ) ও (ঘ) এর ক্ষেত্রে দলিলটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে যে কোনো মাধ্যমিক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। (খ) এর ক্ষেত্রে লিখিত বিবৃতি গ্রহণযোগ্য। (ঙ) এবং (চ) এর ক্ষেত্রে লিখিত সংশ্লিষ্ট দলিলের সহিমোহরকৃত নকল মাধ্যমিক সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য, অন্য কিছু গ্রহণযোগ্য নয়। (ছ) এর ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি দলিলগুলি পরীক্ষা করে দেখেছেন এবং অনুরূপ দলিল পরীক্ষা করে দেখার ব্যাপারে যিনি পারদর্শী তার সাক্ষ্য গ্রহণীয় হবে।