⚖️ রিসিভার কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 1 week ago
- Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
স্থাবর সম্পত্তি লইয়া বিরোধ এবং কলহের সৃষ্টি হইলেই এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকল্পে একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশ অফিসারকে বিশেষ করিয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে সেই সম্পত্তির রিসিভার নিয়োগ করিয়া থাকেন। জমি সংক্রান্ত বিরোধের ফলে শান্তি ভঙ্গের আশংকা থাকিলে পুলিশ রিপোর্টের ভিত্তিতে বা অন্যকোনোভাবে সংবাদ প্রাপ্ত হইয়া যখন কোনো নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এইমর্মে সন্তুষ্ট হন যে, সেখানে শান্তি ভঙ্গের কারণ আছে, তখন তিনি সংশ্লিষ্ট পক্ষকে বিরোধীয় জমিতে প্রকৃত দখল সম্পর্কে দাবী পেশ করার জন্য নির্দেশ দিয়া লিখিত আদেশ দিয়া থাকেন। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৫(১) ধারা।
অতঃপর ম্যাজিষ্ট্রেট সংশ্লিষ্ট পক্ষের দাবী সম্পর্কে উভয় পক্ষকে শুনিয়া বক্তব্য বিবেচনা করিয়া প্রয়োজনে সাক্ষ্য গ্রহণ করিয়া ঐ সময়ে কোন পক্ষ প্রকৃত দখলে ছিল, তাহা স্থির করেন। যদি ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত আদেশ প্রদানের পূর্ববর্তী দুই মাসের মধ্যে কোনো পক্ষকে বলপূর্বক বা অন্যায়ভাবে বেদখল করা হইয়াছে, সেই ক্ষেত্রে পূর্বে দখলে থাকা পক্ষকে (বর্তমানে বেদখলকৃত) উক্ত তারিখে দখলে ছিল বলিয়া বিবেচনা করিবেন। এই পরিস্থিতে ম্যাজিষ্ট্রেট জরুরী মনে করিলে তিনি এই ধারার বিধান মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়া জমি বা বিষয়বস্তু ক্রোক করিয়া স্থানীয় পুলিশ তথা থানার অফিসার ইনচার্জকে রিসিভার নিয়োগ করিতে পারেন। দখলদার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দুঃসাধ্য হইলেই এবং বিরোধ ক্রম বর্ধমান হইলে পুলিশকে রিসিভার নিয়োগ করা হয়। শুধুমাত্র পুলিশ রিপোর্টের ভিত্তিতেও ম্যাজিষ্ট্রেট ব্যবস্থা নিতে পারেন। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৬ ধারার বিধান অনুসারে যখন ম্যাজিষ্ট্রেট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, বিতর্কিত জমিতে বা বিষয়বস্তুতে কোনো পক্ষ দখলে ছিল, তাহা নির্ণয় করা তাহার পক্ষে সম্ভব হইতেছে না, তখন তিনি উহা ক্রোক করিতে পারেন।
ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৬(২) ধারার বিধান মোতাবেক যদি দেখা যায় যে, দেওয়ানি আদালত ইতিপূর্বে উক্ত সম্পত্তি সম্পর্কে রিসিভার নিয়োগ করেন নাই, তবে ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশকে রিসিভার নিয়োগ করিতে পারেন এবং এই ক্ষেত্রেও দেওয়ানি কার্যবিধির অধীন নিযুক্ত রিসিভারের মতো পুলিশের সকল কর্তৃত্ব থাকিবে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৮৬ সালের ৮ আগষ্টের প্রজ্ঞাপন নং-3AIV/204/83 640 এর বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (UNO) একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিষ্ট্রেট এবং তাহার ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার রহিয়াছে।
বিরোধীয় সম্পত্তি নিয়া শান্তিভঙ্গের আশংকা থাকিলে, ম্যাজিষ্ট্রেট উক্ত সম্পত্তি ক্রোক করিয়া পুলিশ অফিসারকে রিসিভার নিয়োগ করিতে পারেন, এই ক্ষেত্রে উক্ত আদেশ দায়রা আদালত স্থগিত রাখতে পারেন না (28DLR 30 এবং 29 DLR 412)।
দেওয়ানি আদালত জমি সম্পত্তির বিরোধের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট বিরোধীয় জমি প্রভৃতি ক্রোক করিয়া রিসিভার নিয়োগ করিতে পারেন। স্থাবর সম্পত্তির দখল যেক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালত কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, সেইক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারায় ব্যবস্থা নিতে পারেন না (NLR1981 Cr.Lj463 এবং NLR 1984. 101)।
দেওয়ানি আদালত যদি রিসিভার নিয়োগ করেন অথবা অন্যকোনোভাবে সম্পত্তি ক্রোক করেন এবং পুলিশ অফিসারকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ক্ষমতা অর্পণ করেন, তখন ম্যাজিষ্ট্রেট উভয় পক্ষকে নিজ নিজ দখলে স্থিতাবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়া শান্তি ভঙ্গের আশংকা রহিত করিতে পারেন (PLD 1959 Lah 264)।
দেওয়ানি আদালত বিরোধীয় বিষয়ে দখল বিবেচনা না করিলে বা রিসিভার নিয়োগ না করিলে ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া পুলিশ অফিসার তথা থানার অফিসার ইনচার্জকে রিসিভার নিয়োগ করিতে পারেন। অন্যদিকে দেওয়ানি মামলা হইলে ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধি ১০৯ এবং ১৫১ ধারা মোতাবেক দেওয়ানি আদালতের ডিক্রি অমান্যকারী পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারেন অথবা পুলিশ অফিসারকে রিসিভার নিয়োগ করিয়া কিংবা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য আদেশ দিতে পারেন।
সম্পত্তি ক্রোক করা হয় ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫(৪) ধারা মোতাবেক এবং জমির ফসল বা কোনো পচনশীল দ্রব্য থাকিলে ফৌজদারী কার্যবিধ ১৪৫ (৮) ধারা অনুসারে সেই দ্রব্য বিক্রয় করার জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট আদেশ দিতে পারেন। ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৬ ধারার বিধান মোতাবেক নিয়োগকৃত রিসিভার নিজে কোনো ক্রোককৃত সম্পত্তি বিলিব্যবস্থা করিতে পারেন না। অন্যদিকে দেওয়ানি আদালতের নিষেধ বা ডিক্রি থাকিলে ম্যাজিষ্ট্রেট সেইমতো ব্যবস্থা নিবেন।