⚖️ খুন মামলা তদন্তের নিয়ম কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 3 days ago
- Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
-
খুন মামলা রুজু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্তকারী অফিসার ঘটনাস্থল বা অপরাধস্থলে রওয়ানা হবেন এবং ঘটনাস্থল বা অপরাধস্থলে উপস্থিত হয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করবেন। সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করার সময় মৃতদেহ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জখমের পূর্ণ বিবরণ সুস্পষ্টভাবে সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করবেন। লাশের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থান অবশ্যই সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করতে হবে। লাশের পরিধেয় বস্ত্র আলামত হিসেবে জব্দ করতে হবে। মৃত ব্যক্তি মহিলা হলে অবশ্যই একজন নারী পুলিশ দ্বারা লাশ পরীক্ষা করাতে হবে। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করা হলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করার জন্য ময়না তদন্ত করানোর উদ্দেশ্যে পুলিশ স্কটের মাধ্যমে মৃতদেহ মর্গে প্রেরণ করতে হবে।
মামলার ঘটনাস্থল বা অপরাধস্থল পরিদর্শন করে ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র সূচীপত্রে সহ পৃথক কাগজে প্রস্তুত করতে হবে। ঘটনাস্থল বা অপরাধস্থল পরিদর্শন করার সময় তদন্তকারী অফিসারকে ক্রাইমসিন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ক্রাইমসিন অর্থাৎ অপরাধ সংশ্লিষ্ট আলামত, সাক্ষ্য-প্রমাণাদি প্রাপ্তির স্থানসমূহকে বুঝায়। যেমন- মৃতদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যদি বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়, তাহলে যেখানে যেখানে লাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া যাবে, প্রত্যেকটি স্থানই ক্রাইমসিন। ঘটনাস্থল বা অপরাধস্থল অথবা ক্রাইম সিনের আশেপাশে ভালোভাবে পরিদর্শন করে কোনো আলামত পাওয়া গেলে তা জব্দ করতে হবে। অপরাধীর হাতের ছাপ, পায়ের ছাপ পাওয়া গেলে তা সতর্কতার সহিত সংগ্রহ ও সংরক্ষন করে সিআইডির পরীক্ষাগারে প্রেরণ করতে হবে। মামলার বাদী ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা মোতাবেক তাদের জবানবন্দী রেকর্ড করতে হবে। প্রয়োজনে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক ম্যাজিষ্ট্রেটের মাধ্যমে সাক্ষীর জবানবন্দী রেকর্ড করাতে হবে।
তদন্তকারী অফিসারকে গোপন ও প্রকাশ্যে তদন্ত করে হত্যার রহস্য উদঘাটন পূর্বক ঘটনায় জড়িত অপরাধীকে গ্রেফতার করতে হবে। অপরাধীকে গ্রেফতারের পর সুকৌশলে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার মূলকারণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। অপরাধী যদি ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করে তাহলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক জবানবন্দী রেকর্ড করাতে হবে। হত্যাকান্ড বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন- ধর্ষণের পর হত্যা, জমি-জমার বিরোধের কারণে হত্যা, সামাজিক কোন্দলে পূর্ব শত্রুতা বসত হত্যা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে হত্যা, টাকা-পয়সা লেন-দেন সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হত্যা, স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্যের কারণে হত্যা ইত্যাদি বিষয়ে তদন্তকারী অফিসারকে হত্যাকান্ড সংঘটনের সূত্র অবশ্যই উদঘাটন করতে হবে। হত্যাকান্ডের পূর্বে মৃত ব্যক্তির মোবাইল কললিষ্ট সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করতে হবে। ঘটনাস্থল বা অপরাধস্থলের সেল আইডি সংগ্রহ করে ঘটনার পূর্ব মুহুর্তে ঘটনাস্থলে কোন কোন মোবাইল নম্বার ব্যবহার হয়েছে তার কললিষ্ট সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করতে হবে। অপরাধীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোনো প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন অথবা মারপিট করা যাবেনা। অপরাধীকে গ্রেফতার করার জন্য এবং ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করার জন্য বিশ্বস্ত সোর্স নিয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে অপরাধীর মোবাইল নম্বারের কললিষ্ট সংগ্রহ করে পর্যালোচনা পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সন্দেহজনক কোনো অপরাধী গ্রেফতার করা হলে সনাক্তকরণ মহড়ার মাধ্যমে অপরাধীকে সনাক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তদন্তকারী অফিসার মামলার তদন্ত সংক্রান্তে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহিত আলোচনা করবেন এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত দিক-নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করবেন। তদন্ত শেষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামত সাপেক্ষে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারা মোতাবেক আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করবেন।