⚖️ অপরাধ তদন্তে রক্ত কিভাবে কাজে লাগে?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 1 week ago
  • Category: অপরাধ বিজ্ঞান

রক্ত একশ্রেণীর যোজক কলা। রক্ত ছাড়া জীবন বাঁচে না। উহাতে রক্তরস (Plasma)-তে ভেসে বেড়ায় তিনটি উপাদান। যথা-

(১) লোহিত কণিকা (RBC),

(২) শ্বেত কণিকা (WBC),

(৩) অনুচক্রিকা (Platelets) ইত্যাদি। 

১৯০০ সালে কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার (Karl Landstiner) নামক ভিয়েতনামবাসী একজন বিজ্ঞানী এই রক্তের চারটি শ্রেণী বা গ্রুপ উদ্ভাবন করেন। যেমন-

(ক) ‘O’ গ্রুপ, এতে এন্টিজেন নেই, শুধু A ও B এন্টিবডি আছে। 

(খ) ‘A’ গ্রুপ, এতে এন্টিজেন ‘A’ এবং এন্টিবডি B আছে। 

(গ) ‘B’ গ্রুপ, এতে এন্টিজেন ‘B’ এবং এন্টিবডি A আছে। 

(ঘ) ‘AB’ গ্রুপ, এতে এন্টিজেন A ও B আছে এবং এন্টিবডি নেই। 

 

উল্লিখিত রক্তের শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে অপরাধীকে সনাক্ত করা সম্ভব হয় অনেক ক্ষেত্রে। ফলে তদন্তকারী অফিসার তার তদন্তকাজে মূল অপরাধীর সাথে অপরাধের যোগসূত্র স্থাপন করতে পারেন। একই সন্তানের একাধিক দাবিদার থাকলে পিতৃত্বের/মাতৃত্বের বিরোধ মীমাংসা করা যায়। কোনো ক্ষেত্রে রক্ত শ্রেণীবিন্যাসের জন্য পাওয়া না গেলেও মানুষের শরীরের অন্যান্য রস যেমন- ঘাম, মল, মুত্র, শুক্র, লালা বা থুথু হতেও পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের বর্গ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। ফলে তদন্তকারী অফিসার অন্যান্য তথ্যের মাধ্যমে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে অপরাধীকে আইনে সোপর্দ করতে পারেন। 

 

গবেষণাগারে প্রেরিত রক্ত সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিম্নলিখিত তথ্যাদী জানা সম্ভবঃ 

(১) প্রেরিত রক্ত আসলে রক্ত কিনা;

(২) উহা মানুষ বা পশু-পাখির রক্ত কিনা;

(৩) মানুষের রক্ত হলে উহা পুরুষের, নারীর বা শিশুর রক্ত কিনা;

(৪) নারীর রক্ত হলে উহা রজঃস্থলাজনিত কিনা;

(৫) জীবিত মানুষের বা মৃত মানুষের রক্ত কিনা;

(৬) কতো দিনের পূর্বের রক্ত;

(৭) মানুষের রক্ত হলে তা ধমনীর বা শিরার রক্ত কিনা;

(৮) পরীক্ষিত রক্ত কোন গ্রুপ; 

(৯) বিষক্রিয়া বা মাদকদ্রব্য অপব্যবহারে মৃত্যু হয়েছে কিনা;

(১০) কোনো সন্তানের পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব;

(১১) পরীক্ষিত রক্ত মিশ্রিত রক্ত কিনা। 

 

রক্ত সম্পর্কে গবেষণাগার হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারী অফিসার অন্যান্য সমর্থনযোগ্য বা প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে নিম্নলিখিত অপরাধের ক্ষেত্রে ঘটনা উদঘাটনে সক্ষম হতে পারেন।  

(১) অবৈধ গর্ভপাতঃ পরিধেয় বস্ত্র, কাপড়-চোপড়, ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, মেঝে ইত্যাদিতে রক্ত থাকে। 

(২) আক্রমণ বা জখমঃ ব্যবহৃত অস্ত্র, পরিধেয় কাপড়-চোপড়, আশেপাশে, মেঝে ইত্যাদিতে রক্ত থাকে।

(৩) সিঁধেল চুরিঃ মাটিতে, দরজা-জানালার কাচে, ব্যবহৃত অস্ত্রে রক্ত থাকে। 

(৪) মোটর গাড়ি দুর্ঘটনাঃ গাড়ির বডি, টায়ার, চাকাতে, মাটিতে রক্ত থাকে।

(৫) অপরাধজনক নরহত্যা ও খুনঃ ব্যবহৃত অস্ত্র, পরিধেয় কাপড়-চোপড়, আশে পাশে, মেঝে ইত্যাদিতে রক্ত থাকে। 

(৬) ধর্ষণঃ ঘটনাস্থলে, পরিধেয় বস্ত্রে, মাটিতে, কাপড়-চোপড়ে, চাদরে রক্ত থাকে। 

(৭) বিতর্কিত সন্তানের পিতৃত্ব/মাতৃত্ব দাবিঃ এক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার পাশাপাশি DNA পরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে।

Google News Google News
Google News এ বিরাট বাজারের সকল পোস্ট পেতে ক্লিক করে ফিডটি ফলো করুন