⚖️ ইভটিজিং প্রতিরোধে আইনী পদক্ষেপগুলি কি কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 1 week ago
  • Category: অপরাধ বিজ্ঞান
ইংরেজি Eve শব্দের আভিধানিক অর্থ হইল প্রথম নারী। বাইবেল অনুযায়ী সর্ব প্রথমে যিনি নারীরূপে জন্ম গ্রহণ করেন, তিনিই Eve। অর্থাৎ Eve হইল বিশ্বের প্রথম নারীর প্রতিভূ। তাহার পূর্বে কোনো নারী ছিলেন না। সৃষ্টিকর্তার সর্বপ্রথম সৃষ্ট নারীই হইল Eve। Eve  বলিতে কোনো নারী বা মেয়ে শিশুকে বুঝানো হইয়াছে এবং ইভটিজিং বলিতে কোনো নারী বা মেয়ে শিশুকে উত্যক্ত করা, খেপানো, বিরক্ত করা, যৌন নিপিড়নমূলক শালীনতাহানি করা বা অমর্যাদা করার বিষয়ে ইঙ্গিত করা হইয়াছে। ইভটিজিং করা কালে পুরুষ লোকটি (বালক-বৃদ্ধ) বিভিন্ন মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গি করিয়া নারী বা মেয়ে শিশুটিকে বিরক্ত বা অমর্যদা করিতে পারে। Eveteaser সব সময়েই একজন পুরুষ (বালক-বৃদ্ধ) এবং Victim একজন নারী বা মেয়ে শিশু হইবে। 

 

ইভটিজিং একটি গুরুত্বর সামাজিক ব্যাধি। ইহার প্রকোপ দিনকে দিন বাড়িতেছে। এই অপকর্মের ফলে নারী ও মেয়ে শিশু স্কুল-কলেজে তথা বাড়ির বাহিরে পা রাখিতে সাচ্ছন্দ বোধ করে না। অনেকে মানসম্মানের ভয়ে, সমাজের গ্লানির ভয়ে আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে আত্মহত্যা করিয়া সকল জ্বালা-যন্ত্রণা মিটাইয়া থাকে। কোনো একটি ঘটনা ইভটিজিং এর মাধ্যমে শুরু হইলে পরবর্তীতে নারী ধর্ষণ, অপহরণ বা খুন-জখম ইত্যাদি বড় ধরনের জঘন্য অপরাধের সৃষ্টি হইতে পারে। আজকাল এই ধরণের বহু ঘটনাই ঘটিতেছে। যেমন- ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করায় ভিকটিমের বাপ, ভাই খুন। তাই ইহাকে গুরুত্বর অপরাধ হিসাবে গণ্য করা উচিৎ। 

 

ইভটিজিং প্রতিরোধের জন্য বর্তমানে তেমন জোরালো কোনো আইন নাই। সেই জন্য যুগোপযুগি আইন প্রণয়ন করিতে হইবে বা বর্তমান আইনে উপযুক্ত ধারা সংযোজন করিতে হইবে। অন্যদিকে বর্তমান আইনের আলোকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অফিসার ইনচার্জ ইভটিজিং নির্মূলের লক্ষ্যে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারেন। যেমন-

(১) অপরাধ প্রবণ এলাকায়, রাস্তাঘাটে, স্কুল-কলেজের সামনে বা কাছকাছি স্থানে কার্যকরী পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করিতে হইবে এবং সেখানে অফিসার নিয়োগ করিয়া তদারকির ব্যবস্থা করিতে হইবে। 

(২) সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাইকিং করিয়া গণসচেতনতা সৃষ্টি করিতে হইবে। 

(৩) এলাকার স্থানীয় গন্যমান্য ও সমাজ সচেতন ব্যক্তি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সমন্বয়ে এক একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করিয়া ইভটিজারদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিতে হইবে। 

(৪) ঘটনার সময়ে ইভটিজারকে হাতে নাতে ধরিয়া বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ২৯০/৫০৯ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। প্রয়োজনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।

(৫) ইভটিজারদের পিতামাতা এবং অভিভাবকদের অবহিত করিতে হইবে। 

(৬) ইভটিজাররা যদি অবৈধভাবে যৌন কামনা চরিতার্থ করিবার উদ্দেশ্যে কোনো নারী বা মেয়ে শিশুর শরীরের যে কনো অঙ্গ স্পর্শ করে বা শ্লীলতাহানি করে তবে প্রচলিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় নিয়মত মামলা রুজু করিতে হইবে। 

(৭) ইভটিজিং এর কারণে যদি ভিকটিম বাসায় ফিরিয়া বা কয়েকদিন পর আত্মহত্যা করে, তবে ভিকটিমের পিতা বা অভিভাবকের নিকট হইতে এজাহার গ্রহণ করিয়া বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৩০৬ ধারায় এবং যদি শ্লীলতাহানী ঘটিয়া থাকে তবে নারী ও শিশু নির্যতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা রুজু করিয়া ত্বড়িৎ ব্যবস্থা নিতে হইবে। 

(৮) ইভটিজারদেরকে সামাজিকভাবে বয়কটের ব্যবস্থা নিতে হইবে।