⚖️ আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 3 weeks ago
- Category: বাংলাদেশ দন্ডবিধি
আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার-
প্রত্যেক মানুষের আইনগত অধিকার। মানুষ জন্মের পর পরই এই অধিকার প্রাপ্ত হন। এই অধিকার মানুষের সহজাত অধিকার এবং ইহার প্রয়োগে মানুষ নিজের জান মাল এবং অপরের জান মাল সুরক্ষা করিতে পারে। এই অধিকার প্রয়োগ করিতে যাইয়া মানুষকে প্রয়োজনে আক্রমনকারীর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করিতে হয় এবং এইরূপ শক্তি প্রয়োগকালে কৃত কোন কিছুই অপরাধ নহে। বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৯৬/৯৭ ধারায় আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার সম্পর্কে উল্লেখ করা হইয়াছে। উল্লিখিত ধারা অনুসারে এবং বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৯৯ ধারার শর্ত সাপেক্ষে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের জান মাল এবং অন্য যে কোন ব্যক্তির জান মাল যে কোন অপরাধ বা ক্ষতির হাত থেকে প্রতিরক্ষা করাকেই আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার বলা হয়।
কখন আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করা যায় না-
বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৯৯ ধারার বিধানমতে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করা যায় না।
১। পদাধিকারবলে সদবিশ্বাসে সম্পাদনকারী সরকারী কর্মচারী কর্তৃক সম্পাদিত বা সম্পাদনের জন্য উদ্যোগকৃত কোন কার্য, যাহা আইনের দৃষ্টিতে যথাযথরূপে যুক্তিযুক্ত না হইলেও যুক্তিসংগতভাবে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের আশংকা সৃষ্টি করে না, তাহার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকিবে না।
২। পদাধিকারবলে সদবিশ্বাসে সম্পাদনকারী কোন সরকারী কর্মচারীর নির্দেশক্রমে সম্পাদনের জন্য উদ্যোগকৃত কোন কার্য, যাহা উক্ত নির্দেশ আইনের দৃষ্টিতে যথাযথরূপে যুক্তিযুক্ত না হইলেও যুক্তিসংগতভাবে মৃত বা গুরুতর আঘাতের আশংকা সৃষ্টি করে না, তাহার বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকিবে না।
৩। যে সকল ক্ষেত্রে সরকারী কর্তৃপক্ষসমুহের আশ্রয় লাভের সময় থাকে, সেই সকল ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকিবে না।
৪। প্রতিরক্ষার জন্য যতখানি ক্ষতি করা প্রয়োজন, তাহার অধিক ক্ষতি করা যাইবে না।
আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করিয়া যখন মৃত্য পর্যন্ত ঘটানো যায়-
বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ১০০ ধারা মোতাবেক মানব দেহের প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আক্রমণকারীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যাইবে তবে দন্ডবিধি আইনের ৯৯ ধারার শর্ত সাপেক্ষে।
১। আক্রমণকারীর এইরূপ আক্রমণ যাহা এমন যুক্তিসংগত আতংক সৃষ্টি করে যে, প্রকারান্তরে মৃত্যুই হইবে অনুরূপ আক্রমণের পরিণতি।
২। আক্রমণকারীর এইরূপ আক্রমণ যাহা এমন যুক্তিসংগত আতংক সৃষ্টি করে যে, প্রাকারন্তরে গুরুতর আঘাতই হইবে অনুরূপ আক্রমণের পরিণতি।
৩। ধর্ষণের অভিপ্রায়ে আক্রমণ।
৪। অপ্রকৃত কাম-লালসা চরিতার্থ করণের অভিপ্রায়ে আক্রমণ।
৫। মানুষ্য হরণ বা অপহরণের অভপ্রায়ে আক্রমণ।
৬। এইরূপ পরিস্থিতিতে কোন ব্যক্তিকে অবৈধভাবে আটক করিয়া রাখিবার অভিপ্রায়ে আক্রমণ, যে পরিস্থিতির জন্য এইরূপ আতংক সৃষ্টি হইবার সম্ভাবনা থাকে যে, তাহার মুক্তির জন্য সে সরকারী কর্তৃপক্ষসমুহের আশ্রয় নিতে অসমর্থ হইবে।
বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ১০৩ ধারা মোতাবেক এবং দন্ডবিধি আইনের ৯৯ ধারার শর্ত সাপেক্ষে সম্পত্তি রক্ষার্থে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগে আক্রমণকারীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যাইবে।
১। দস্যুতা
২। রাত্রি বেলায় অপথে গৃহপ্রবেশ।
৩। বাসগৃহ বা সম্পত্তি সংরক্ষণের স্থানরূপে ব্যবহূত হয় এমন ইমারত, তাবুতে, জাহাজে অগ্নিকান্ডের অনুষ্ঠিত ক্ষতি।
৪। এইরূপ অবস্থায় চুরি, ক্ষতি বা অনধিকার প্রবেশ, যাহা যুক্তিযুক্তভাবে এইরূপ ভয়ের সৃষ্টি করিতে পারে যে, অনুরূপ ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগ করা না হইলে মৃত্যু বা গুরুতর জখমই হইবে উহার পরিণতি।